Ajker Patrika

উন্নয়ন অভিযাত্রায় সিলেট হয়তো সমান তালে এগোতে পারছে না: এমপি নাদেল 

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
উন্নয়ন অভিযাত্রায় সিলেট হয়তো সমান তালে এগোতে পারছে না: এমপি নাদেল 

সিলেটের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে তা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু এ জন্য সিলেটের অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। 

আজ বৃহস্পতিবার সিলেটে অর্থনীতি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তারা এমন বক্তব্য তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও মৌলভীবাজার–২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কিন্তু এই উন্নয়ন অভিযাত্রায় সিলেট হয়তো সমান তালে এগোতে পারছে না। সিলেটের প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা, চুনাপাথর, সিলিকা বালি, পাথরের পাশাপাশি হাওরে উৎপাদিত মাছ ও ধান, চা শিল্প এবং প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। সিলেটের এই আকাশচুম্বী সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। 

সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমাদের অবস্থান হলো শক্তিশালী দুই প্লেয়ার চীন ও ভারতের মাঝখানে। ফলে এশিয়ার অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান মার্কেটে সহজেই আমরা ভাগ বসাতে পারি। সে ক্ষেত্রে সিলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ভূ-কৌশলগত অবস্থানে বিরাজ করছে। ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অঞ্চলটি তার সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে। ঐতিহাসিক সিল্ক রুট পুনরায় কার্যকর করার যে কথা উচ্চারিত হচ্ছে, তা থেকেও আমাদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ 

শাবিপ্রবি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। অর্থনীতি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন শাবিপ্রবি এর সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন-সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ। 

হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি বলেন, সিলেটের মোট জনসংখ্যার ৮৩ ভাগ গ্রামে বাস করেন। সিলেটকে নিয়ে ভাবতে হলে এই গ্রামের জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ভাবতে হবে। এদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করেই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। প্রবাসী উদ্যোক্তা গ্রুপগুলোকে সংশ্লিষ্ট করে জনকল্যাণমূলক যৌথ প্রকল্প উন্নয়নে সুফল মিলবে বলেও তিনি মনে করেন। 

কল সেন্টার প্রতিষ্ঠার ধারণাটি কয়েক দশক আগে কিছু দেশে ব্যর্থ হলেও নতুনভাবে তা সুযোগ সৃষ্টি করছে বলে তিনি জানান। আগামীর পরিবর্তনগুলো শুধু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে নয়; বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করার বিষয়টি সর্বদা খেয়াল রাখতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ সেবা খাতে দক্ষতা অর্জনে তরুণদের আগ্রহী করা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে পরামর্শ দেন। সরকারি বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সামগ্রিক পরিবর্তন আনা অসম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড সাদিকুন্নবী চৌধুরী বলেন, সিলেটে পর্যটনের সম্ভাবনা আকাশচুম্বী। পর্যটন হলো এমন এক খাত, যাতে কম বিনিয়োগে, প্রকৃতি ও পরিবেশকে অক্ষত রেখে দ্রুততম সময়ে ফল পাওয়া সম্ভব। প্রতি বছর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ ছাড়াই লক্ষাধিক মানুষ এ অঞ্চলে ভ্রমণ করতে আসছে। অথচ তাদের দেখভালের জন্য সত্যিকার অর্থে কোনো অভিভাবক নেই। প্রশাসনের যারা এ বিষয়গুলোর দেখভাল করেন, তারা নিজেদের দাপ্তরিক কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ফলে পর্যটন উন্নয়নে আলাদাভাবে পরিকল্পনা করা, লেগে থেকে প্রকল্প বের করে আনা বা সেগুলোর বাস্তবায়ন করার সুযোগ সীমিত।

তিনি বলেন, ‘আমার প্রস্তাব হলো, বৃহত্তর সিলেটের পর্যটন উন্নয়নে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হতে পারে ‘সিলেট পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হোক। বছরব্যাপী বিদ্যমান ও সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়ন, প্রমোশন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটি কাজ করবে।’

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম, অধ্যক্ষ ভাস্কর রায়, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত, সুনামগঞ্জ সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ, সাংবাদিক মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, পর্যটন ব্যবসায়ী হুমায়ূন কবির লিটন, সাস্ট বিজনেস ক্লাবের সভাপতি রাকিব আহমেদ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত