বছরে একবার হামারে জিয়োত গোশত যায়: মাংস পেয়ে বৃদ্ধা কাফিতন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৪, ২২: ০৬
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৪, ১০: ০২

মোছা. কাফিতন বেগম। বয়স ৭০ বছর ছুঁই ছুঁই। বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা ইউনিয়নের চর গোবিন্দ। নদীভাঙনে তাঁর বাড়ি বিলীন হয়েছে বেশ কয়েকবার। স্বামী রোস্তম আলীর সঙ্গে যখন তাঁর বিয়ে হয়, তখন সংসারে তাঁর কোনো কিছুই কমতি ছিল না। কিন্তু নদীভাঙনে তাঁর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। 

গত বছর অন্যের জমিতে ঘর তুলেছিলেন কাফিতন বেগম। সেটিও ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দুই সন্তানের মা কাফিতন বেগম বর্তমানে বয়স্ক স্বামী রোস্তম আলীকে নিয়ে বসবাস করছেন ভরতখালী সরকারি ওয়াপদা বাঁধে। দুই ছেলে তাঁদের খোঁজ-খবর নেন না। 

ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের এসকেএস নতুন কুঁড়ি বিদ্যালয়ের মাঠে মাংস নিতে এসে কাফিতন বেগম বলেন, ‘বছরে বকরা ইদোত এক টোকলা করে গোশত দেয় শেখনা জিয়োত দেম। এ ছাড়া বছরে আর গোশত জিয়োত যায় না।’ 

কাফিতন বেগমের মতো সুফিয়া, মুন্নি, খাতিজা বেওয়া, হেলেনা, কাফিল, কামরুল, নজিরউদ্দিনসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ কোরবানির মাংস নিতে আসেন এসকেএস নতুন কুঁড়ি বিদ্যালয়ের মাঠে। তাঁদের চোখেমুখে কষ্টের ছাপ। চোখ যেন পানিতে টলটল করছে। এখানে যাঁরা মাংস নিতে এসেছেন, তাঁদের অনেকের একাধিকবার ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেই কারও স্বামী নেই, কারও স্ত্রী নেই, থাকলেও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। এসব মানুষের চোখে পানি টলটল করলেও গোশত হাতে পেয়ে মুখে হাসি ফোটে। 

সরেজমিনে এসকেএস নতুন কুঁড়ি বিদ্যাপীঠ স্কুল মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠ লোকে লোকারণ্য। প্রত্যেকের হাতে মাংস। স্লিপ নিয়ে এসে জমা দিচ্ছে আর মাংস নিয়ে যাচ্ছেন উপকারভোগীরা। স্কুলমাঠে পূর্ব দিকে দুই থেকে আড়াই গজ পরেই যমুনা নদী। নদীর ঢেউ জানান দিচ্ছে পানি বাড়া শুরু করেছে। যারা এই মাঠে মাংস নিতে এসেছেন, তাঁরা সবাই এই নদীপারের বাসিন্দা। 

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসকেএস নতুন কুঁড়ি বিদ্যাপীঠ স্কুল মাঠে প্রতি পরিবারের মধ্যে দুই কেজি করে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে এই মানবিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। এই কর্মসূচিতে সাঘাটা উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ২ হাজার ৫৭৫ পরিবার এবং ফুলছড়ি উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ৮৯০সহ মোট ৩ হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে দুই কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়। 

আয়োজকদের দাবি, নদীর ভাঙনকবলিত মানুষ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী অসহায়দের মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। সংস্থার কর্মীর মাধ্যমে খুঁজে বের করে তাঁদের নাম তালিকাভুক্তের মাধ্যমে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। 

মাংস নিতে আসা অনেকের দাবি, সারা বছর মাংস কিনে খেতে পারেন না। বছরে শুধু কোরবানি ঈদেই তাঁদের হাঁড়িতে মাংস রান্না হয়। 

ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার পরিবারে মধ্যে দুই কেজি করে গরুর মাংস বিতরণ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় এসকেএস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে দুই কেজি করে কোরবানি মাংস দিয়েছি। যাতে সবাই কোরবানির আনন্দ ভোগ করতে পারেন।’ 

এসকেএস ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক খন্দকার জাহিদ সরওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছি। অসহায় প্রান্তিক, নদীভাঙনকবলিত, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী যেসব মানুষের মাংস কেনার সামর্থ্য নেই, সেসব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এই কর্মসূচি চলমান থাকবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত