Ajker Patrika

পাবনার হোসিয়ারিশিল্প: ঝুট কাপড়ে ভাগ্যবদল

শাহীন রহমান, পাবনা 
পাবনার হোসিয়ারিশিল্প: ঝুট কাপড়ে ভাগ্যবদল

স্থানীয়দের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে পাবনার হোসিয়ারিশিল্প। গার্মেন্টসের উচ্ছিষ্ট ঝুট কাপড় হলো এ শিল্পের প্রধান উপকরণ। এই ঝুট দিয়ে তৈরি হচ্ছে গেঞ্জিসহ নানা বস্ত্র; যা দেশের চাহিদা পূরণের পর রপ্তানির মাধ্যমে সুনাম কুড়াচ্ছে বিদেশেও। শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই দেশে আনছে না; পাশাপাশি তৈরি করছে বিপুল কর্মসংস্থানও। এখন পর্যন্ত এ শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার নারী-পুরুষের।

পাবনা পৌর সদরের সাধুপাড়া মহল্লার দেলোয়ারা খাতুন (৫০) তাঁদেরই একজন। ১৮ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের ব্যয় নির্বাহ নিয়ে তিনি ছিলেন দিশেহারা। কিন্তু যখনই স্থানীয় একটি ঝুট কারখানায় তাঁর কাজের সুযোগ তৈরি হলো, তখন থেকে মাসে আয় করেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এখন তাঁর সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

শুধু দেলোয়ারা খাতুনের জীবনেই নয়, এমন গল্প ছড়িয়ে আছে আরও হাজারো হতদরিদ্র মানুষের জীবনে। যাঁদের অন্ধকার জীবনে আলো ফুটিয়েছে ঝুট কারখানাগুলো। অনেক বৃদ্ধ মানুষও শেষ জীবনে কারও মুখাপেক্ষী না থেকে এখান থেকে আয় করে নিজের খরচ নিজে চালাচ্ছেন। ষাটোর্ধ্ব চাঁদ আলী ও মন্টু প্রামাণিক নামের দুই শ্রমিক বলেন, ‘আমরা এই বয়সে সংসারের বোঝা হয়ে যাই। সন্তানেরা ভরণপোষণ দিতে চায় না। কিন্তু এই কারখানা আমাদের কষ্ট দূর করেছে। আমরা এখন নিজেদের খরচ নিজেরাই চালাই। কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না।’

পাবনা হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপের তথ্যমতে, গত এক দশকে পাবনা সদর উপজেলার আশপাশে বিভিন্ন গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা গড়ে তুলেছেন ঝুট কাপড় থেকে গেঞ্জি তৈরির ৫৪২টি হোসিয়ারি কারখানা। প্রতিবছর এসব কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ কোটি গেঞ্জি; যার বাজারমূল্য ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা। 

রাসেল গার্মেন্টসের মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আগে গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। ১০ বছর আগে সেই চাকরি ছেড়ে ২-৩টা সেলাই মেশিন নিয়ে নিজের এলাকায় কাজ শুরু করি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন আমার কারখানায় ১০০ মেশিন চলে এবং ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছি। সুদমুক্ত ঋণ পেলে এ খাতে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’

পাবনা হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপের সভাপতি মনির হোসেন পপি বলেন, ‘এই জেলার হোসিয়ারিশিল্পের সুনাম দেশজুড়ে। বিদেশেও অনেক সুনাম হয়েছে; যার কারণে ভারত, মালয়েশিয়ায় আমাদের গেঞ্জিসহ অন্যান্য বস্ত্র রপ্তানি হচ্ছে। আমরা আরও অনেক দেশে রপ্তানি করতে চাই। এ জন্য দরকার আর্থিক সহযোগিতা। কারণ, আমাদের পুঁজি অল্প। সুদমুক্ত ঋণ পেলে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবেন পাবনার ব্যবসায়ীরা।’

পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘বিগত করোনা মহামারি, ইউক্রেনসহ বহির্বিশ্বে যুদ্ধ পরিস্থিতি পাবনার হোসিয়ারিশিল্পে ধাক্কা দিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে আবার প্রাণ ফিরেছে। এ শিল্পের প্রসারে ও বস্ত্র রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত