শাহ আলম খান ও মাহফুজুল ইসলাম
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের বেশি সময় শাসনের শেষ দিকে নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। আর্থিক খাতে নানা লুটপাটের কথা ফিরতে থাকে মুখে মুখে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার। গঠন করা হয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সেই কমিটি তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে। আজ রোববার তারা প্রতিবেদন জমা দেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে। আগামীকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে জনসাধারণের কাছে নিজেদের অনুসন্ধান-বিশ্লেষণ তুলে ধরবে কমিটি। তখন জানা যাবে, কোথায় কতটুকু লুটপাট হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল।
তবে তার আগেই শ্বেতপত্র প্রণয়নকাজে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনে কী থাকছে, তা জানা গেছে কিছু কিছু। সূত্রমতে, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা’ শীর্ষক ২৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি ২২টি অধ্যায়ে সাজানো। সারসংক্ষেপে দেশের আর্থিক খাত দীর্ঘদিন ধরে কিছু আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের যোগসাজশে বিশৃঙ্খলার শিকার বলে তথ্য উঠে এসেছে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত দুর্বলতাগুলো এ সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। একসময় ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন হোটেলে বসে সুদহার নির্ধারণ করত, যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দ্বিধায় মেনে নিত। এ ধরনের দুর্বলতার কারণে বিগত ১৫ বছরে ঋণখেলাপির হার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতির নতুন মাত্রা।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে জানান, দেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে ২২টি ইস্যুতে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির প্রকৃত অবস্থা কী, সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। সমস্যাগুলো কোন জায়গায় তা বলেছেন, উত্তরণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেসবও সুপারিশ আকারে শ্বেতপত্রে উঠে আসবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্রটিকে গভীরভাবে বিবেচনা করবে, আমরা যেসব পরামর্শ দিয়েছি, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। বেশ কিছু উদ্যোগ ইতিমধ্যে সরকার গ্রহণ করেছে। সেসব কমিটিকেও সরকার কাজে ব্যবহার করবে বলে আমরা আশা করি।’
বেসরকারি আর্থিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে গত ২৮ আগস্ট ১২ সদস্যের এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বহিঃখাত (আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, এফডিআই, রিজার্ভ ও বিদেশি ঋণ), ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যু এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয় কমিটিকে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ১৫ বছরে বাংলাদেশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার হিসাবে প্রায় ১ দশমিক ৬১ থেকে ২ দশমিক ৮ লাখ কোটি টাকাই অপচয় হয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের চাঁদাবাজি ও ঘুষ-বাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। এতে রাষ্ট্রকে এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ওই সময়ে ভারতীয় সরকারের সঙ্গে যেসব লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) প্রকল্প করা হয়েছে, সেগুলো ছিল জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির পর্যবেক্ষণ বলছে, প্রকল্পগুলোতে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ সুরক্ষা হয়নি। ১৫ বছরে তিনটি এলওসিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ, জ্বালানি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতে এ পর্যন্ত ৩৬টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে; বাস্তবায়নাধীন ৮টি। বাকি প্রকল্পগুলো পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ কিংবা প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। ভারত ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনটি এলওসিতে বাংলাদেশকে মোট ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কাঙ্ক্ষিত হারে অর্থ ছাড় হয়নি। সর্বশেষ হিসাবে সব মিলিয়ে ছাড় হয়েছে মাত্র ১৮০ কোটি ডলার। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বড় পরিসরে অদক্ষতা এবং আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, যা শুধু অর্থনৈতিক অপচয়ই নয়; বরং দেশের সার্বিক উন্নয়ন কাঠামোকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির তথ্যমতে, অভ্যন্তরীণ উৎস খাত হিসেবে ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে ব্যাংক খাতে। এ সময়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে বের করে নেওয়া হয় এসব অর্থ। প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সময় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়া ঋণ এবং ঋণের অপব্যবহারের ঘটনাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সহায়তায় কিছু গোষ্ঠীর ব্যাংক দখল এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে পারে।
একটি সূত্র জানায়, প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণে ঋণখেলাপি হওয়ার পরও সেগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করতে বাধা দিয়েছিল। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন। প্রতিবেদনের একটি অংশে এ বিষয় উল্লেখ থাকবে।
সূত্রমতে, প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত সরকার ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিসংখ্যান গোপন করেছিল। দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়নি; বরং তথ্যকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার দরুন ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ থাকছে প্রতিবেদনে।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকের হিসাবে এই ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ আট লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করতে পারে। কমিটির অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, ব্যাংক খাত থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থের একটি বড় অংশ পাচার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১৫ বছরে দেশ থেকে নির্বিঘ্নে প্রতিবছর প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও মিলেমিশে মহালুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। একই সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই লুটপাট হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ এই টাকা নিয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এসব কেন্দ্রের বেশির ভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বড় পরিসরে দুর্নীতির অভিযোগ চিহ্নিত করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সূত্রমতে, প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এ সময়ে বাস্তবায়িত ২২টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা ২৫ হাজার কোটি টাকার বড় অংশ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশে অর্থ অপচয় ও লুটপাটের প্রমাণ মিলেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দেখেছে, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং হিসাববহির্ভূত লেনদেন হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের বেশি সময় শাসনের শেষ দিকে নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। আর্থিক খাতে নানা লুটপাটের কথা ফিরতে থাকে মুখে মুখে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার। গঠন করা হয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সেই কমিটি তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে। আজ রোববার তারা প্রতিবেদন জমা দেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে। আগামীকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে জনসাধারণের কাছে নিজেদের অনুসন্ধান-বিশ্লেষণ তুলে ধরবে কমিটি। তখন জানা যাবে, কোথায় কতটুকু লুটপাট হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল।
তবে তার আগেই শ্বেতপত্র প্রণয়নকাজে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনে কী থাকছে, তা জানা গেছে কিছু কিছু। সূত্রমতে, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা’ শীর্ষক ২৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি ২২টি অধ্যায়ে সাজানো। সারসংক্ষেপে দেশের আর্থিক খাত দীর্ঘদিন ধরে কিছু আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের যোগসাজশে বিশৃঙ্খলার শিকার বলে তথ্য উঠে এসেছে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত দুর্বলতাগুলো এ সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। একসময় ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন হোটেলে বসে সুদহার নির্ধারণ করত, যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দ্বিধায় মেনে নিত। এ ধরনের দুর্বলতার কারণে বিগত ১৫ বছরে ঋণখেলাপির হার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতির নতুন মাত্রা।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে জানান, দেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে ২২টি ইস্যুতে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির প্রকৃত অবস্থা কী, সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। সমস্যাগুলো কোন জায়গায় তা বলেছেন, উত্তরণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেসবও সুপারিশ আকারে শ্বেতপত্রে উঠে আসবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্রটিকে গভীরভাবে বিবেচনা করবে, আমরা যেসব পরামর্শ দিয়েছি, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। বেশ কিছু উদ্যোগ ইতিমধ্যে সরকার গ্রহণ করেছে। সেসব কমিটিকেও সরকার কাজে ব্যবহার করবে বলে আমরা আশা করি।’
বেসরকারি আর্থিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে গত ২৮ আগস্ট ১২ সদস্যের এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বহিঃখাত (আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, এফডিআই, রিজার্ভ ও বিদেশি ঋণ), ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যু এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয় কমিটিকে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ১৫ বছরে বাংলাদেশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার হিসাবে প্রায় ১ দশমিক ৬১ থেকে ২ দশমিক ৮ লাখ কোটি টাকাই অপচয় হয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের চাঁদাবাজি ও ঘুষ-বাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। এতে রাষ্ট্রকে এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ওই সময়ে ভারতীয় সরকারের সঙ্গে যেসব লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) প্রকল্প করা হয়েছে, সেগুলো ছিল জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির পর্যবেক্ষণ বলছে, প্রকল্পগুলোতে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ সুরক্ষা হয়নি। ১৫ বছরে তিনটি এলওসিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ, জ্বালানি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতে এ পর্যন্ত ৩৬টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে; বাস্তবায়নাধীন ৮টি। বাকি প্রকল্পগুলো পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ কিংবা প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। ভারত ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনটি এলওসিতে বাংলাদেশকে মোট ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কাঙ্ক্ষিত হারে অর্থ ছাড় হয়নি। সর্বশেষ হিসাবে সব মিলিয়ে ছাড় হয়েছে মাত্র ১৮০ কোটি ডলার। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বড় পরিসরে অদক্ষতা এবং আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, যা শুধু অর্থনৈতিক অপচয়ই নয়; বরং দেশের সার্বিক উন্নয়ন কাঠামোকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির তথ্যমতে, অভ্যন্তরীণ উৎস খাত হিসেবে ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে ব্যাংক খাতে। এ সময়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে বের করে নেওয়া হয় এসব অর্থ। প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সময় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়া ঋণ এবং ঋণের অপব্যবহারের ঘটনাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সহায়তায় কিছু গোষ্ঠীর ব্যাংক দখল এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে পারে।
একটি সূত্র জানায়, প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণে ঋণখেলাপি হওয়ার পরও সেগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করতে বাধা দিয়েছিল। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন। প্রতিবেদনের একটি অংশে এ বিষয় উল্লেখ থাকবে।
সূত্রমতে, প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত সরকার ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিসংখ্যান গোপন করেছিল। দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়নি; বরং তথ্যকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার দরুন ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ থাকছে প্রতিবেদনে।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকের হিসাবে এই ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ আট লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করতে পারে। কমিটির অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, ব্যাংক খাত থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থের একটি বড় অংশ পাচার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১৫ বছরে দেশ থেকে নির্বিঘ্নে প্রতিবছর প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও মিলেমিশে মহালুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। একই সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই লুটপাট হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ এই টাকা নিয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এসব কেন্দ্রের বেশির ভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বড় পরিসরে দুর্নীতির অভিযোগ চিহ্নিত করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সূত্রমতে, প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এ সময়ে বাস্তবায়িত ২২টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা ২৫ হাজার কোটি টাকার বড় অংশ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশে অর্থ অপচয় ও লুটপাটের প্রমাণ মিলেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দেখেছে, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং হিসাববহির্ভূত লেনদেন হয়েছে।
ভবিষ্যৎ আয়ের এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার হলো বিমা—যাকে সংকটকালে নির্ভেজাল এক বিশ্বস্ত সঙ্গী বলা যায়। বিশ্বজুড়ে তাই বিমার প্রতি মানুষের আকর্ষণ যেন অদম্য স্রোতের মতো ক্রমাগত বাড়ছে। অথচ এই ঢেউ বাংলাদেশে...
৩ ঘণ্টা আগে‘মিডিয়াকম ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২৫’-এর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪। আজ শনিবার গুলশান-২-এ অবস্থিত মিডিয়াকমের নিজস্ব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে এই গণমাধ্যম।
৬ ঘণ্টা আগেএনআরবি ব্যাংক পিএলসির বার্ষিক ব্যবসা পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
৬ ঘণ্টা আগেসাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি ব্যবসায়িক অবস্থান মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে ‘বিজনেস পলিসি ও প্ল্যানিং কনফারেন্স-২০২৫’-এর আয়োজন করেছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসাইনের সভাপতিত্বে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানেরা, শাখাপ্রধানেরা, সব উপশাখা এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউন
৬ ঘণ্টা আগে