ইইউতে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা এখনো ঝুঁকির মুখে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ০৬
Thumbnail image

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার বা জিএসপি সুবিধা এখনো ঝুঁকির মুখেই রয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি ইইউ প্রতিনিধিদল সফর করে যাওয়ার পর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। জিএসপি সুবিধার সঙ্গে শর্ত হিসেবে যুক্ত মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিয়ে যেসব উদ্বেগ আগে থেকে ছিল, তার প্রায় সবই হালনাগাদ প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয়েছে।

দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পণ্য রপ্তানিতে সহায়তা করতে এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) নীতির আওতায় জিএসপি সুবিধা দেয় ইইউ। ইবিএর সুবিধাভোগী বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার নিয়ে ‘জয়েন্ট স্টাফ ওয়ার্কিং ডকুমেন্ট’ নামে হালনাগাদ প্রতিবেদন গত ২১ নভেম্বর ব্রাসেলস থেকে প্রকাশিত হয়। এর আগে ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর পাঁচ দিনের সফর করে যায় ইইউর প্রতিনিধিদল। 

মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ, জলবায়ু ও সুশাসনের ওপর আন্তর্জাতিক মানকে সম্মান জানানোর শর্ত সাপেক্ষে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুবিধার আওতায় ইইউভুক্ত দেশগুলোতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া প্রায় ৭ হাজার ২০০ পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়। এই সুবিধার ফলে বাংলাদেশি পণ্যের বড় রপ্তানি গন্তব্য এখন ইইউ। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৪৫ শতাংশ গেছে ইইউভুক্ত ২৭ দেশে।

জিএসপি সুবিধা পাওয়া তিন দেশ—বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে ইইউ। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, দেশগুলোতে মৌলিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের মানদণ্ডের প্রতি সম্মান দেখানোর ঘাটতির বিষয়টি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও সুশীল সমাজের প্রতিবেদনে প্রমাণিত। 

ইইউ বলেছে, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে ব্যর্থ হলে সুবিধাভোগী দেশগুলো তাদের জিএসপি সুবিধা হারাতে পারে। তবে পরিস্থিতি উন্নয়নের বিষয়ে বাংলাদেশের ভালো সম্পৃক্ততার স্বীকৃতিও দিয়েছে ইইউ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি দেশের বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করা যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শ্রম অধিকার বিষয়ে সৃষ্টিশীল দ্বিপক্ষীয় মতবিনিময়ের জন্য সম্পৃক্ততায় বেশ জোর দেওয়া হয়। ২০২০-২২ মেয়াদে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টেকসই সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। 

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত মানবাধিকার নীতি গুরুতর ও পদ্ধতিগত লঙ্ঘনের দায়ে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে কম্বোডিয়ার আংশিক জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনে। তখন কম্বোডিয়ার রপ্তানি কমে যায়। বাংলাদেশের সামনেও এ ধরনের ঝুঁকি আছে।

ইইউর মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ে বেশ কয়েকটি উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি নির্বাচন এবং অবাধে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম চালানোর অধিকারের আইনি বাধা; ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য ন্যূনতম সদস্যের প্রয়োজনীয়তা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়নের অনুপস্থিতি। 

এসব বাধা দূর করার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি কারখানা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ঘাটতি সমাধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সহিংসতা, হয়রানি, বরখাস্ত, ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত, মামলা ও কর্মীদের গ্রেপ্তারের মতো ইউনিয়নবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বলা হয়। 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শ্রম পরিদর্শনে সক্ষমতা ও সামর্থ্যের ঘাটতি দূর করার তাগিদ দেওয়া হয় এবং শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (ন্যাপ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) রূপকল্পে অন্তর্ভুক্ত শ্রম অধিকারসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ইইউ। 

বাংলাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইইউর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রম অধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে ২০২১-২৬ সাল মেয়াদি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বর্তমানে সে অনুযায়ী কাজ করছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ইপিজেড শ্রমবিধি এবং শ্রম আইন ও ইপিজেড শ্রম আইনের উপবিধি সংশোধিত হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডে পৌঁছাতে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে।

সরকার ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ শ্রম পরিদর্শক পদে অতিরিক্ত ৯৪২ জনবল নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে শ্রম পরিদর্শকের পদসংখ্যা ২০০। তাঁদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই আবার ফাঁকা রয়েছে।

ইইউর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব সামান্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ও নাগরিক সমাজের পরিসরে বাধা এবং মৃত্যুদণ্ড অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ইইউ মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত