Ajker Patrika

হিমাগারে জায়গা নেই, নির্ঘুম রাত কৃষকের

  • দিনাজপুরের ৫ উপজেলার মধ্যে একটি হিমাগার রয়েছে ফুলবাড়ীতে।
  • এরই মধ্যে আলু সংগ্রহের ধারণক্ষমতা পূরণ হয়েছে, জানিয়েছেন ব্যবস্থাপক।
  • হাজার হাজার বস্তা আলু নিয়ে অপেক্ষায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য নিয়ে আসা আলুর গাড়ির সারি।	 আজকের পত্রিকা
হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য নিয়ে আসা আলুর গাড়ির সারি। আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার খট্টামাধবপুর ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক মোমিনুল ইসলাম। এবার তিন বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছেন তিনি। একটি ট্রাক্টরে করে ১৮ বস্তা আলু নিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার রাঙামাটির ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজে এসেছেন। সিরিয়ালের কোনো স্লিপ পাননি। আদৌ আলু হিমাগারে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। জায়গা না পেলে হয়তো ফিরে যেতে হবে তাঁকে। এতে একদিকে সময়ের অপচয়, অন্যদিকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি গাড়িভাড়া। একে তো আলুর দাম কম, আবার সংরক্ষণের জায়গার অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি।

শুধু মোমিনুল নন, তাঁর মতো এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন একই এলাকার এরশাদ আলী, ডাঙ্গাপাড়া এলাকার জাকিরুল ইসলাম, কবির হোসেন, ভবানীপুর এলাকার মো. নূরুন্নবীসহ শতাধিক আলুচাষি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারের ভেতরে শতাধিক ট্রাক্টর, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানে ভর্তি আলু নিয়ে হিমাগারে ঢোকানোর অপেক্ষায় কৃষকেরা। হিমাগারের ভেতরের অংশের পাশাপাশি ঢোকার অপেক্ষায় বাইরেও অবস্থান করছে শতাধিক ট্রাক্টর ভর্তি আলু।

মোমিনুল ইসলাম বলেন, আলুর গাড়িতে ঘুমাতে হচ্ছে। ড্রাইভার-হেলপারও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এবার আলুর ফলন ভালো হলেও দাম কম। ফলে পরবর্তী সময়ে ভালো দাম পেতে সবাই হিমাগারে আলু রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

অনেক কৃষকের অভিযোগ, হিমাগারে আলু রাখতে কৃষকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দ্রুত সিরিয়াল পেতে সহায়তা করছে হিমাগারের কমিশন এজেন্টরা। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাহামুদুল হাসান।

দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট—এই পাঁচ উপজেলার মধ্যে একটিমাত্র হিমাগার রয়েছে ফুলবাড়ীতে। মৌসুমের শুরু থেকে হিমাগারের সামনে আলুবোঝাই গাড়ির দীর্ঘ সারি।

নবাবগঞ্জের আফতাবগঞ্জ এলাকার কৃষক বিজলী রানী জানান, আগামী বছরে আবাদের জন্য বীজের জন্য ৫৫ কেজির দুই বস্তা আলু নিয়ে এসেছেন হিমাগারে, সিরিয়াল পাননি তিনি। লোহাচড়া ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক নূরুন্নবী জানান, তাঁরা এলাকার কয়েকজন কৃষক মিলে তিন ট্রাক্টরে (৫৫ কেজির) ১২০ বস্তা আলু নিয়ে এসেছেন ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজে। গাড়িভাড়া দ্বিগুণ পড়েছে, তারপরও লাভের আশায় আলু রাখতে চান।

ফুলবাড়ী উপজেলার পাকাপান গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী জানান, ৫৫ কেজির ২০ বস্তা আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য মনস্থির করেছেন। এ জন্য হিমাগারের অবস্থা দেখতে এসেছেন। কিন্তু কৃষক আর ব্যবসায়ীদের আলুর গাড়িতে ঠাসাঠাসি অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টে বাড়ি ফিরছেন। আগামীতে আলুর বীজ কিনেই আবাদ করবেন—এমনটাই সিদ্ধান্ত তাঁর।

ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিয়ে হিমাগারে আলু ঢোকানো হচ্ছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়েই আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৬০ কেজির ১ লাখ ৬০ হাজার বস্তা। এরই মধ্যে আলু সংগ্রহ ধারণ ক্ষমতা পূরণ হয়েছে। এরপরও কৃষকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হিমাগারের প্রাথমিক শীতলীকরণ (অতিরিক্ত) জায়গায় কিছু বস্তা রাখার চেষ্টা করছি। এরপরেও হাজার হাজার বস্তা আলু নিয়ে অপেক্ষায় অনেকে। জায়গার অভাবে উপায় না পেয়ে কৃষকদের ফেরত দিতে হচ্ছে।’

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, গত বছর এই উপজেলায় আলুর আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর এবং এ বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। ৪৫ হাজার ৮১৫ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না আসায় আলুর আবাদ ও ফলন—দুই-ই ভালো হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান বলেন, আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের পাশাপাশি আলু সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকেছেন ব্যবসায়ীরাও। এতে প্রতিটি হিমাগারের ওপর চাপ বেড়েছে। আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে আলুর আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে, এতে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত