পুঁজিবাজারে সালমান ও এস আলমের অনিয়ম তদন্তে বিএসইসির কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮: ৫২
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ৩৯

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সমালোচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার এস আলমের পরিবারের সদস্যদের পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট অনিয়ম খুঁজবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

আজ সোমবার এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। এতে সই করেছেন সংস্থার ইন্সপেকশন, ইনকোয়ারি অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের পরিচালক মো. মাহমুদুল হক। 

চিঠিতে আদেশ জারি থেকে পরবর্তী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। 

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির এফডি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মাদ আবুল হাসান, এসআরআইসি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, এলএসডি বিভাগের সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম সাদ্দাম এবং এসএমএমআইডি বিভাগের সহকারী পরিচালক অমিত কুমার সাহা। 

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী বলেন, সালমান এফ রহমান, এস আলমসহ তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

তদন্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একটি জাতীয় দৈনিকে গত ১৪ আগস্ট এস আলম গ্রুপ এবং সালমান এফ রহমানের অনিয়মের তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সালমান এফ রহমান আশির দশক থেকেই শীর্ষস্থানীয় একজন ঋণখেলাপি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম এসেছিল। 

তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাম কেটে দিতে বাধ্য করেন। ২০১১ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সালমান এফ রহমানের ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একসময়ের দেশের শীর্ষ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিকে ২০১৭ সালে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন কর্মকর্তারা। 

সংবাদে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি থেকে টাকা বের করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে। 

তদন্ত আদেশে বলা হয়েছে, কমিশন ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যসহ তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধান করার নির্দেশনা প্রদান করেন। 

এ  অবস্থায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অরডিন্যান্স, ১৯৬৯–এর সেকশন ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩–এর ধারা ১৭ক–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চারজন কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান কার্য পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত