অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রাজনীতির ওপর

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ২৩
Thumbnail image

দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডলারের ঘাটতি, রিজার্ভের পতন, গ্যাস ও জ্বালানির দুষ্প্রাপ্যতা, পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শর্ত, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, তারল্য ঘাটতি, সুশাসনের অভাব, গৎবাঁধা রাজস্ব ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এর মধ্যে অন্যতম। নতুন অনুষঙ্গ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থেকে বের হওয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের নির্বাচন দেশের অর্থনীতিতে একটা প্রভাব ফেলার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, এসব মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য সুশাসন ও জবাবদিহি প্রয়োজন; যা নির্ভর করবে পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট বা রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞার (জবাবদিহি) ওপর।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘নতুন বছরে কিছু ভালো খবর থাকলেও মন্দ খবরের ঘাটতি নেই। উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু সংকট নিয়ে যাত্রা হতে যাচ্ছে নতুন বছরের; বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি, আর্থিক খাতের অনিয়ম, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যালান্স শিটের ভারসাম্যহীনতা, তারল্য ঘাটতি এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আইনের শাসন প্রয়োগের অভাব। এসব মোকাবিলার জন্য আইন করে বসে থাকলে হবে না। আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তাতেও সম্ভব না হলে দুর্বল ও দুষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষভাবে নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে একীভূত (মার্জার) করা যেতে পারে। এ জন্য সবার আগে কমপ্লায়েন্স, সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যার জন্য আবার দরকার রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বা প্রতিজ্ঞা। সে ক্ষেত্রে সরকার, রাজনৈতিক দল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় জরুরি।’
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। একে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো কঠিন হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘অর্থনীতিতে ব্যবসায়ীদের অবদান বেড়েই চলছে। কিন্তু ব্যবসা করার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নেই। আমাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা তেমন কিছু মনে হয় না। এ রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছি। কিন্তু বড় তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারছি না, সেগুলো হলো গ্যাসসহ জ্বালানি সংকট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অব্যবস্থাপনার জন্য চলমান হয়রানি এবং ডলারের মূল্য নিয়ে ভয়াবহ বৈষম্য। এসব নিয়ে কথা বলেও লাভ হচ্ছে না। নির্বাচনের পরে এসব সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। এসব দূর না হলে অর্ডার আরও কমে যাবে। কেননা ইউরোতে মন্দার তেমন একটা উন্নতি হয়নি। আবার সামনে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের স্বার্থেই ব্যবসা ও অর্থনীতি গতিশীল করার জন্য রাজনৈতিক সমাধান দরকার।’ 

ডলার-সংকটে রিজার্ভ প্রায় তলানিতে রয়েছে। কেননা দুই বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষয় হয়েছে। ডলারের মূল্য বেড়ে গেছে। আবার ব্যাংক ডলারের ভিন্ন দাম চালু করেছে। এতে ডলার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার উপক্রম। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছেন না। আবার পণ্য আমদানির ওপর কড়াকড়ি শর্ত রয়েছে। 

বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থেকে বের হওয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা পেছনে রয়েছি। এসব মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমদানি পণ্যে শুল্কনির্ভরতা কমাতে হবে। তবে এসব দ্রুত সমাধান হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু স্থায়ী সমাধান জরুরি। পণ্য আমদানির জন্য এলসি করতে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। নির্বাচনের পর দেশ স্থিতিশীল থাকলে অর্থনীতি ভালো চলবে। এ জন্য কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত