বর্তমান অবস্থায় বিদ্যুৎ ও মূল্যস্ফীতি মানুষকে ভোগাচ্ছে, এ বিষয়ে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

আজ বুধবার বনানীর শেরাটন হোটেলে বাজেট পরবর্তী প্যানেল আলোচনায় মন্ত্রী এ কথা জানান।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নতুন আয়কর আইনে কী হচ্ছে, তা সবার জানা উচিত। তবে এর মধ্যে অগ্রিম আয়করের (এআইটি) বিষয়টি বাদ দেওয়া উচিত। এটি থাকার কোনো মানে নেই। কারণ একবার কর আদায় করার পরে ব্যবসায়ীরা তা ফেরত পান না। তবে সবকিছু অটোমেশন হওয়া উচিত। তাহলে ঝামেলা কমবে। যেমন—এখনো মানুষ ঠিকই ভ্যাট দেয়, কিন্তু এর সিংহভাগ আদায়কারীদের পকেটেই থেকে যায়।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচাম) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়াও ছিলেন অ্যামচাম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহম্মদ আব্দুল মজিদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

অ্যামচাম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বাজেটে এনবিআরকে বাড়তি কর আদায় করতে হবে। আর তার বেশির ভাগ চাপ পড়ছে ব্যবসা খাতে। তাছাড়া ব্যাংক থেকে সরকারের বেশি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এতে ব্যবসা খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে। তাছাড়া বর্তমান ব্যবসার অন্যতম উপাদান আইটি সরঞ্জাম। সেখানেও বাড়তি ব্যয় করতে হবে। সব মিলিয়ে বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব বলব কী করে? জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয়ের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। যা ভোক্তাকেও ভোগাবে।

অ্যামচাম সভাপতি আরও বলেন, অন্যান্য চাপের সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে আয়কর আইন। কারণ এ আইনের কোনো কিছুই ব্যবসায়ীরা জানে না, তাঁদের সঙ্গে আলোচনাও হয়নি, তাঁরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। ফলে কেমন আইন হবে তা বলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এ আইন সহজ ও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। কর আদায়ের ক্ষেত্রে অটোমেশনের ব্যবস্থা করলে ভোগান্তি কমবে বলেও মনে করেন তিনি।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ২০১২ সালে ভ্যাট আইন অনুমোদন করেছিল সংসদ সদস্যরা। কিন্তু পরে তাঁরাই এর বিরোধিতা করেছে। তাই আয়কর আইন এমন হওয়া উচিত যাতে তা ভ্যাটের মতো সমস্যায় না পড়ে। এ আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হওয়া উচিত, লোকাল মানদণ্ডে নয়। নতুবা এ আইনও ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মানের আইন করতে প্রয়োজনে বাইরের বিশেষজ্ঞ দিয়ে এ আইন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা উচিত। সংসদ সদস্যদের উচিত এ আইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এবং আইনের অসংগতি থাকলে তা তুলে ধরা।

মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, যখন বিশ্ববাজারে দাম কমছে তখনো দেশের বাজারে দাম কমছে না। বরং মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সরকারের এখন মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এই পরিস্থিতিতে সেটা কঠিন হবে। এখনই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ এটা আরও বাড়বে। সরকারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটা অর্জন করা কঠিন হবে। ডলার বিক্রি এবং আমদানি কমিয়ে ডলারের রিজার্ভ ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।