সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) ২৮ কোটি টাকার ঘাটতি থাকায় ব্রোকারেজ হাউস পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখার মেয়াদ বাড়ল। বাংলাদেশ ব্যাংককে এক চিঠিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে।

এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সকল পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন অবরুদ্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর তারিখের পত্র নং বিএসইসি/এসএমএমআই/ডিএসই-৭৯ / ১৩৫ / ২০২৪ / ২৪৮৬ এবং আপনাদের (বিএফআইইউ) ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর তারিখের পত্র নং বিএফআইইউ (মনিটরিং-২ /সিএমআই)-০৫ / ২০২৪-২২৯০ এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জানানো যাচ্ছে যে, কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বিএফআইইউ কর্তৃক পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর ব্যাংক হিসাবসমূহে চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি কর্তৃক অনুসন্ধান অনুযায়ী পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই তারিখ পর্যন্ত ২৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা ঘাটতি উদঘাটিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য উপর্যুক্ত ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর ব্যাংক হিসাবসমূহের সকল ধরনের ডেবিট ট্রান্সফার ও নগদ উত্তোলন ১৩ ডিসেম্বর থেকে আরও ৩০ দিন অবরুদ্ধকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ঘাটতি থাকায় চলতি বছরের গত ১০ সেপ্টেম্বর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯২০ তম কমিশন সভায় পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সকল পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালকদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধ এবং সকল বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সে সময় বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যামাউন্টের ঘাটতি পূরণের জন্য পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সময় বৃদ্ধির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়।

একইসঙ্গে ২০২২ সালের ২২ মার্চ তারিখে ইস্যুকৃত কমিশনের নির্দেশনায় উল্লেখিত সকল শর্ত পুনরায় আরোপ করা হয়। এ ছাড়াও পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর সকল ব্যাংক হিসাবের অর্থ উত্তোলন বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) পত্র প্রেরণ, ওই ব্যক্তিবর্গের সকল বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার জন্য সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে নির্দেশনা প্রদান এবং আলোচ্য স্টক ব্রোকার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের জন্য পুলিশের বিশেষ শাখা বরাবর অনুরোধপত্র প্রেরণ করা হয়।

এদিকে চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে পিএফআই সিকিউরিটিজের স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন সনদ নবায়ন স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধন সনদ নবায়ন করার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে আবেদন জানালেও তা গ্রহণ করা হয়নি। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) প্রতিষ্ঠানটির ২৮ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।