Ajker Patrika

রেকর্ড রেমিট্যান্স, তবু প্রবৃদ্ধি নেই রিজার্ভে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৩২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের অর্থনীতির বুক চিরে বইছে দ্বৈত স্রোত—একদিকে রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড, রপ্তানির শক্তিশালী অবস্থান ও বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ; অন্যদিকে আমদানি ব্যয়ের চাপ ও বৈদেশিক দেনার ভারে রিজার্ভের স্থবিরতা। স্বস্তির হাওয়া লেগেও যেন চলার গতি নেই, প্রবাহ থাকলেও প্রবৃদ্ধির দেখা মেলে না। দীর্ঘমেয়াদি সংকটের বৃত্তে রিজার্ভ ঘুরপাক খাচ্ছে, যেন এক রহস্যময় স্থিতি—চলমান, কিন্তু অপরিবর্তিত।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গড় রিজার্ভ ছিল ২৯.৭৩ বিলিয়ন ডলার, বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ২৩.৩৭ বিলিয়ন। সময়ের সঙ্গে সেই রিজার্ভ কমে বর্তমানে বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২০ বিলিয়নের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে; অথচ রেমিট্যান্সের স্রোত থামেনি। মার্চের প্রথম ১৯ দিনে এসেছে ২২৫.২০ কোটি ডলার, যা মাস শেষে ৩ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে। রপ্তানি আয়ও বেড়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ, পৌঁছেছে ২৪.৫৩ বিলিয়ন ডলারে।

এতে কেন রিজার্ভের সংকট কাটছে না—এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ বন্ধ থাকলেও আমদানি খরচ বেড়েছে। ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানির বিশাল পরিমাণ আমদানি হয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স যথেষ্ট নয়। ফলে রিজার্ভ এক জায়গায় আটকে রয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক দশক আগে ২০১৩ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৫.৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৩৩.৬৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। কিন্তু এর পর থেকে ক্রমাগত কমতে থাকে। মূলত ২০২২ সালের পর থেকে আমদানি ব্যয়ের চাপ, ডলার-সংকট ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের কারণে রিজার্ভ কমতে থাকে।

এ সংকটের আরও একটি বড় কারণ হলো, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)। একসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) দ্বিগুণ করে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই ইডিএফ আবার সংকুচিত করে ২.৫ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণের কিস্তি যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভের পতন কিছুটা থামানো সম্ভব হয়েছে। তবে রিজার্ভ এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, দেশ থেকে অর্থ পাচার কমেছে, হুন্ডি ব্যবসাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। ব্যাংক ও খোলাবাজারে রেমিট্যান্সের মূল্য সমান থাকায় প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছেন, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এক বছর আগের একই সময়ের ২১.৭৪ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় তা বেড়ে ২৪.৫৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে পোশাক খাতের শক্তিশালী অবদান এ প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

রিজার্ভ সংকটের কারণ শুধু আমদানি ব্যয় নয়, ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও বিদেশি বিনিয়োগের ধীরগতিও বড় বাধা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ ৪৬.৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছালে সরকার বড় প্রকল্প হাতে নেয়, কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণের চাপ বাড়ায় রিজার্ভের সংকট আরও গভীর হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংকট কাটাতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়ানো, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন জরুরি। তা না হলে বাংলাদেশ ২০ বিলিয়ন রিজার্ভের ফাঁদে আটকে থাকতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত