খুচরায় ওষুধের বর্ধিত ভ্যাট ক্রেতার ঘাড়ে

  • স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বেড়ে ৩ শতাংশ।
  • সব দোকানে রেকর্ড না থাকায় জটিলতার শঙ্কা।
  • আদায়ের প্রক্রিয়া কী হবে, এখনো ঠিক হয়নি।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ৫৯
Thumbnail image

গত বছর খুচরা পর্যায়ে কয়েক দফায় বিভিন্ন ওষুধের দাম বাড়িয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ওষুধভেদে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এবার সরকার ওষুধের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়াল। স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাড়তি এই ভ্যাটও যাবে ক্রেতার পকেট থেকে। ওষুধের দামও আরেক দফা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৯ জানুয়ারি যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তার মধ্যে ওষুধও রয়েছে। অধ্যাদেশে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ওষুধের ওপর ভ্যাট ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাট বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, যা ৯ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হয়েছে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায় বলতে ওষুধের দোকানগুলোকে বোঝানো হয়েছে। পণ্য পর্যায়ে বলা হলে উৎপাদক পর্যায়ের ভ্যাট বাড়ত। বর্ধিত ভ্যাট স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্রেতার কাছ থেকেই আদায় করবেন। সরকার সব স্থানীয় ব্যবসায়ীকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বরের (বিন) আওতায় আনতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এ জন্য স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং বিক্রির হিসাবের জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের অর্থ খরচ হবে। ফলে তাঁরা বর্ধিত ভ্যাটের চাপ ক্রেতার কাঁধেই ফেলবেন।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত কয়েক দফায় বিভিন্ন ওষুধের দাম বাড়ায় উৎপাদকেরা। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ জীবনরক্ষাকারী প্রায় অর্ধশত ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। ভোক্তার স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ওই দাম বাড়ানোর অনুমোদন দেয় সরকারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অধিদপ্তর তখন আজকের পত্রিকাকে বলেছিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একই পণ্যের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এই পদক্ষেপে কোনো কোনো ওষুধের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়তে পারে।

৯ জানুয়ারি বাড়ানো ভ্যাট আদায় নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। তিনি জানান, যেসব ওষুধের দোকানে (ফার্মেসি) বিক্রির তথ্য সংরক্ষিত থাকে, তারা সহজেই বর্ধিত ভ্যাট দিতে পারবে।

কিন্তু খুচরা পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ী বিক্রির তথ্য সংরক্ষণ করেন না। তাঁরা এই মূসক দিতে গিয়ে জটিলতায় পড়বেন। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্য কিনতে দামাদামি করার সুযোগ থাকলেও ওষুধ কিনতে হয় ওষুধের গায়ে লেখা দামে। বিক্রেতা উল্লেখিত দামের সঙ্গে ভ্যাট যোগ করে টাকা দাবি করলে ক্রেতার সঙ্গে ঝামেলা বাধার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীকে বাড়তি ভ্যাট দিতে হলে তা ক্রেতার কাছ থেকেই আদায় করবেন।

অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, সরকার অর্থ সংকটে রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সাধারণত কর বাড়ানো, অতিরিক্ত টাকা ছাপানো, ঋণ নেওয়া ও ভ্যাট বাড়ানো হয়। কিন্তু সরকার কর বাড়াতে পারছে না। জরুরি মুহূর্ত ছাড়া অতিরিক্ত টাকা ছাপালে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। আগের সরকার যে অবস্থানে রেখে গেছে, তাতে দাতা সংস্থার কাছ থেকে এই সরকার ঋণও পাবে না। সর্বশেষ উপায় হিসেবে সরকারকে ভ্যাট বাড়াতে হচ্ছে। ওষুধে বর্ধিত ভ্যাট ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হবে বলে চিকিৎসার ব্যয় বাড়ায় বেশি চাপে পড়বে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ।

ওষুধের ওপর বর্ধিত ভ্যাট কীভাবে আদায় হবে তা মূলত ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নির্ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘অধ্যাদেশ গত বৃহস্পতিবার জারি হয়েছে। এখন এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। হয়তো ওষুধের মোড়কে আলাদা সিল দিয়ে এই ভ্যাট যুক্ত করা হবে। ভ্যাট ক্রেতাদের কাছ থেকেই নেওয়া হয়। তবে কীভাবে এই ভ্যাট যুক্ত করা হবে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা আমাদের জানাবে। ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আগে কিছু জানানো হয়নি।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশীয় চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ ইউরোপ, আমেরিকা অঞ্চলসহ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদিত রপ্তানি আয় ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। দেশে ২২৯টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসহ ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক ও হারবাল ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭৩৩টি। অ্যালোপ্যাথিকের প্রায় ৩ হাজার জেনেরিকের ৩৭ হাজার ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে দেশে। রপ্তানি ও স্থানীয় মিলিয়ে দেশীয় ওষুধের বাজার প্রায় ৪০ কোটি টাকার।

বাড়তি ভ্যাট আরোপের বিষয়ে জানতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন ও ড. মো. আকতার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা বক্তব্য দিতে অপারগতা জানান। তাঁরা জানান, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা তাঁরা জানেন না।

স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের ওপর নতুন ভ্যাট হার বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন ও ডা. মো. আকতার হোসেন। তাঁরা এ বিষয়ে আর কিছু জানাতে অপারগতা জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিউলিপের পদত্যাগপত্রের জবাবে যা লিখলেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার

সংবিধানের অস্তিত্ব নেই, প্রোক্লেমেশন না হলে বিপদ: বিচারপতি আব্দুর রহমান

পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন টিউলিপ সিদ্দিক

টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন

কার্যালয় থেকে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি সরানোর ব্যাখ্যা দিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত