শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে দক্ষ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ৫৬
আজ সোমবার রাজধানীর লা মেরিডিয়ান ঢাকায় ‘তৃতীয় টার্মিনাল: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)। ছবি: আজকের পত্রিকা

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মান উন্নয়নে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সেবায় প্রতিযোগিতা সৃষ্টি এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ জরুরি। বর্তমান একচেটিয়া ব্যবস্থার পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দক্ষ অপারেটর নিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর লা মেরিডিয়ান ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘তৃতীয় টার্মিনাল: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে খাত সংশ্লিষ্টরা এ দাবি জানান।

বৈঠকের আয়োজন করে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড টুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)। আলোচনায় শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এবং টার্মিনাল-২-এ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অংশীজনেরা।

এ সময় বিমানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাভিয়েশন অপারেটর’স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন এটিজেএফবির সভাপতি তানজীম আনোয়ার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়াসহ শাহজালাল বিমানবন্দরের অংশীজনেরা অংশগ্রহণ করেন।

মূল প্রবন্ধে মফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান এবং তা যৌক্তিক। তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে যেন রাজনীতির ওপর অপারেশনাল বিষয় প্রাধান্য পায় তার জোর দাবি রাখব। তিনি বলেন, বেবিচকের ভূতপূর্ব চেয়ারম্যান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথিতযশা কোম্পানি ডিনাটা, সুইসপোর্ট, ফ্রাপোর্ট, মেনজিস এবং সেলেবি-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দোহাই দিয়ে জাপানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বর্তমান একচেটিয়া ব্যবস্থা ভেঙে একাধিক কোম্পানিকে সুযোগ দিলে সেবা উন্নত হবে এবং দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বিমানকেও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যোগ্য বিবেচনায় দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিশ্বের কোথাও একক প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরের পুরো গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং পরিচালনা করে না। বিমানের একক নিয়ন্ত্রণে থাকা সেবার মান নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠছে।

বৈঠকে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো অভিযোগ করে, শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার কারণে তাদের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে নিজস্ব কর্মী নিয়োগ করতে হয়। এটি অযৌক্তিক এবং সেবার জন্য বিমান থেকে নেওয়া ফি’র সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের প্রতিনিধি মাসুদুজ্জামান বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দীর্ঘ প্রক্রিয়া সেবার গুণগত মান কমাচ্ছে। শাহজালালের নতুন কার্গো টার্মিনাল অত্যাধুনিক হলেও পরিচালনার দক্ষতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এয়ারলাইনস অপারেটরস কমিটির (এওসি) চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, ৩০-৪০ বছর ধরে একই অভিযোগ শুনে আসছি। অথচ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মান বাড়ছে না।

এ সময় অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, সেবা নিয়ে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো সন্তুষ্ট না। তারা জানিয়েছে বিশ্ব অন্যান্য যে কোনো দেশের তুলনায় শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ বেশি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষমতার বিষয়টি আমরা দেখব। যদি তার সক্ষমতার ঘাটতি হয় বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি তৃতীয় টার্মিনাল চালু হতে আরও এক বছর লাগবে বলে জানান উপদেষ্টা।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের সব টার্মিনালগুলোকে উন্নত করার জন্য বেবিচক কাজ করছে। এসব টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু জাতির কাছে একটা স্বপ্ন। তবে এ জন্য বেবিচক বসে নেই। সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছেন।

গোল টেবিলে বেবিচকের সদস্য (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম, এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ, কাতার এয়ারওয়েজের কার্গো ম্যানেজার সুহেদ আহমেদ চৌধুরী, বিশিষ্ট অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার এটিএম নজরুল ইসলাম, লা মেরিডিয়াল বাংলাদেশের জেনারেল ম্যানেজার কনস্টান্টিনোস গ্যাভরিয়েল, থাই এয়ারওয়েজের এয়ারপোর্ট সার্ভিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট সৈয়দ ইয়াসেরুল আলম, এয়ার ইন্ডিয়ার এয়ারপোর্ট ম্যানেজার শয়নদেব ঘোষ, তার্কিশ এয়ারলাইনসের স্টেশন ম্যানেজার সেরকান অ্যাকেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের জিএম-জনসংযোগ কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ছাড়াও দেশি বিদেশি এয়ারলাইনস, ট্যুর অপারেটর, ওটিএ’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত