Ajker Patrika

তৃতীয় দেশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে নিষিদ্ধ চীনা তুলার পণ্য

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০: ৩৫
তৃতীয় দেশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে নিষিদ্ধ চীনা তুলার পণ্য

চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এবং বর্ডার প্রটেকশন বিভাগ সংগৃহীত প্রায় ২৭ শতাংশ জুতা ও পোশাকে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের নিষিদ্ধ তুলা পাওয়া গেছে। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে তুলা চাষ, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণে শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করায় যুক্তরাষ্ট্রে এসব তুলার বিপণন নিষিদ্ধ। 

চীনের মোট তুলার অধিকাংশই উৎপাদন হয় জিনজিয়াং প্রদেশে। আর বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে ব্যবহৃত কাপড়ের সিংহভাগই আমদানি করা হয় চীন থেকে। ফলে বাংলাদেশ দিয়েও এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ফ্রিডম অব ইনফরমেশন আইনে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে এসব তুলার আমদানি বন্ধে শুল্ক কর্মকর্তারা আইসোটোপিক পরীক্ষার দিকে ঝুঁকেছেন। এই পরীক্ষা তুলা কোন পরিবেশে জন্মেছে তা নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে তুলায় কার্বন এবং হাইড্রোজেনের মতো স্থিতিশীল উপাদানগুলোর ঘনত্বও বিশ্লেষণ করে। 

মে মাসে কাস্টমস এবং বর্ডার প্রটেকশনের সংগৃহীত ৩৭টি পোশাকের মধ্যে ১০টিতে জিনজিয়াংয়ের তুলা পাওয়া গেছে। রয়টার্সের কাছে প্রকাশিত সরকারি নথি অনুযায়ী এখন পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১১ এপ্রিল এবং ২৩ মে কমপক্ষে তিন ধরনের জুতা এবং পোশাক সংগ্রহ করেছেন। 

সামগ্রিকভাবে মোট ৮৬টি পরীক্ষার মধ্যে ১৩টি বা ১৫ শতাংশে জিনজিয়াংয়ের তুলার সামঞ্জস্য ছিল। এসবের মধ্য রয়েছে জিনস, টি-শার্ট ও শিশুর পোশাক। সব কটিতেই তুলা ছিল। কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য টেক্সটাইল, যেমন—স্প্যানডেক্স এবং রেয়ন পাওয়া যায়। মে মাসে সংগৃহীত এসব পোশাকের মধ্যে তুলা এবং পলেস্টারের মিশ্রণে তৈরি ‘মিকি টি-শার্ট’ও ছিল। 

ইংল্যান্ডের শেফিল্ড হ্যালাম ইউনিভার্সিটির মানবাধিকার ও সমসাময়িক দাসত্বের অধ্যাপক লরা মারফি বলেছেন, পণ্যের বিস্তৃত পরিসর এবং নমুনা প্রদর্শনের সময় ভালো পণ্য দেখানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে বড় বাধা। তাই যুক্তরাষ্ট্রে জিনজিয়াং তুলার প্রবেশের পরিমাণ শূন্য হওয়া উচিত। 

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কর্মকর্তারা বিশ্লেষণের জন্য পোশাক নির্বাচনের ধরন ও পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে করা প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি। 

তবে জুনে শুল্ক সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিল, সংস্থাটি বর্তমান ডেটা এবং গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যগুলো যাচাই করছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ তাদের অভিযানের জন্য ক্ষতিকারক এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। 

বাণিজ্য প্রতিকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এরিক চয় গত জুনে রয়টার্সকে বলেছিলেন, আইসোটোপিক পরীক্ষা এখনো মার্কিন কাস্টমসের জন্য নিয়মিত বিষয় নয়। সন্দেহভাজন কোনো চালান হলে বা জিনজিয়াংয়ের পণ্য খবর পেলে কর্মকর্তারা এই পরীক্ষার অনুরোধ করতে পারেন। 

অনেক খুচরা বিক্রেতাই জিনজিয়াং পণ্য থেকে মুক্ত থাকতে নিজেরাই আইসোটোপিক পরীক্ষার দিকে ঝুঁকেছে। কেননা, এসব পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ। 

গত বছর প্রকাশিত একটি ফেডারেল রিপোর্ট অনুযায়ী, জিনজিয়াংয়ে উৎপন্ন তুলা চীনের মোট তুলা উৎপাদনের প্রায় ৮৭ শতাংশ এবং ২০২০ ও ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী সরবরাহের ২৩ শতাংশ। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি তুলোজাতীয় পোশাক এবং পণ্যের বৃহত্তম উৎপাদক এখনো চীন থেকে প্রচুর পরিমাণে তৈরি কাপড় আমদানি করে। এরপর এসব দেশ থেকে উৎপাদিত পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। 

খুচরা বিক্রয় প্রতিনিধি এবং টেস্টিং কোম্পানিগুলো রয়টার্সকে বলেছে, সরবরাহকারীরা শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো অনুমোদিত স্থান থেকে প্রাপ্ত তুলা ব্যবহার করছে, বিষয়টি যাচাইয়ের ক্ষেত্রেই আইসোটোপিক পরীক্ষা করা হয়। বিপণন প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়ার সিক্রেট, রাল্ফ লরেন এবং ই-কমার্স জায়ান্ট শেইন তুলার উৎপত্তি যাচাইয়ে নিউজিল্যান্ডের আইসোটোপিক টেস্টিং কোম্পানি ওরিটেনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। 

রয়টার্সের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন নিজেরা পণ্য পরীক্ষা করে না। ২০২০ সাল থেকে তুলোজাত পণ্য পরীক্ষার জন্য ওরিটেনকে সংস্থাটি ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছে। তবে সংস্থাটি ডিসেম্বর, এপ্রিল ও মে মাসে সংগ্রহীত পাদুকা এবং পোশাকের তিনটি ব্যাচের সরবরাহকারীর নাম সংশোধন করেছে। একই সঙ্গে ওরিটেন এসব পণ্যর পরীক্ষা করেছে কি না তা নিশ্চিত করেনি। 

কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন বন্দরে জিনজিয়াং থেকে আসা পণ্য ঠেকাতে বা যাচাইয়ে শুধু আইসোটোপিক পরীক্ষা যথেষ্ট নয়। কেননা, অসংখ্য খুচরা বিক্রেতা এবং উৎপাদকেরা সুতা থেকে তৈরি পোশাক পরীক্ষা করার চেষ্টা করছেন। 

পরীক্ষা করা তৈরি পোশাকে একই সুতা ব্যবহার করা হয়েছিল এমন কোনো গ্যারান্টি নেই জানিয়ে চয় বলেন, এই কঠিন সমস্যার সহজ কোনো সহজ সমাধান নেই। কারণ, যেই নমুনা সুতা পরীক্ষা হয়, সেটাই যে বন্দরে ভেড়া পণ্যতে ব্যবহার হয়েছে এর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত