রংপুরে ১৪৪ টন চাল আত্মসাতে গুদাম কর্মকর্তা বরখাস্ত, তিনজনের নামে মামলা

রংপুর ও বদরগঞ্জ প্রতিনিধি
Thumbnail image

রংপুরের সদর উপজেলা সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ১৪৪ মেট্রিকটন চাল ও ৯ হাজার ৫৪৪টি খালি বস্তা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কানিজ ফাতেমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে গুদামটি।

এদিকে গত শুক্রবার কানিজ ফাতেমাসহ তিনজনের নামে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন রংপুর সদর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মণ। অন্য দুজন হলেন—গুদামের লেবার সর্দার রবিউল ইসলাম ও নিরাপত্তা প্রহরী চঞ্চল সিং। ওই গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নুরুন নবী বাবুকে।

রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল আগস্ট মাসের শেষের দিকে ওই গুদামের স্টকের গরমিল পান সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মণ। পরে তিনি বিষয়টি জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিককে অবগত করেন। সেখান থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর গঙ্গাচড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রইচ উদ্দিনকে আহ্বায়ক এবং পীরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমূল্য কুমার সরকারকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন— জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (কারিগরি) রিয়াজুল ইসলাম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. তোজাম্মেল হোসেন ও পীরগঞ্জ ভেন্ডাবাড়ী সরকারি খাদ্যগুদামের খাদ্য পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম।

কমিটির সদস্যরা গুদামের ১৪৪ মেট্রিকটন ৭৪৪ কেজি চাল, ৩০৭ কেজি গম ও ৫০ কেজির খালি বস্তা ৭ হাজার ৫০৯টি এবং ৩০ কেজির খালি ছোট বস্তা ২ হাজার ৩৫ টির হদিস পাননি। এ কারণে কমিটির সদস্যরা গত মঙ্গলবার গুদামটি সিলগালা করে দেন। তারা তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গত বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম গুদাম কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। 

খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা গেছে, ১৪৪ মেট্রিকটন ৭৪৪ কেজি চালের সরকারি বাজার মূল্য (৪৫ টাকা কেজি দরে) ৬৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা, ৩০৭ কেজি গমের মূল্য (৩৩ টাকা কেজি দরে) ১০ হাজার ১৩১ টাকা। এ ছাড়াও ৫০ কেজির খালি বস্তা ৭ হাজার ৫০৯ টির বাজার মূল্য (প্রতি বস্তা ৬৫ টাকা দরে) ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫ টাকা এবং ৩০ কেজির খালি ছোট বস্তা ২ হাজার ৩৫ টির বাজার মূল্য (প্রতি বস্তা ৪০ টাকা দরে) ৮১ হাজার ৪০০ টাকা। এতে দেখা যায়, গুদাম থেকে ৭০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬ টাকার মালামাল আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ওই চাল, গম ও খালি বস্তা মিল মালিকদের মাধ্যমে গুদাম থেকে আত্মসাৎ করেছেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা।

আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর দায় উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদর্শক ও জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কারণ ওই চাল ও খালি বস্তা সরকারি গুদাম থেকে একদিনে সরানো হয়নি। এত দিন তাঁরা কি গুদাম পরিদর্শনে যাননি?’

তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও পীরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমূল্য কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। নবাগত ডিসি স্যার আজ (গতকাল রোববার) আমাদের তাঁর অফিসে ডেকেছিলেন। স্যারকেও আমরা তদন্ত প্রতিবেদনের কাগজপত্র দিয়ে বলেছি, আরও যদি অন্য কাউকে দিয়ে তদন্ত করতে হয়, করেন। আমরা তদন্তে কোনো প্রকার অন্যায়ের আশ্রয় নিইনি।’

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও গঙ্গাচড়া উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রইচ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে মজুত ঘাটতি পেয়েছি। সেভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’ 

রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই গুদাম সিলগালা করার পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে গুদাম কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত কর্মকর্তাসহ তিনজনের নামে থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে যা যা করার করেছি। এখন বিষয়টির তদন্ত ঢাকা খাদ্য অধিদপ্তর থেকে করা হবে। তবে চাল আত্মসাতের সঙ্গে যে কর্মকর্তাই জড়িত থাকুক না কেন কেউই রেহাই পাবে না।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘ওই গুদামের চাল, গম ও খালি বস্তা আত্মসাতের বিষয়টি জেনেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত