Ajker Patrika

পাঁচ মাসের মাথায় পাথরের শুল্ক বাড়ল ২ ডলার, সিলেটে আমদানি বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ০৩
পাঁচ মাসের মাথায় পাথরের শুল্ক বাড়ল ২ ডলার, সিলেটে আমদানি বন্ধ

পাঁচ মাসের মাথায় চুনাপাথর ও বোল্ডার পাথর আমদানিতে শুল্ক আবারও বাড়ানো হয়েছে। ২ ডলার যোগ করে প্রতি টন পাথরে মোট ১৩.৭৫ ডলার শুল্ক নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে দুই দিন ধরে সিলেট বিভাগের ১৩টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।

এর আগে গত বছরের আগস্টে প্রতি টন চুনাপাথর ও বোল্ডারের ক্রয়মূল্য পর্যালোচনা করে ১ ডলার বাড়িয়ে ১১.৭৫ ডলার শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। এই বর্ধিত শুল্ক নিয়েই আমদানিকারকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। এর মধ্যেই ৪ জানুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি করা বোল্ডার স্টোন, স্টোন চিপস ও লাইমস্টোন পাথরের ওপর নতুন করে বাড়তি ২ ডলার শুল্ক আরোপ করা হয়, যা ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকরের কথা জানানো হয়। 

নতুন শুল্ক কার্যকরের দিন গত সোমবার দুপুরে তামাবিল স্থলবন্দরে স্থানীয় আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সভা হয়। এতে ব্যবসায়ীরা বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেন। 

এ বিষয়ে তামাবিল চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি এম লিয়াকত আলী বলেন, এনবিআর ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর আমদানির ওপর অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু প্রতি টনে অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়। এই বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই তামাবিলসহ সিলেটের সব কটি বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। 

তামাবিল স্থলবন্দর শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘সোমবার থেকে আমাদের স্থলবন্দর বন্ধ রয়েছে। কাজেই আমরা কাজ পাচ্ছি না। প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছি। এতে অনেকেই অনাহারে আছি। অচিরেই যাতে স্থলবন্দর খোলা হয়, এটাই আমাদের চাওয়া।’ 

সিলেট বিভাগীয় স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনসমূহের ব্যবসা পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভারতীয় রপ্তানিকারকদের আমাদের দেশে পরিস্থিতি বুঝিয়েছি। দেশের এই ডলার ক্রাইসিস সময়ে আমরা কম মূল্যে আমদানি করছি। কিন্তু আমার দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা কাস্টমস অথরিটি বলে না-না; এটার দাম আরো বেশি। কেন? বেশি মূল্যে আমরা আমদানি করলে তারা বেশি ট্যাক্স কালেকশন করতে পারবে। আমাদের কাছ থেকে বেশি ট্যাক্স কালেকশন করলে একদিকে রাষ্ট্রের লাভ হলেও রির্জাভের ওপর চাপ পড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‌‘এখনো কাস্টমস আমাদের কাছ থেকে ক্রয়মূল্যের বেশি ১১.৭৫ ডলার ট্যাক্স নিচ্ছে। আমাদের ক্রয়মূল্য ৮-১০ ডলার। কাস্টমসের দাবি, হিলি-বেনাপোলের দাম যত, আমরাও তত দিতাম। হিলি-বেনাপোল আর তামাবিলের কস্টিং কী সমান? এটা জেগে ঘুমানোর মতো অবস্থা।’

তবে বাড়তি শুল্কের আংশিক প্রত্যাহার করা সম্ভব হলেও পুরো প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলে জানান কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, সিলেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আইনগত উপায়ে ১৩ ডলারের নিচে যাওয়ার কোনো উপায় নেই আমার। এটা আমি আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সবাইকে বুঝিয়েছি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, সিলেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‌২০০০ সালের শুল্ক বিধিমালা অনুসারে পাথরের শুল্কমূল্য ধরা হয়। শুধু সিলেটের ব্যবসায়ীরাই মূল্য নির্ধারণে ছাড় পান। সিলেট ছাড়া অন্য জায়গায় পাথরের মূল্য ১৩, ১৪, ১৫ ডলার নির্ধারিত আছে।

সিলেটে ব্যতিক্রমের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এনামুল হক বলেন, ব্যবসায়ীরা আগের কমিশনারের সঙ্গে দেনদরবার করে আগেরবারই শুল্কমূল্য কমিয়ে নিয়েছেন। তখন শুল্কমূল্য ১১.৫ ডলার থেকে ১১.৭ ডলারের মধ্যে নির্ধারিত ছিল। সর্বশেষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মিটিংয়ে পাথরের মূল্য ১৪ ডলার আর ক্রাশ পাথরে মূল্য ১৫ ডলার সিদ্ধান্ত হয়।

‘তখন আমি আর্গুমেন্ট করেছিলাম যে স্যার, সিলেটে পাথরের কেরি কস্ট কম। সীমান্তের খুব নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে পাথর আসে। তখন স্যার বলছেন, তুমি তো মিনিমাম ভ্যালুর নিচে যেতে পারবা না। অন্যান্য স্টেশনে যত রেকর্ড হচ্ছে, সেগুলো তুমি নাও। তাতে করে ১৩ ডলারের নিচে আমার যাওয়ার কোনো স্কোপ নাই।’

প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের আমদানি বন্ধের ব্যাপারে কাস্টমস কমিশনার বলেন, ‘তারা বন্ধ করলে আমি আর কী করতে পারি! এটা তো আমার ক্ষমতার বাইরে। ১৩ ডলারের নিচে কেউ যেতে পারবে না। আমি তো আর চাইলে আইনের বাইরে যেতে পারব না।’

সিলেট বিভাগে ১৩টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর, চুনাপাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের তামাবিল, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বাগলি, বড়ছড়া ও চারাগাঁও; ছাতকের ইছামতী ও চেলা স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর ও পাথর আমদানি হয়ে থাকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত