মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ৩৫
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০: ২৩

মৌলভীবাজারে টানা তিন দিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা মনু নদের পানি শহরের সেন্ট্রাল রোডের বিভিন্ন দোকানের নিচ দিয়ে শহরে প্রবেশ করেছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়েছে বাসাবাড়ি ও দোকানের মালামাল নিরাপদে রাখার জন্য। 

শহরের সেন্ট্রাল রোডটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় গতকাল বুধবার রাতে গাড়ি চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা শহরের বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন। 

এ ছাড়া মনু নদীর কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার অংশে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া অব্যাহত নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্কে আছেন নদীপাড়ের মানুষ।

জেলার সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার অবনতি হয়েছে সব উপজেলায়। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই ও মনু নদের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার বেশ কিছু রাস্তার ওপর পানি এসে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। জেলার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। তলিয়ে গেছে পাকা আউশ ধান, আমন ধানের চারা ও মাছের খামার। 

পানি বৃদ্ধি পেয়েছে মৌলভীবাজারের সব নদীর পানি। ছবি: আজকের পত্রিকামুষলধারে বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে গতকাল ধলাই নদ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কমলগঞ্জ উপজেলা প্লাবিত হয়। রাতে কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙে তলিয়ে যায় বিভিন্ন সড়ক। পানিবন্দী হয়ে অনেকই আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

গতকাল বুধবার রাতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা ও সদর উপজেলায় বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ। বেশির ভাগ পানিবন্দী মানুষ কোনো ত্রাণ বা শুকনো খাবার পাননি। অনেকেই আধপেটা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যায় তলিয়ে গেছে আউশ ও আমনের ফসল। বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  

শহরের সেন্ট্রাল রোডের ব্যবসায়ী সুমন আহমদ বলেন, ‘আমাদের অনেকের দোকানের নিচ দিয়ে শহরে পানি ঢুকছে। আমরা আতঙ্কে সব মালামাল সরিয়ে নিয়েছি। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে পুরো শহর তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

মৌলভীবাজারের রেলওয়ে সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। ছবি: আজকের পত্রিকাকুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের জুনেদ আহমদ বলেন  বলেন, সারা দিন ও রাতে আমরা মনু নদীর বিভিন্ন বাঁধ মেরামত করছি। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামতের কাজ চলছে। এ ছাড়া জেলা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের কাজ চলছে। 

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করছি। মাইকিং করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সব উপজেলায় নগদ অর্থ ও ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত