উসকানি দিলে খবর আছে বলে বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ সোমবার (২৮ নভেম্বর) দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। 

এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘ফখরুল আপনার বাড়ি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরে এই সমাবেশ দেখে যান। জনতার ঢল কাকে বলে! নদী আর সাগরের তরঙ্গ নৃত্য কাকে বলে আপনি দেখে যান।’ 

নির্বাচন নিয়ে কাদের বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হবে। ভয় পাবেন না। শেখ হাসিনা রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যান্য দেশে যেভাবে ক্ষমতাসীন সরকার দায়িত্ব পালন করে, সেভাবে শেখ হাসিনা সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। আসল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কমিশন অধীনেই একটা নিরপেক্ষ ভোট ইনশা আল্লাহ হবেই।’

বিএনপিকে উদ্দেশে করে কাদের বলেন, ‘আপনারা উসকানি দেবেন না। উসকানি দিলে কিন্তু খবর আছে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা মাঠ ছেড়ে দেয় সতর্ক পাহারায় থাকে। কে কী করে! আপনারা আমাদের উপড়ে হামলা করবেন আর আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ললিপপ খাব! এটা কী হয়? খেলা হবে। প্রস্তুত হয়ে যান।’

বিএনপির সমাবেশ নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বলে আমরা তাদের সমাবেশ বাধা দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের সমাবেশ দিয়েছি ৮ ডিসেম্বর। নেত্রী বললেন দরকার নেই। তারা সমাবেশ করুক, আমরা ছাত্রলীগের সমাবেশ আমরা ৬ তারিখে এগিয়ে এনেছি। এটা আপনাদের আন্দোলনের ফসল নয়, এইটা শেখ হাসিনার উদারতা। উদার নৈতিকতার ফসল।’

মঞ্চে উপস্থিত শ্রমিক নেতা শাজাহান খানকে উদ্দেশে করে কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বলে সরকার পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করে। আমরা কখনো ঘোষণা করিনি। আমরা বলিওনি। শাজাহান ভাইও নিশ্চয় ঢাকা থেকে অফিশিয়ালি কিছু বলেননি। আমি তাঁকে (শাজাহান খানকে) অনুরোধ করব। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশে কোনো প্রকার ধর্মঘট করা যাবে না। এটা বিশেষভাবে আপনাকে অনুরোধ করছি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা তারা যেন সেদিন গাড়ি চালায়। তার আগের দিনও চালায়। আমরা কোনো বাধা দেব না। তারপরও দেখবেন। কাঁথা-বালিশ, হান্ডি-পাতিল, মশার কয়েল, পারলে মশারি নিয়ে হাজির হবে ঢাকা সিটিতে।’

দলীয় নেতাদের উদ্দেশে করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা সবাই দলকে এক রাখুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ত্যাগী নেতাদের দাম দেবেন। ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। বসন্তের কোকিলা দুঃসময়ে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও পাওয়া যাবে না। ত্যাগী কর্মীরাই মাঠে থাকবে। তাঁদের মূল্যায়ন করতে হবে।’

সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে ‘পুঁটি মাছ’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘বর্ষাকালে যখন প্রথম বৃষ্টি হয়, তখন পুকুরের মধ্যে বড় মাছ কিন্তু লাফায় না। পুঁটি মাছ শুধু লাফায়। বিএনপি হচ্ছে রাজনৈতিক মাঠে এখন পুঁটি মাছ। কয়েকটি মানুষ দেখে যেভাবে লাফ দিচ্ছে এটা পুঁটি মাছের লাফানি, বোয়াল মাছে তাদের খেয়ে ফেলতে পারে। সুতরাং এই পুঁটি মাছের লাফানি লাফিয়ে কোনো লাভ নাই।’ 

এ সময় একটি পত্রিকার সংবাদের বরাত দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বকাপে তারা (বিএনপি) জার্সি পড়ে গেছে, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। টেক ব্যাক বাংলাদেশ মানে কী, বাংলাদেশকে পেছনে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ আজকে যে বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে, আজকে যে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে, আজকে যে মানুষের সমৃদ্ধি এসেছে সেখান থেকে আবার পেছনে নিয়ে যাওয়া হবে।’

এর আগে দীর্ঘ এক দশক পরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন বেলা ১২টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, হুইপ ইকবালুর রহিম, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি, শিবলী সাদিক এমপি, অ্যাডভোকেট জাকিয়া তাবাসসুম জুঁই এমপি প্রমুখ। পরে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।