করোনায় কাজ হারানো ৭% শ্রমিক এখনো বেকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ৩৭
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ২০: ৩৮

করোনাকালে কঠোর বিধিনিষেধের সময় ঢাকা শহরের পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং ক্ষুদ্র দোকান শ্রমিকদের ৮৭ শতাংশই কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিলেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর অনেকে কাজ পেলেও ৭ শতাংশ এখনো বেকার। আর যারা কাজ পেয়েছেন তাঁদের আয় কমেছে ৮ শতাংশ। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস্) ‘ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকান-পাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের ওপর সাম্প্রতিক লকডাউনের প্রভাব নিরূপণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিলস্‌ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বিভাগের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম। 

২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার ৪০০ শ্রমিকের ওপর গবেষণা চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেখেছে, উল্লেখিত তিন খাতের শ্রমিকের আয় কমেছিল ৮১ শতাংশ। করোনার বিধিনিষেধ আরোপের আগে এই তিন খাতের শ্রমিকদের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৩ হাজার ৫৭৮ টাকা। বিধিনিষেধের সময় আয় নেমে আসে ২ হাজার ৫২৪ টাকা। তবে পরবর্তীতে আয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫২৯ টাকা। অর্থাৎ বিধিনিষেধ পরবর্তী সময়েও ৮ শতাংশ আয়ের ঘাটতি থাকছে। 

করোনা বিধিনিষেধের সময় চাকরি হারিয়েছেন ৮৭ শতাংশ শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পরিবহন খাতের শ্রমিক। এ খাতের ৯৫ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এ ছাড়া দোকান শ্রমিকদের ৮৩ শতাংশ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের ৮২ শতাংশ কর্মসংস্থান হারান। লকডাউন পরবর্তী সময়ে ৯৩ শতাংশ শ্রমিক চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন, অর্থাৎ ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার। অবশ্য লকডাউন সময়ে এসব খাতে খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান বেড়েছিল ২১৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের সংবাদ সম্মেলেনপ্রতিষ্ঠানটির গবেষণা প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, লকডাউনে তিনটি খাতে কার্যদিবস কমেছিল ৭৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৯২ শতাংশ কার্যদিবস কমেছে পরিবহন খাতে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে অবশ্য কাজের চাপ বেড়েছে, কার্যদিবস এবং কর্মঘণ্টা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। 

নিয়মিত চাকরি হারানো অথবা উপার্জন কমে যাওয়ার কারণে শ্রমিকদের পরিবারে আয় এবং ব্যয়ের ঘাটতি ছিল বিস্তর। আয় কমে দাঁড়িয়েছিল ব্যয়ের প্রায় ২৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ ঘাটতি, ৯৭ শতাংশ পরিবহন খাতের এবং সর্বনিম্ন ৪৬ শতাংশ ছিল খুচরা বিক্রেতা খাতের শ্রমিক পরিবারের। এই ঘাটতি মেটাতে ২০ শতাংশ শ্রমিক সম্পত্তি বিক্রয়, খাবার কমিয়ে দেওয়া এবং সন্তানদের কাজে পাঠানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার ধারদেনা করে এবং সঞ্চয় কমিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। লকডাউন পরবর্তী সময়ে সঞ্চয় কমেছে ৬৪ শতাংশ এবং সঞ্চয়কারীর সংখ্যা কমেছে ৫০ শতাংশ। 

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার নানা খাতে প্রচুর প্রণোদনা দিলেও লকডাউনের সময় এই তিন খাতের শ্রমিকদের ১ শতাংশেরও নিচে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে কম মূল্যে খাদ্য সহায়তা এবং নগদ টাকা। 

গবেষণা অনুযায়ী, ৩৬ শতাংশ শ্রমিক কোভিডের টিকা নিয়েছেন এবং ৬৪ শতাংশ শ্রমিক এখনো টিকার আওতার বাইরে রয়েছেন। 

এ সময় বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেইস প্রণয়ন, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং শ্রমিকদের কোভিড টিকা নিশ্চিত করাসহ ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন বিলস্ ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন, পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ এবং নাজমা ইয়াসমীন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত