রোকন উদ্দীন, ঢাকা
রমজান মাসে দেশে ইফতার-সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ খেজুর। ধর্মীয় রীতির প্রতি সম্মান জানিয়ে অধিকাংশ রোজাদার খেজুর দিয়ে ইফতার করেন। এটি শুধু ধর্মীয় গুরুত্বই বহন করে না; বরং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ, যা সারা দিন সিয়াম শেষে খেলে শরীরে জোগায় তাৎক্ষণিক শক্তি। সাহ্রিতেও অনেকে দু-চারটি খেজুর খেয়ে দিনের প্রস্তুতি নেন।
সারা বছর খেজুরের কমবেশি কদর থাকলেও প্রতিবছর রমজান এলেই এর চাহিদা একলাফে বাড়ে কয়েক গুণ। অথচ সে অনুযায়ী দেশে মেলে না সরবরাহ। দেশে উৎপাদিত না হওয়ার বিপরীতে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভরতাই এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আমদানিতে উচ্চ হারের ট্যারিফ ভ্যালু আরোপ এবং ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা খেজুরের সরবরাহ-সংকট এবং দামে অস্বাভাবিকতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেজুরের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। অন্যবারের মতো এবারও বদলায়নি পরিস্থিতি। বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ বছর আমদানিও অস্বাভাবিক কমে গেছে; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আসন্ন রমজানেও।
আমদানি কমায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা
দেশে খেজুরের চাহিদা ১ লাখ টন। এর মধ্যে ৬৫-৭০ শতাংশই প্রয়োজন হয় রমজানে। বাকি মাসগুলোয় গড়ে খেজুর খাওয়া হয় ২ হাজার ৭২৭ টন করে। কাস্টমসের তথ্যমতে, ক্রমান্বয়ে খেজুরের আমদানি কমছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৮৮ হাজার ৫৬৭ টন আমদানি হলেও ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫১৫ টনে, যা প্রায় ২২ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮০ হাজার ৯১০ টন।
এর বিপরীতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানি হয়েছে মাত্র ২৮৯ টন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৭২ দশমিক ২৫ টন। এই অবস্থায় চাহিদার বিপরীতে খেজুরের মজুত এখন তলানিতে। রমজানের বাকি প্রায় সাড়ে তিন মাস। এই সময়ে ৭০ হাজার খেজুরের প্রয়োজন হলেও এখনো বড় পরিসরে আমদানি শুরু হয়নি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এবার আমদানি থেকে দূরেই থাকছে। কিছু মালিক পলাতক, কেউ কেউ হয়েছেন গ্রেপ্তার। বাকিদের আমদানি খতিয়ান খুবই নগণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেজুর আমদানির তথ্য মেলেনি। অক্টোবরের চিত্রও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অগ্রগতির মধ্যে গত সপ্তাহে রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, সেগুলোর আমদানি সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক খেজুরসহ সংশ্লিষ্ট পণ্যে নগদ মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ব্যস, এতটুকুই। যদিও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, সরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৫৬০ টন খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, চলতি বছর নানা কারণে খেজুর আমদানি কমে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা না নিলে রমজানে খেজুর নিয়ে হাহাকার হতে পারে।
চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জান্নাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হলো খেজুর উৎপাদনের মৌসুম। অন্যান্য বছর আগে থেকেই আমদানি হতো। এ বছর তা হয়নি।
শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ার কারণে খেজুরের বাজারে ব্যাপক চাপ পড়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু ছিল প্রতি টন ৬০০ ডলার, যার ভিত্তিতে শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে শুল্কহার ৫৮.৬০ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা আরও বাড়িয়ে ৬৩.৬০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ শুল্ক, ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম করসহ অন্যান্য চার্জ যোগ হয়ে চূড়ান্ত শুল্কহার খুব বেশি হয়ে গেছে।
ট্যারিফ ভ্যালুর জটিলতা
উচ্চ হারের ট্যারিফ বসানোর পর আমদানি আরও কমে গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু চারটি স্ল্যাবে ভাগ হয়েছে। এতে নিম্নমানের প্রতি টন খেজুরের ওপর ট্যারিফ ভ্যালু আরোপ করা হয় ১ হাজার ডলার। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম মাত্র ৪৫০-৫০০ ডলার। প্রতি টন ভালো মানের খেজুর ৮০০-১২০০ ডলারে পাওয়া গেলেও দেশে এর ট্যারিফ ভ্যালু বসানো হয়েছে ২ হাজার ৫০০ ডলার। একইভাবে সেরা মানের প্রতি টন খেজুরের ওপর ৪ হাজার ডলার ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য করা হয়, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম সেই ২ হাজার ৫০০ ডলারের মধ্যে। অপরদিকে মাঝারি মানের প্রতি টন খেজুর ১ হাজার ৫০০ ডলারে মিললেও এর ওপর ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য হয় ২ হাজার ৭৫০ ডলার। ফলে এক কনটেইনার
খেজুর আনতে যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ লাখ
টাকা খরচ হতো, বর্তমানে তা বেড়ে ৪৮ লাখে পৌঁছেছে। খরচ বেশি হওয়ায় এরই মধ্যে অনেক ছোট আমদানিকারক ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বাজারেও সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে; যার প্রভাব পড়েছে দামে।
আমদানি হয় ২৫-৩০ ধরনের খেজুর
পাইকারি বাজার বাদামতলী ঘুরে জানা যায়, জাইদী, দাবাস, মেডজুল, আজওয়া, আম্বার, মাবরুম, মাশরুক, সাফাওয়ি বা কালমি, মরিয়ম, নাগালসহ বিভিন্ন মান ও দামের ২৫-৩০ ধরনের খেজুর আমদানি হয়। এসব খেজুর ইরাক, ইরান, জর্ডান, দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। এর বাইরে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া থেকেও আমদানি হয়।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি ক্রয় করে জাইদী, দাবাস জাতের খেজুর, যার বড় রপ্তানিকারক দেশ ইরাক। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম। আর সামর্থ্যবানেরা আজওয়া, আম্বার, মরিয়ম ইত্যাদি খেজুর বেশি ক্রয় করে। এসব উচ্চমূল্যের খেজুরের জন্য সৌদি আরবসহ অল্প কয়েকটি আরব দেশ সুপরিচিত।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ অনেক আগেই খেজুরের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। এখন সময় থাকতেই এগুলোর শুল্ক ও কর কয়েক মাসের জন্য তুলে দিয়ে ব্যাপক আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে। শুল্কছাড়ের সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছেন কি না, তা-ও কঠোর মনিটরিং করতে হবে।
বাজার পরিস্থিতি, ক্রেতারা চাপে
২০২২ সাল পর্যন্ত নিম্ন আয়ের মানুষ ১০০ টাকা কেজিতে খেজুর খেতে পারত; যা বর্তমান বাজারে ২৫০-৫০০ টাকার বেশি। কিন্তু পরে হঠাৎ ট্যারিফ ভ্যালুর ও শুল্ক বাড়ার কারণে দাম বাড়তেই থাকে।
টিসিবির তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে বাজারে খেজুরের দাম ৭-১৫ শতাংশ বেড়েছে। আর রমজানের সাড়ে তিন মাস আগেই খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। উচ্চমানের খেজুর; যেমন আজওয়া, মরিয়ম, আম্বার, বর্তমানে ১২০০-১৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৫০০-৯০০ টাকার মধ্যে। গত রমজানের আগে খেজুরের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দাম বেঁধে দেয় সরকার। তখন অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদী খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই দামে খেজুর বাজারে মেলেনি। মালিবাগ বাজারের ক্রেতা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, খেজুর বিলাসী পণ্য নয়। দাম বাড়ায় নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও চাপে পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রস্তাব
যদি বর্তমান অবস্থায় শুল্কহার এবং ট্যারিফ ভ্যালু বহাল থাকে, তবে আগামী রমজানে খেজুরের চাহিদা পূরণে বড় সংকট তৈরি হবে। তখন পুরোনো এবং নিম্নমানের খেজুর নিয়েই কাড়াকাড়ি হতে পারে। আশঙ্কা প্রকাশ করে এরই মধ্যে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালু কমানো এবং শুল্কহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন। তাঁরা বলছেন, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে তার সুফল রমজানে মিলবে না। কারণ, জাহাজীকরণের পরও বিভিন্ন সোর্স থেকে খেজুর আসতে ৬০ দিন লেগে যায়। সব মিলিয়ে আমদানির জন্য তিন মাস হাতে রাখতে হয়। মার্চের শুরুতে রমজান শুরু হলে হাতে আছে মাত্র সাড়ে তিন মাস। এ ছাড়া উৎপাদনকারী দেশগুলোতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর খেজুরের মৌসুম থাকে। দামও কম থাকে। এ সময় আমদানি না করতে পারলে দাম বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুদ্দীন আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সরকারকে শুল্ক কমানোর এবং ট্যারিফ ভ্যালু যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেছি। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে রমজানে খেজুরের দাম সহনীয় রাখা সম্ভব।’
পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘ট্যারিফ ভ্যালু দুই স্ল্যাবে নির্ধারণ করা উচিত। নিম্নমানের খেজুরের ক্ষেত্রে ৮০০-৯০০ ডলার এবং ভালো মানের ক্ষেত্রে ১৮০০-২০০০ ডলার হওয়া যৌক্তিক। শুল্কহার ২০ শতাংশে নামালে সরকার, ব্যবসায়ী, ক্রেতা—সবাই উপকৃত হবেন।
কী করছে সরকার
সরকারি সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রস্তাব নিয়ে তা যাচাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়েছে। বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালুকে ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি মনে করছে ট্যারিফ কমিশনও। এমনকি খেজুর আমদানির ওপর আরোপিত অগ্রিম ও আগাম কর যৌক্তিক নয় বলে জানানো হয়েছে। তাই সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দাম কমাতে আরোপিত শুল্কায়ন মূল্য যৌক্তিক করা, শুল্কহারে ছাড় দেওয়া ও সমুদয় অগ্রিম প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে সরকারের কাছে।
কমিশনের উপপ্রধান (বাণিজ্য নীতি) মাহমুদুল হাসান এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এতে ভোক্তা, সরকার ও ব্যবসায়ী—সবাই স্বস্তি পাবে।’
অগ্রগতি কত দূর জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক নীতি) মুকিতুল হাসান বলেন, ‘আমরা খেজুরের শুল্ক ও শুল্কায়ন মূল্য নিয়ে এরই মধ্যে একটা পর্যালোচনাসহ খেজুরের আমদানিতে নীতিগতভাবে কী পরিমাণ ছাড় দেওয়া যায়, তার একটা সারাংশ তৈরি করা হয়েছে। দ্রুতই সরকার এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।
রমজান মাসে দেশে ইফতার-সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ খেজুর। ধর্মীয় রীতির প্রতি সম্মান জানিয়ে অধিকাংশ রোজাদার খেজুর দিয়ে ইফতার করেন। এটি শুধু ধর্মীয় গুরুত্বই বহন করে না; বরং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ, যা সারা দিন সিয়াম শেষে খেলে শরীরে জোগায় তাৎক্ষণিক শক্তি। সাহ্রিতেও অনেকে দু-চারটি খেজুর খেয়ে দিনের প্রস্তুতি নেন।
সারা বছর খেজুরের কমবেশি কদর থাকলেও প্রতিবছর রমজান এলেই এর চাহিদা একলাফে বাড়ে কয়েক গুণ। অথচ সে অনুযায়ী দেশে মেলে না সরবরাহ। দেশে উৎপাদিত না হওয়ার বিপরীতে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভরতাই এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আমদানিতে উচ্চ হারের ট্যারিফ ভ্যালু আরোপ এবং ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা খেজুরের সরবরাহ-সংকট এবং দামে অস্বাভাবিকতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেজুরের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। অন্যবারের মতো এবারও বদলায়নি পরিস্থিতি। বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ বছর আমদানিও অস্বাভাবিক কমে গেছে; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আসন্ন রমজানেও।
আমদানি কমায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা
দেশে খেজুরের চাহিদা ১ লাখ টন। এর মধ্যে ৬৫-৭০ শতাংশই প্রয়োজন হয় রমজানে। বাকি মাসগুলোয় গড়ে খেজুর খাওয়া হয় ২ হাজার ৭২৭ টন করে। কাস্টমসের তথ্যমতে, ক্রমান্বয়ে খেজুরের আমদানি কমছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৮৮ হাজার ৫৬৭ টন আমদানি হলেও ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫১৫ টনে, যা প্রায় ২২ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮০ হাজার ৯১০ টন।
এর বিপরীতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানি হয়েছে মাত্র ২৮৯ টন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৭২ দশমিক ২৫ টন। এই অবস্থায় চাহিদার বিপরীতে খেজুরের মজুত এখন তলানিতে। রমজানের বাকি প্রায় সাড়ে তিন মাস। এই সময়ে ৭০ হাজার খেজুরের প্রয়োজন হলেও এখনো বড় পরিসরে আমদানি শুরু হয়নি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এবার আমদানি থেকে দূরেই থাকছে। কিছু মালিক পলাতক, কেউ কেউ হয়েছেন গ্রেপ্তার। বাকিদের আমদানি খতিয়ান খুবই নগণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেজুর আমদানির তথ্য মেলেনি। অক্টোবরের চিত্রও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অগ্রগতির মধ্যে গত সপ্তাহে রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, সেগুলোর আমদানি সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক খেজুরসহ সংশ্লিষ্ট পণ্যে নগদ মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ব্যস, এতটুকুই। যদিও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, সরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৫৬০ টন খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, চলতি বছর নানা কারণে খেজুর আমদানি কমে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা না নিলে রমজানে খেজুর নিয়ে হাহাকার হতে পারে।
চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জান্নাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হলো খেজুর উৎপাদনের মৌসুম। অন্যান্য বছর আগে থেকেই আমদানি হতো। এ বছর তা হয়নি।
শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ার কারণে খেজুরের বাজারে ব্যাপক চাপ পড়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু ছিল প্রতি টন ৬০০ ডলার, যার ভিত্তিতে শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে শুল্কহার ৫৮.৬০ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা আরও বাড়িয়ে ৬৩.৬০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ শুল্ক, ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম করসহ অন্যান্য চার্জ যোগ হয়ে চূড়ান্ত শুল্কহার খুব বেশি হয়ে গেছে।
ট্যারিফ ভ্যালুর জটিলতা
উচ্চ হারের ট্যারিফ বসানোর পর আমদানি আরও কমে গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু চারটি স্ল্যাবে ভাগ হয়েছে। এতে নিম্নমানের প্রতি টন খেজুরের ওপর ট্যারিফ ভ্যালু আরোপ করা হয় ১ হাজার ডলার। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম মাত্র ৪৫০-৫০০ ডলার। প্রতি টন ভালো মানের খেজুর ৮০০-১২০০ ডলারে পাওয়া গেলেও দেশে এর ট্যারিফ ভ্যালু বসানো হয়েছে ২ হাজার ৫০০ ডলার। একইভাবে সেরা মানের প্রতি টন খেজুরের ওপর ৪ হাজার ডলার ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য করা হয়, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম সেই ২ হাজার ৫০০ ডলারের মধ্যে। অপরদিকে মাঝারি মানের প্রতি টন খেজুর ১ হাজার ৫০০ ডলারে মিললেও এর ওপর ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য হয় ২ হাজার ৭৫০ ডলার। ফলে এক কনটেইনার
খেজুর আনতে যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ লাখ
টাকা খরচ হতো, বর্তমানে তা বেড়ে ৪৮ লাখে পৌঁছেছে। খরচ বেশি হওয়ায় এরই মধ্যে অনেক ছোট আমদানিকারক ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বাজারেও সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে; যার প্রভাব পড়েছে দামে।
আমদানি হয় ২৫-৩০ ধরনের খেজুর
পাইকারি বাজার বাদামতলী ঘুরে জানা যায়, জাইদী, দাবাস, মেডজুল, আজওয়া, আম্বার, মাবরুম, মাশরুক, সাফাওয়ি বা কালমি, মরিয়ম, নাগালসহ বিভিন্ন মান ও দামের ২৫-৩০ ধরনের খেজুর আমদানি হয়। এসব খেজুর ইরাক, ইরান, জর্ডান, দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। এর বাইরে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া থেকেও আমদানি হয়।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি ক্রয় করে জাইদী, দাবাস জাতের খেজুর, যার বড় রপ্তানিকারক দেশ ইরাক। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম। আর সামর্থ্যবানেরা আজওয়া, আম্বার, মরিয়ম ইত্যাদি খেজুর বেশি ক্রয় করে। এসব উচ্চমূল্যের খেজুরের জন্য সৌদি আরবসহ অল্প কয়েকটি আরব দেশ সুপরিচিত।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ অনেক আগেই খেজুরের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। এখন সময় থাকতেই এগুলোর শুল্ক ও কর কয়েক মাসের জন্য তুলে দিয়ে ব্যাপক আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে। শুল্কছাড়ের সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছেন কি না, তা-ও কঠোর মনিটরিং করতে হবে।
বাজার পরিস্থিতি, ক্রেতারা চাপে
২০২২ সাল পর্যন্ত নিম্ন আয়ের মানুষ ১০০ টাকা কেজিতে খেজুর খেতে পারত; যা বর্তমান বাজারে ২৫০-৫০০ টাকার বেশি। কিন্তু পরে হঠাৎ ট্যারিফ ভ্যালুর ও শুল্ক বাড়ার কারণে দাম বাড়তেই থাকে।
টিসিবির তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে বাজারে খেজুরের দাম ৭-১৫ শতাংশ বেড়েছে। আর রমজানের সাড়ে তিন মাস আগেই খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। উচ্চমানের খেজুর; যেমন আজওয়া, মরিয়ম, আম্বার, বর্তমানে ১২০০-১৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৫০০-৯০০ টাকার মধ্যে। গত রমজানের আগে খেজুরের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দাম বেঁধে দেয় সরকার। তখন অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদী খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই দামে খেজুর বাজারে মেলেনি। মালিবাগ বাজারের ক্রেতা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, খেজুর বিলাসী পণ্য নয়। দাম বাড়ায় নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও চাপে পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রস্তাব
যদি বর্তমান অবস্থায় শুল্কহার এবং ট্যারিফ ভ্যালু বহাল থাকে, তবে আগামী রমজানে খেজুরের চাহিদা পূরণে বড় সংকট তৈরি হবে। তখন পুরোনো এবং নিম্নমানের খেজুর নিয়েই কাড়াকাড়ি হতে পারে। আশঙ্কা প্রকাশ করে এরই মধ্যে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালু কমানো এবং শুল্কহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন। তাঁরা বলছেন, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে তার সুফল রমজানে মিলবে না। কারণ, জাহাজীকরণের পরও বিভিন্ন সোর্স থেকে খেজুর আসতে ৬০ দিন লেগে যায়। সব মিলিয়ে আমদানির জন্য তিন মাস হাতে রাখতে হয়। মার্চের শুরুতে রমজান শুরু হলে হাতে আছে মাত্র সাড়ে তিন মাস। এ ছাড়া উৎপাদনকারী দেশগুলোতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর খেজুরের মৌসুম থাকে। দামও কম থাকে। এ সময় আমদানি না করতে পারলে দাম বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুদ্দীন আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সরকারকে শুল্ক কমানোর এবং ট্যারিফ ভ্যালু যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেছি। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে রমজানে খেজুরের দাম সহনীয় রাখা সম্ভব।’
পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘ট্যারিফ ভ্যালু দুই স্ল্যাবে নির্ধারণ করা উচিত। নিম্নমানের খেজুরের ক্ষেত্রে ৮০০-৯০০ ডলার এবং ভালো মানের ক্ষেত্রে ১৮০০-২০০০ ডলার হওয়া যৌক্তিক। শুল্কহার ২০ শতাংশে নামালে সরকার, ব্যবসায়ী, ক্রেতা—সবাই উপকৃত হবেন।
কী করছে সরকার
সরকারি সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রস্তাব নিয়ে তা যাচাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়েছে। বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালুকে ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি মনে করছে ট্যারিফ কমিশনও। এমনকি খেজুর আমদানির ওপর আরোপিত অগ্রিম ও আগাম কর যৌক্তিক নয় বলে জানানো হয়েছে। তাই সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দাম কমাতে আরোপিত শুল্কায়ন মূল্য যৌক্তিক করা, শুল্কহারে ছাড় দেওয়া ও সমুদয় অগ্রিম প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে সরকারের কাছে।
কমিশনের উপপ্রধান (বাণিজ্য নীতি) মাহমুদুল হাসান এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এতে ভোক্তা, সরকার ও ব্যবসায়ী—সবাই স্বস্তি পাবে।’
অগ্রগতি কত দূর জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক নীতি) মুকিতুল হাসান বলেন, ‘আমরা খেজুরের শুল্ক ও শুল্কায়ন মূল্য নিয়ে এরই মধ্যে একটা পর্যালোচনাসহ খেজুরের আমদানিতে নীতিগতভাবে কী পরিমাণ ছাড় দেওয়া যায়, তার একটা সারাংশ তৈরি করা হয়েছে। দ্রুতই সরকার এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গায়ানা, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর নেতৃত্বে ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোতে তেলের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইইএ–এর পূর্বাভাস অনুসারে, অ–ওপেক দেশগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন ১৫ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পথে রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেট্যালি এমএসএমই সম্মাননা পেয়েছেন ২৫ উদ্যোক্তা। বাংলাদেশে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এমএসএমই) ইকোসিস্টেমে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেদরপতনের কারণে দেশের পুঁজিবাজার আরও বেশি বিনিয়োগযোগ্য বা উপযোগী হয়েছে উঠেছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিন সূচক বাড়লেও দাম কমেছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। এ কারণে বিদায়ী সপ্তাহে সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিইরেশিও) কমেছে ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
৪ ঘণ্টা আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্য ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব কেমন হবে? এটি ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদারীকরণ যুগের অবসান ঘটাবে নাকি...
১৬ ঘণ্টা আগে