Ajker Patrika

গরু বিতরণে অনিয়ম, জনগণের তোপের মুখে স্থগিত

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
অভিযোগের ভিত্তিতে গরুগুলো যাচাই করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযোগের ভিত্তিতে গরুগুলো যাচাই করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

অনিয়মের অভিযোগে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জনগণের তোপের মুখে গরু বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্তৃক অয়োজিত ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীদের মধ্যে বকনা বাছুর ও খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, টেন্ডার অনুযায়ী ঠিকাদার কর্তৃক সরবরাহ করা প্রতিটি গরুর ওজন ১০০ কেজি করে হওয়ার কথা থাকলেও গরুর ওজন ৬৫ থেকে ৭০ কেজি হওয়ায় বিতরণ কার্যক্রম বাতিল করা হয়।

সরেজমিনে বিতরণ অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়, সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আর্থসামাজিক জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৭০ জন সুফলভোগীর মধ্যে এই বিতরণ কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়েছে।

হাসপাতাল চত্বরে শামিয়ানা টানিয়ে ও ব্যানার সাঁটিয়ে বিতরণ কার্যক্রম আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। সেখানে বিতরণ করা গরু অনুষ্ঠান চত্বরের পাশেই বেঁধে রাখা হয়। সুফলভোগীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অপেক্ষা করছেন। এ সময় সন্দেহ হলে টেন্ডার করা গরুর বিষয়ে স্থানীয় জনগণ, সুধীজন ও সাংবাদিকেরা গরুগুলোর ত্রুটি আছে কি না এবং তা টেন্ডার অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে কি না, এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। একপর্যায়ে উপস্থিত সবার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়, পরে তোপের মুখে পড়ে জনসম্মুখে গরুগুলো ওজন করা হয়। এ সময় গড়ে প্রতিটি গরুর ওজন ৬৫-৭০ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়, এতে জনরোষে পড়ে কর্তৃপক্ষ। টেন্ডার অনুযায়ী গরুর ওজন ও বয়স ঠিক না থাকায় স্থানীয় লোকজন উত্তপ্ত হলে তোপের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসাহাক আলী বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আর্থসামাজিক জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিতকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে বিতরণের জন্য ফুলবাড়ী উপজেলার জন্য ৭০টি গরু টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করে তা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে সরবরাহ করা হয়।

টেন্ডার অনুযায়ী, সুস্থ ও ন্যূনতম দেড় বছর বয়সী, সর্বনিম্ন ১০০ কেজি, শরীরের অবস্থার স্কোর ৩, ন্যূনতম (৫-পোর্ট স্কেল) স্টুটুরা ত্রিভুজ আকার, ত্বক ও উদরে ক্ষতের অনুপস্থিতি এমন গরু সরবরাহ করার কথা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি টেন্ডার অনুযায়ী ঠিকাদারদের কাছে গরু বুঝে না নিয়ে বিতরণ করছিলেন। জনরোষে পড়ে পরে তা যাচাই করেছেন।

গরু নিতে আসা সুফলভোগী এমানুয়েল টুডু, রিপন মুরমু, পুতুল মার্ডি ও স্বপ্না মুরমু বলেন, ‘আমরা গরু নিতে এসে শুনি, যেসব গরু আমাদের দেওয়ার কথা, সেগুলোর ওজন কম, গরুগুলো দেখতেও তেমন ভালো মনে হচ্ছে না। আমরা এমন গরু নিতে চাই না।’

ঠিকাদারের প্রতিনিধি সরবরাহকারী ওমর ফারুক বলেন, ‘কোম্পানি এসব গরু কিনেছে, সরবরাহের জন্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিতে এসেছি। আমাদের যেভাবে গরু আনতে বলেছে, আমরা সেভাবে এনেছি, এর বেশি কিছু জানি না।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই–বাছাই করে দেখেছি। টেন্ডার অনুযায়ী উপযুক্ত গরু না পাওয়ায় বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করেছি। তবে বরাদ্ধ করা ২৫ কেজি করে ফিড বিতরণ করা হয়েছে। সমস্যার কারণে গরুগুলো ফেরত দেওয়া হচ্ছে, পরে বিষয়টি দেখা হবে।’

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিমের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘টেন্ডার অনুযায়ী গরু সরবরাহ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই। ঠিকাদার যেসব গরু সরবরাহ করেছে, তা আমরা যাচাই করে দেখেছি, গরুগুলো উপযুক্ত না হওয়ায় তা বিরতণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ বিতরণ কার্যক্রমের দিনে কেন যাচাই করা হচ্ছে, আগে কেন করেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহিম বলেন, এক দিন আগে গরুগুলো আনলে সেগুলোর খাবারের ব্যবস্থা নেই, তাই আজ করা হচ্ছে।

ইউএনও ইসাহাক আলী বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই করে দেখা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেসব গরু সরবরাহ করেছে, সেগুলোর ওজন কম। তাই বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত