মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে বৈশ্বিক মন্দা, ওয়াল স্ট্রিট বিশেষজ্ঞের মত

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে ঘনীভূত মানবিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ওয়াল স্ট্রিট বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাংক জেপি মরগ্যানের চেয়ারম্যান জেমি ডিমন। হামাস-ইসরায়েল এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সম্মিলিত প্রভাবকে ‘প্রচণ্ড ভীতিকর এবং অপ্রত্যাশিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানান হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য ওয়াল স্ট্রিটের দেওয়া গত শুক্রবারের তথ্যটি ছিল বেশ হতাশাজনক। তার মধ্যেই এসেছে ওয়াল স্ট্রিট বিশেষজ্ঞের আশঙ্কার বার্তা। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ২০২৩ সালে অর্থনীতির পালে কিছুটা অনুকূল হাওয়া লাগার পর আবারও স্থবির হয়ে যেতে পারে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে চলছে মন্দা। তার ওপর অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বন্ধকি ঋণের প্রবৃদ্ধি এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় থাকবে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্কও অনেকটা একই ধরনের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা; ফলশ্রুতিতে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার সঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সম্মিলিত ফলাফল অর্থনীতির প্রেক্ষিতে বিশ্বকে সম্পূর্ণ নতুন এক ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন ফিঙ্ক।

সানডে টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ফিঙ্ক বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি আমাদের জীবনের গড়ন নির্ধারণের এক অন্যতম উপাদান। সারা বিশ্বে বাড়ছে আমাদের ভয়, আশাও কম। ক্রমবর্ধমান ভয়ের পরিস্থিতিতে মানুষের ভোগ ও খরচের প্রবণতা কমে যায়। তাই এই ভয় দীর্ঘ মেয়াদে মন্দার সৃষ্টি করে এবং ক্রমবর্ধমান ভয় অব্যাহত থাকলে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা কেবলই বাড়বে।’

অন্যদিকে জেমি ডিমন বলেছেন, এই মুহূর্তে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যা ঘটছে তা বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন- স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, খাদ্য, শক্তি, অভিবাসন কেমন হবে তা ঠিক করে দেবে।

গত মাসেই তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন যে, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক সময় অতিবাহিত করছে বিশ্ব। জ্বালানির দাম, খাদ্য খরচ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর এই ক্রমবর্ধমান সংঘাতের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থেকে যাবে বলেও অনুমান করেন তিনি।

জেপি মরগ্যানের চেয়ারম্যান জেমি ডিমনবৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটের এই নৈরাশ্যজনক অনুমান এখন ধ্বনিত হচ্ছে আরও বিভিন্ন জায়গায়। গত সপ্তাহেই দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘মাধ্যাকর্ষণকে পরাস্ত করেছে বিশ্ব অর্থনীতি। এটা স্থায়ী হতে পারে না।’

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে দ্বন্দ্বকে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখার অন্যতম কারণ হচ্ছে- এই অঞ্চলের তেলের ওপর বৈশ্বিক নির্ভরতা। বৈশ্বিক বাজারের এক-তৃতীয়াংশ তেলের উৎস এই মধ্যপ্রাচ্য। অর্থনীতিবিদরা প্রায়ই আশঙ্কা করেন যে, তেলের দাম বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণ হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও এই মন্দার আশঙ্কাকে বাস্তব মনে হবে। গত সপ্তাহে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তার মুদ্রানীতির প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৩ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যুক্তরাজ্যের জিডিপি আগস্ট মাসের চেয়েও খারাপ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিছু ব্যবসায়িক সমীক্ষায় বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে অবস্থা আরও খারাপের ইঙ্গিত দিলেও অন্যরা অপেক্ষাকৃত কম হতাশাবাদী। জিডিপি চতুর্থ ত্রৈমাসিকে শূন্য দশমিক এক শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা পূর্বের অনুমানের চেয়েও দুর্বল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত