Ajker Patrika

ধ্বংসের পথে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ৪০
ধ্বংসের পথে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড লুটপাট ও অনিয়মের কারণে ধুঁকছে। ব্যবসায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দূরের কথা, উল্টো নেতিবাচক হয়েছে কয়েক গুণ। দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সম্পদের চেয়েও বেশি। অর্থসংকট প্রকট। এতে করে গ্রাহকের দাবি নিষ্পত্তি করতে পারছে না কোম্পানিটি।

পদ্মা লাইফের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভবিষ্যতে কোম্পানির ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। ২০২৩ সালে শেষ হওয়া বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সময়ে অনিয়মের মাধ্যমে অনেক টাকা লোপাট হয়েছে। গোপন করা হয়েছে প্রকৃত দেনার তথ্য। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব সামনে আসবে। এতে দায়ের পরিমাণ আরও বাড়বে।

তথ্যমতে, ধারাবাহিকভাবে কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় কমেছে। সর্বশেষ বছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২২ সালে ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও তার আগের দুই বছরে নেতিবাচকই ছিল।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিমা কোম্পানিটির ২০২৩ সালের লাইফ ইনস্যুরেন্স ফান্ড ঋণাত্মক ২৫৪ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়েছে ১৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বিপরীতে বছরটিতে গ্রাহকের বিমা দাবি দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেই দাবি পরিশোধ করেনি। অপরিশোধিত বিমা দাবির বিপরীতে কোনো সুদজনিত সঞ্চিতিও (প্রভিশন) গঠন করেনি।

কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে দেখানো হয়েছে, ৪ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার টাকার সাদাকা ফান্ড (পদ্মা ওয়েলফেয়ার ফান্ড) রয়েছে। ব্যাংকে রয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। তবে প্রয়োজনীয় নথির অভাবে সেসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি নিরীক্ষক।  নিরীক্ষক আরও জানিয়েছেন, কোম্পানির ভাড়া বাবদ ৩ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা আয় এবং ভাড়ার আরও পাওনা ৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা কথা উল্লেখ থাকলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক হিসাব মান-১২ (আইএএস) অনুযায়ী কোম্পানি ডেফার্ড ট্যাক্স হিসাব করেনি। 
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাইন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যবসায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দীর্ঘ মেয়াদে হলে সেই কোম্পানিকে কার্যকর বলার সুযোগ নেই।

ড. মাইন উদ্দিন বলেন, কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হওয়ার মানে হলো সক্ষমতা নেই। দুরবস্থার কথা স্বীকার করে পদ্মা লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই নিরীক্ষাটা আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় করা হয়েছে। আগের সময়ে হিসাবগুলো ভুয়া ছিল। অনেক আগে থেকেই নেতিবাচক ছিল। তারা সাধারণের পাওনার তথ্য লুকিয়ে যে সম্পদ রয়েছে, সেগুলোর মূল্যায়ন করে বেশি করে ভুয়া লাইফ ফান্ড দেখিয়েছে। গত বছর আমরা উদ্যোগ নিয়ে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করি।’

কারা এসব অনিয়ম করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, চেয়ারম্যান ছিলেন, তাঁরাই করেছেন।

অভিন্ন কথা বলেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আগে যাঁরা পরিচালনা করেছেন, তাঁরা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করেননি। ২০২৩ সালে আমরা আইটিতে যে তথ্য ছিল, তার ভিত্তিতে সব দায়ের তথ্য প্রকাশ করি। এতে লাইফ ফান্ড নেতিবাচক হয়েছে।’

কোম্পানির বিমা দাবি নিষ্পত্তি না করার বিষয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, সার্বিকভাবে বিমা খাতে গ্রাহকের অনাস্থা তৈরি হওয়ায় প্রিমিয়াম আয় কমে গেছে। এখন কোম্পানিতে অর্থ ঢোকার পরিমাণের চেয়ে বের হওয়ার পরিমাণ বেশি। অন্যদিকে ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ থেকে আয় কমে যাওয়ায় মাঝখানে বিমা কোম্পানিগুলো ধাক্কা খায়। এসব কারণে দেশের বেশির ভাগ বিমা কোম্পানিই প্রতিবছর সব বিমা দাবি নিষ্পত্তি করতে পারছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত