দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ২৩: ০৯
Thumbnail image

কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি, প্রবাসী আয় কমেছে। ডলার সংকটে টান পড়েছে রিজার্ভে; আমদানি ব্যয় বেড়েছে। দেশে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে লাগামহীনতার সংস্কৃতি আরও তীব্র হয়েছে; দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। এমন সংকটকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন।

‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ স্লোগানে এই বাজেট ঘোষণা হলেও রাজস্ব আয়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বাজেটে ‘উন্নয়নের মাশুল’ জনগণকেই গুনতে হবে। কারণ, করহার যেভাবে বাড়ানো হচ্ছে, তার চূড়ান্ত প্রভাব পড়বে ভোক্তা তথা জনগণের ওপর। 

বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক সামগ্রীর পাশাপাশি ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বেশকিছু খাদ্যসামগ্রীর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছ থেকে কর আদায়ের প্রস্তাব থাকছে। সব মিলিয়ে আগামী বাজেট জীবনযাত্রার খরচ বাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেই অর্থের জোগান দিতে বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক ও কর আরোপ, কিংবা ছাড়ের প্রস্তাবনা আছে। এর ফলে অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে কিছু পণ্যের দাম কমতেও পারে।

বাজেটের প্রভাবে দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

গৃহস্থালি সামগ্রী: গৃহস্থালি সামগ্রীর ক্ষেত্রে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদনে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। টিফিন বক্স ও পানির বোতল এর আওতায় পড়বে না। 

কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে টিস্যু পেপারের দাম বাড়তে পারে।

একই হারে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী ও তৈজসপত্রের (হাঁড়িপাতিল, থালাবাসন) ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। একই হারে সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। এতে বাজারে সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন:  শুল্ক ফাঁকি রোধে সব ধরনের মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমদানিতে শুল্কসহ মোট করভার অভিন্ন করহার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ ধরা হয়েছে।  এতে বিদেশি ওভেনের দাম বাড়তে পারে। শহরে বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত বাড়িতে খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা হয়।

বাসমতি চাল: বিরিয়ানি-তেহারির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়তে পারে।

কাজুবাদাম: দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই আমদানি করা কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে।

খেজুর: বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। 

বিদেশি ফল: প্রক্রিয়াজাত বাদাম ও ফলের আমদানি শুল্ক অভিন্ন করে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিগারেট: বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (যেমন-হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যম স্তরের (স্টার, নেভি) ১৩৪, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে।  

মোবাইল ফোন: রাজস্ব আয় বাড়াতে আইএমএফের পরামর্শে মোবাইল ফোনকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এর ফলে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।

কলম: কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে।

সানগ্লাস: সানগ্লাসের (প্লাস্টিক ও মেটাল ফ্রেম) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে সব ধরনের সানগ্লাসের দাম বেড়ে যেতে পারে।

বাইসাইকেল: বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এতে পরিবেশ রক্ষা করা বাহনের দাম বেড়ে যেতে পারে।

আঠা: ভাঙা জিনিস জোড়া দেওয়ার আঠা বা গ্লু আমদানিতে কোনো সংরক্ষণমূলক শুল্ক ছিল না। এখন তা ১৫ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আঠার দাম বাড়তে পারে।

দামি গাড়ি: আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ এবং ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে ৫০০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাবিশিষ্ট গাড়ি সাধারণত জিপ গাড়ি হয়। এখন দেশে বিপুলসংখ্যক জিপ গাড়ি কিংবা এসইউভি মডেলের গাড়ি আসছে।

নির্মাণসামগ্রী: বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশি টাইলস আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশি টাইলসের দাম বাড়তে পারে। 

জমি নিবন্ধন: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) এলাকায় জমি নিবন্ধনের ট্যাক্স বিদ্যমান ৩ শতাংশ ও ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হতে পারে। ফলে আগামী অর্থবছর থেকে উভয় ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ গুণতে হবে।

বিদেশ ভ্রমণ: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি করের চাহিদা মেটাতে বিদেশগামী যাত্রীদের ওপর ৩০০-৫০০ টাকা বাড়তি কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিদেশে যাওয়া-আসা খরচ বেড়ে যেতে পারে। তবে হজ কিংবা চিকিৎসার জন্য যারা বিদেশ ভ্রমণ করবেন, তাঁরা আগের মতোই কর সুবিধা পাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত