Ajker Patrika

রপ্তানিতে হঠাৎ ২০.৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

  • যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে ক্রয়াদেশ বাড়ছে।
  • কমেছে শ্রমিক অসন্তোষ।
  • রপ্তানি পণ্যের দাম ও পরিমাণ—দুটিই বেড়েছে।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাসে বা অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি খাতের আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর আগে সেপ্টেম্বরেও ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। দেশে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ঘাটতি, ডলার-সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, শ্রমিক অসন্তোষ ও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে যখন কারখানার নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত; তখন রপ্তানি আয়ে ধারাবাহিক এই প্রবৃদ্ধির খবর নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য দারুণ উদ্দীপক বার্তা বটে।

এই সময় কৃষি, ওষুধ, পোশাক, সিরামিক, চামড়াসহ পণ্য রপ্তানির ২৭ খাতের মধ্যে ১৯টিই বেড়েছে; অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে রপ্তানি আয় এসেছে ৪১৩ কোটি মার্কিন ডলার; যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৩৪২ কোটি ডলার। অর্থাৎ অক্টোবরে ৭১ কোটি ডলার রপ্তানি আয় বেড়েছে; যা শতাংশ হিসাবে ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই বাড়ল রপ্তানি আয়।

তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ প্রবৃদ্ধির টেকসইতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই সঙ্গে দাবি করেছেন, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয়ে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এত শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির জন্য কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি এবং এটি টিকবে কি না সন্দেহ আছে।’ তবে এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করার সময় হয়নি বলেও জানান তিনি।

  1. এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসের রপ্তানি আয়ে মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। মোট রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪২৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের চার মাসে আয় বেড়েছে ১৫৪ কোটি ডলার।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক খাত বড় ধরনের অস্থিরতা দেখেছে। ক্রেতারা ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের অনেক অর্ডার প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে চলে গেছে। তদুপরি দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক রপ্তানি অর্ডার আটকে ছিল। অক্টোবরে সেগুলো পাঠানো হয়েছে; যা রপ্তানি আয়ের পালে বাড়তি হাওয়া ঢেলেছে।

মাসওয়ারি রপ্তানি আয় নিয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অক্টোবরে ফুটওয়্যার-জাতীয় পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৪০ শতাংশ, সিরামিক, পরচুলা এবং মানুষের চুল রপ্তানি বেড়েছে ৩০ ও ২৮ শতাংশ। রপ্তানিতে যে কয়েকটি খাত বড় অবদান রাখে, পোশাক খাত তার শীর্ষে। অক্টোবরে এই খাতের পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

প্রসাধনীর-বাজার

সার্বিক বিষয়ে ইপিবির পলিসি অ্যান্ড প্ল্যানিং বিভাগের পরিচালক আবু মোখলেস আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই প্রবৃদ্ধি শুধু টাকায় নয়, রপ্তানির পরিমাণের দিক থেকেও বেড়েছে; বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাকের বড় ক্রেতাদেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে সার্বিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। সেখানে ডেনিম, কটন, নন-কটন—সব পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। এগুলো রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

অক্টোবরে অর্ধেকের বেশি আয় এসেছে পোশাক খাত থেকে। মোট রপ্তানি হয় ৩২৯ কোটি ৬৪ লাখ ডলার; যা আগের বছরের একই সময় ছিল ২৬৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। আর চার মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়, অন্যান্য দেশের তুলনায় তার দাম কম। বিদেশি ক্রেতারা বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে এত দিন ভোগ-ব্যবহার কমিয়ে ছিল। এখন প্রয়োজন বিবেচনায় কেনাকাটায় বাধ্য হচ্ছে। সেখানে কম দামের বাংলাদেশি পণ্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলেই রপ্তানি আয়ে এই প্রবৃদ্ধি বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত