Ajker Patrika

করাতকলে উজাড় বনের গাছ

  • মোট আয়তনের ৩৭ শতাংশ ভূমি বৃক্ষ আচ্ছাদিত। ৫৩ হাজার ১০৯ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে
  • মোট করাতকল আছে ২৫৬টি। এর মধ্যে ১৪২টির লাইসেন্স রয়েছে
  • চা-বাগানের ছায়া বৃক্ষগুলো অবাধে নিধন করা হচ্ছে
মাহিদুল ইসলাম,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) 
মৌলভীবাজারে চেরাই করার জন্য করাতকল প্রাঙ্গণে রাখা আছে গাছের গুঁড়ি। সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারে চেরাই করার জন্য করাতকল প্রাঙ্গণে রাখা আছে গাছের গুঁড়ি। সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির জেলা মৌলভীবাজারে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে বনজসম্পদ। এর পেছনে রয়েছে বৈধ ও অবৈধভাবে পরিচালিত করাতকল। এসব কলে সাধারণ গাছের পাশাপাশি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চোরাই গাছও চেরাই করা হচ্ছে। আর এতে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।

স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ সংরক্ষিত বনের মূল্যবান গাছ প্রতিদিন চুরি করা হচ্ছে। চুরি হওয়া গাছগুলো করাতকলে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। যদি বন বিভাগ যত্রতত্র করাতকলের অনুমোদন না দিত, তাহলে বনগুলো বেঁচে থাকত।

সিলেট বিভাগীয় বন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের মোট আয়তনের ৩৭ শতাংশ ভূমি বৃক্ষ আচ্ছাদিত। এখানে ৫৩ হাজার ১০৯ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। জেলায় মোট করাতকল আছে ২৫৬টি। এর মধ্যে ১৪২টির লাইসেন্স রয়েছে। বাকিগুলো অবৈধ বা এ নিয়ে মামলা চলছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া, বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সংরক্ষিত বন ও রাস্তার পাশে অনেক করাতকল রয়েছে। এসব কলে বৈধ ও অবৈধ গাছ এনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

বেশির ভাগ কল কৃষিজমি ভরাট করে স্থাপন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, রাতেও অনেক করাতকলে গাছ চেরানো হয়, যাতে চোরাই গাছ কেউ দেখতে না পায়। এ ছাড়া চা-বাগানের ছায়া বৃক্ষগুলো অবাধে নিধন করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী জানান, বৈধ গাছের সঙ্গে কিছু চোরাই গাছও বিক্রি করা হয়। একসময় গাছ চুরি করলেও চেরানোয় সমস্যা হতো। এখন কোনো সমস্যা হয় না। অবৈধ করাতকলগুলো চালু রাখার জন্য মালিকেরা বন বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন করাতকলের মালিক জানান, তাঁরা আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে করাতকল চালাচ্ছেন। আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যাঁদের কাগজ নেই তাঁরা অবৈধভাবে চালাচ্ছেন।

এ নিয়ে কথা হলে পরিবেশকর্মী নূরুল মোহাইমিন মিল্টন বলেন, ‘জেলায় অসংখ্য অবৈধ করাতকল রয়েছে। এসব কল প্রতি মাসে ও বিভিন্ন দিনে বন বিভাগকে একটা অনুদান দেয়। যার জন্য বন বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। প্রতিদিন গাছ চুরি হচ্ছে। এসব গাছ কোথায় যায়? চা-বাগান থেকেও গাছ চুরি হচ্ছে। পরিবেশকে বাঁচাতে হলো প্রথমে অবৈধ করাতকলগুলো বন্ধ করতে হবে।’

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, মৌলভীবাজারে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু লাইসেন্সবিহীন করাতকল বন্ধ করা হয়েছে। যাঁদের কাগজপত্র আছে তাঁদের প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও সিলগালা করা হয়। অনেক করাতকল উচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছে। কেউ চোরাই কাঠ বিক্রি বা চেরাই করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ অভিযান প্রতি মাসে করে থাকি। বেশ কিছু করাতকলের রিট ও স্বত্ব মামলা রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও মামলা করা হয়েছে। বিগত আট বছরে ৮৭টি অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

চীনা পণ্যে শুল্ক ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণে কমিয়ে সুখে বসবাসের ঘোষণা ট্রাম্পের

২৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪১৪ কোটি টাকার অনিয়ম

কাশ্মীরে হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ না হলে মানবজাতির সামনে ‘চরম অন্ধকার’, ভ্যান্সের হুঁশিয়ারি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত