পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য মিথ্যা: বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫: ৫৬
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬: ১১

চলতি মাসের শুরুতেই দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ঢাকা ও গাজীপুরের ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ ওঠে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রচারিত হয়। এতে প্রাথমিক সত্যতা পায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। 

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ৩০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্যকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

বিজিএমইএ জানায়, এর মাধ্যমে দেশকে ছোট করা হয়েছে, বায়ারের কাছে উদ্যোক্তাদের ছোট করা হয়েছে। এর পেছনে একটি চক্র কাজ করছে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ কারখানাগুলোর মালিকেরা। 

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘শিল্প যখন জাতীয়, অর্থনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রেখে অদম্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, কেউ আমাদের আটকে রাখতে পারছে না, তখন আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছি, সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জারিকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। আর দেশের প্রধান দৈনিকগুলো বিভিন্ন শিরোনামে তা ছেপেছে। যেমন—‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কাটি টাকা পাচার’, ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০ কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার’ এ রকম শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।’ 

এ ধরনের চিঠি, এ ধরনের মিডিয়া রিলিজ, এ ধরনের মিডিয়া ক্যাম্পেইন কার স্বার্থে করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে তা জানতে চান বিজিএমইএর সভাপতি। 
 
ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা মনে করি এটা আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ অথবা সরকার, কাউকেই কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না। শুধু বাধাগ্রস্তই করছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনো তদন্তই হয়নি, সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্প খাতকে ঘিরে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ডাকবে, তদন্ত করবে এবং যারা সত্যিকার অর্থে কোনো ধরনের অসাধু তৎপরতার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবে—সে বিষয়টিই প্র্যাকটিস হওয়া উচিত।’ 

তিনি বলেন, ‘উল্লেখিত বিষয়টাকে এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রত্যাখ্যান করছি। যে ১০টি কারখানার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে চারটি বিজিএমইএর এবং দুটি বিকেএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমই বা বিকেএমইএর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’ 

১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে—প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, পিক্সি নিট ওয়্যারস, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, থ্রি স্ট্রার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, স্টাইলজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স। 

ফারুক হাসান বলেন, ‘এসব কারখানার মাধ্যমে কোনো অর্থ পাচার হয়নি। আমরা তদন্তের দাবি জানাই এবং প্রমাণ না হলে অপপ্রচারকারীদের সংবাদ সম্মেলন করেই ক্ষমা চাইতে হবে।’   

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘এই মিথ্যাচারের মাধ্যমে আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি জানাই। তা না হলে মালিক-শ্রমিক মিলে আমরা বসে থাকব না। যেসব কারখানার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পাশে থাকবে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ।’ 

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্টসমূহ পর্যালোচনায় বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে বর্ণিত তথ্যের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। 

বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওই ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ওই ব্যাংকে লিয়েনকৃত নয়। 

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে ওই ব্যাংক সম্পর্কিত নয়। ফলে ব্যাংকটির মাধ্যমে বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সেলস কন্ট্রাক্ট বা ইএক্সপির রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবসিত হয়নি বা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত