আওয়ামী লীগের আমলে বছরে পাচার ১৫ বিলিয়ন ডলার: ইফতেখারুজ্জামান

  • রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা—তিনের আঁতাতে অর্থ পাচার।
  • দুর্নীতির সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
  • ঋণখেলাপির স্রষ্টারাই ব্যাংক খাতের নীতিকাঠামো তৈরি করেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ৫৫
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ফাইল ছবি

একটানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এই সময়ে প্রতিবছর গড়ে দেশ থেকে সামগ্রিকভাবে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন (১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি) ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ওই সময় দুর্নীতির সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেবল বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকেও (বিএফআইইউ) ব্যবহার করা হয়েছে অর্থ পাচারে সহায়তা করার জন্য।

রাজধানীতে আজ শনিবার ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইফতেখারুজ্জামান। যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ (এসবি)। পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে সেমিনারটি হয়।

কত টাকা পাচার হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব করা সম্ভব নয় জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যে ১৭ বিলিয়ন ডলারের কথা বলেছেন, সেটি ব্যাংক খাতকে ব্যবহার করে যে পাচার হয়েছে, তার তথ্য অনুযায়ী হতে পারে। কিন্তু এর বাইরে চালান জালিয়াতি, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের পাচার, ভিসা ও অভিবাসন বাবদ পাচার, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও অন্যান্য মাধ্যমের পাচার এবং হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে থাকে। সামগ্রিকভাবে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই যে ব্যাংক খাতকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তার জন্য এক নম্বরে দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানে যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার তথা ঢেলে সাজানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

কর্তৃত্ববাদ টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, দুদক, সিআইডি, আটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় দলীয়করণ ও পেশাগত দেউলিয়াকরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ঋণখেলাপি সংস্কৃতির যারা স্রষ্টা, তারাই ব্যাংক খাতের নীতিকাঠামো তৈরি করেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা—এ তিন খাতের আঁতাতের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি। বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে পাচার বা মূল রোগ দুর্নীতি বাস্তবায়নে। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা দরকার। শুধু ব্যক্তির পরিবর্তনই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে সচেতন হতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের মতে, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। তবে এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। বলা যেতে পারে এত কঠিন যে প্রায় অসম্ভব। পাচার করা টাকা ফেরত আনার জন্য বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি, দুদক ও আটর্নি জেনারেলের কার্যালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্ট সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে। পাশাপাশি আর্থিক অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়ার চেয়ে আর্থিক অপরাধের মামলা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, কারণ, সালমান এফ রহমানের আর্থিক অপরাধ প্রমাণ করা যাবে।

গ্রিনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জসিম উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ নাঈম চৌধুরী এবং ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত