আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত মঞ্জু মিয়া, দিশেহারা স্ত্রী-সন্তান 

তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা (রংপুর) 
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ৫৪
Thumbnail image

রিকশাচালক মঞ্জু মিয়া গত ২০ জুলাই বেলা ১১টার দিকে খাবার খেতে খেতে শুনতে পান ছাত্রদের আন্দোলনে ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও বোমা বর্ষণ’ করা হচ্ছে। খাবার অর্ধেক রেখে তিনি বেরিয়ে পড়েন সড়কে। আন্দোলনে যেতে বারবার নিষেধ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম। এর ১০ মিনিট পর রহিমার কাছে খবর আসে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মঞ্জু মিয়া। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

গাজীপুরের বড়বাড়ী জয়বাংলা রোড এলাকায় গত ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন মঞ্জু মিয়া। ওই দিন তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন গ্রামের বাড়িতে এনে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। 

মঞ্জু মিয়ার বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের জুয়ানের চর গ্রামে। তিনি এই গ্রামের এনছার আলীর ছেলে। চার বছর বয়সী মেয়ে ও দুই বছর বয়সী ছেলেসন্তানের বাবা মঞ্জু মিয়া। তিনি সুখের আশায় সন্তানদের বাড়িতে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরে গিয়ে রিকশা চালাতেন। 

মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, যাওয়ার সময় অনেক নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু শোনেনি। সে শুধু বলেছে, ‘ওরা অনেক ছাত্র-জনতা মারছে। আমি যদি মারা যাই, তুমি কিছু মনে রেখো না। মনে করবে আমি শহীদ হয়েছি।’ তার ১০ মিনিট পর শুনি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ 

অশ্রুসিক্ত নয়নে রহিমা বেগম বলেন, ‘এখন তো আমার আর কিছুই থাকল না। কে দেখবে আমার অবুঝ দুই সন্তানকে? কার কাছে বিচার চাইব, আমরা তো গরিব মানুষ। বাবা ও শ্বশুর দুজনেই ভূমিহীন। শ্বশুর থাকেন অন্যের জমিতে আর বৃদ্ধ বাবা থাকেন সরকারি বাঁধের রাস্তায় বাড়ি করে।’ 

নিহত রিকশাচালক মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী ও সন্তানেরাবর্তমানে রহিমা বেগম বাবার বাড়িতেই থাকছেন। তাঁর স্বামীর অকালমৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। তিনি সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করেন। 

নিহতের বাবা এনছার আলী বলেন, সন্তানের মৃতদেহ দেখলে কোনো বাবাই ঠিক থাকতে পারে না। আজকে কান্না ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। আমি সবার কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই। 

রহিমা বেগমের বাবা আব্দুর রহমান তাম্বুলপুর ইউনিয়নের রহমতচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সেই স্বামী হারাল আমার মেয়েটা। সে দুই সন্তানকে নিয়ে আমার কাছে আছে। আমি গরিব মানুষ, তাদের কীভাবে ভরণপোষণ দেব? আমার নিজেরাই তো চলে না। আমি বর্তমানে অসহায়।’ 

ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে মঞ্জু মিয়া একজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেছি। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হবে।’ 

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গাজীপুরে নিহত মঞ্জু মিয়ার পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তাঁর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিহতের পরিবারের প্রয়োজনীয় তথ্যসহ কাগজপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত