প্রথম কিস্তির ঋণের টাকার ব্যবহার পর্যালোচনা এবং দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল।

আগামী মঙ্গলবার প্রতিনিধিদলটি মোট ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ব্যবহার এবং দ্বিতীয় কিস্তির ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র সোমবার (২৪ এপ্রিল) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

সূত্র জানায়, ঢাকায় আসা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। দলটিতে তিন থেকে চার সদস্য থাকতে পারেন। আগামীকাল ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে ২ মে মঙ্গলবার পর্যন্ত আইএমএফ দল বাংলাদেশ সফর করবে। এ সময় তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, সফরকালে সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফ টিমের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে। 

গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ কর্তৃক অনুমোদিত ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের মধ্যে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারের প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের এই ঋণের আরো ছয় কিস্তি বাকি রয়েছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আইএমএফ সাধারণত প্রতিটি ধাপ বিতরণের আগে সম্মতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে। এ কারণে আইএমএফের একটি দল আসছে দ্বিতীয় ধাপ বিতরণের আগে ঋণের শর্ত পূরণের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করতে। 

সাধারণত প্রতিটি বাজেট ঘোষণার আগে, একটি আইএমএফ মিশন বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসে। যেহেতু ঋণ কার্যক্রম চলছে, বাজেট সহায়তার পাশাপাশি ঋণের শর্ত পূরণের বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট অনেকটা কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাতে আইএমএফ দ্রুত ছাড় করে সে জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হবে। আইএমএফ ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে আশা করছে সরকার। কেননা, আইএমএফের কথামতো আর্থিক খাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংস্কার করা হয়েছে। 

আইএমএফ এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) অধীনে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার এবং রেজিলেন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি ফর বাংলাদেশ’র অধীনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। 

গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফ থেকে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের প্রথম কিস্তি পায়। 

এর আগে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদে ওঠে। গত সোমবার স্থানীয় সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। ওই দিনই জানানো হয়, ফেব্রুয়ারিতেই ঋণের প্রথম কিস্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রস্তাব অনুমোদনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণের বিষয়ে আইএমএফ এ তথ্য জানায়। 

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ। তার ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ঋণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। 

বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছায় আইএমএফ। গত নভেম্বরে ঢাকায় ঋণচুক্তির শর্তসহ নানা বিষয়ে চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ।