ভোমরা স্থলবন্দরে সব পণ্য আমদানির অনুমতি নেই, কমেছে রাজস্ব আয়

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ২১
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৫৫

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব আয় নেমেছে অর্ধেকে। একই সঙ্গে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশও কমে গেছে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দুষছেন ডলার-সংকট, সব পণ্যের আমদানির অনুমতি না থাকা, ব্যবসায়িক হয়রানি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা দেওয়ার মানসিকতার অভাবকে।

ভোমরা স্থলবন্দর থেকে জানা গেছে, তিন থেকে চার বছর আগেও প্রতিদিন চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করত। বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২০০ নিচে। গত ২২ জানুয়ারি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকেছে মাত্র ১০৯টি। 

ভোমরা স্থলবন্দর থেকে আরও জানা গেছে, ভোমরা স্থলবন্দর ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের কলকাতার সঙ্গে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব বাংলাদেশের যেকোনো বন্দরের চেয়ে কম হওয়ায় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছিল। পরিবহন খরচে লাভবান হওয়ায় পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করছিলেন। আমদানি-রপ্তানির কাজে জড়িয়ে আছেন ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি। সে কারণে ২০০৪-০৫ সালে রাজস্ব আদায় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। 

 ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে আদায় হয়েছে মাত্র ৬৩১ কোটি টাকা। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৮৫৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান ভোমরা শুল্ক স্টেশনের লোকজন।

শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, আগে চার শতাধিক ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকলেও বর্তমানে প্রতিদিন ট্রাক ঢুকছে সর্বোচ্চ দেড় শ। 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হয়রানির কারণে এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ডলার-সংকট তো রয়েছেই। ডলার-সংকটের কারণে নিয়মিত ঋণপত্র খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা দেওয়ার মানসিকতার অভাব রয়েছে। 

ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর জানান, প্রাণ কোম্পানির কিছু পণ্য ও অন্য একটি কোম্পানির কুড়ার তেল ছাড়া ভারতে বাংলাদেশের তেমন কোনো পণ্য রপ্তানি হয় না। আমদানি-নির্ভর ভোমরা স্থলবন্দরে ভারত থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে ৭২টি পণ্যের। শেড না থাকা ও কিপিং লাইসেন্স না থাকায় বর্তমানে আমদানি হয় মাত্র ২২টি পণ্য। এই বন্দর দিয়ে আগে বেশি পরিমাণে ফলমূল আমদানি করা হতো। ফলে যে ছাড় বেনাপোল বন্দরে পাওয়া যায়, এখানে তা পাওয়া যায় না। তাই ব্যবসায়ীরা দূরত্বের কারণে যে সুবিধা রয়েছে তা উপেক্ষা করে অন্য বন্দরে ঝুঁকছেন। 

ভোমরা স্থলবন্দরের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক আহ্বায়ক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ‘আমদানি কমে যাওয়ার জন্য ডলার-সংকট ছাড়াও অনেক কারণ রয়েছে। এখানে শ্রমিকদের পেছনে দ্বিগুণ অর্থ গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তো রয়েছেই।’

স্থলবন্দরের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান। তিনি বলেন, ‘অর্থবছরের শুরু থেকে বন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বারবার আশ্বাসের পরও কিপিং লাইসেন্স পাচ্ছে না স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ডিউটি ফ্রি পণ্য আমদানিতে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণ হবে না।’ এ ছাড়া আমদানি করা পাথরের চাহিদা কমে যাওয়ায় ট্রাকের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে বলে তিনি দাবি করেন। 

পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তাদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক বলেন, ‘পণ্য চাহিদার ওপর আমদানি নির্ভর করে। এখানে শুল্ক বিভাগের কিছু করার নেই। সব ধরনের পণ্য আমদানি করা হলে রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত