আইকাও সিলভার সনদ পেল সিভিল এভিয়েশন একাডেমি

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
Thumbnail image

গত ২৯ এপ্রিল থেকে ০২ মে পর্যন্ত ডমিনিকান রিপাবলিকের পুন্টাকানায় আইক্যাও গ্লোবাল ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট সিম্পোজিয়াম (জিআইএসএস) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সিম্পোজিয়ামের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল অপটিমাইজিং অ্যাভিয়েশন ক্যাপাসিটি, স্ট্র্যাটেজিক ফর সেফ স্কাই ও সাসটেইনেবল ফিউচার। যার মাধ্যমে আইকাও তার সদস্য রাষ্ট্রের সিভিল অ্যাভিয়েশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ আকাশভ্রমণ নিশ্চিতে অঙ্গীকার করেছে। 

এ সিম্পোজিয়ামে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমিকে ব্রোঞ্জ ক্যাটাগরি থেকে সিলভার ক্যাটাগরিতে উন্নীত করেছে আইকাও। আইকাওয়ের মানদণ্ড বজায় রেখে গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানোন্নয়নে কাজ করায় এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর অ্যাভিয়েশন খাতের দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরিতে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন আইকাও এর সক্রিয় সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সিম্পোজিয়ামে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন এয়ার কমডোর শাহ কাওছার আহমেদ চৌধুরী ও পরিচালক সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমি জনাব প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী অংশগ্রহণ করেন। 

উক্ত সিম্পোজিয়ামে আইকাও সদস্যভুক্ত ২০টি দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিবর্গ, প্রায় শতাধিক দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন সংস্থার প্রধান নির্বাহীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য এ সিম্পোজিয়ামে বিভিন্ন দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন মন্ত্রী বর্গের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত রাউন্ড টেবিল বৈঠকে ‘বিল্ডিং ক্যাপাসিটি টু অ্যাচিভ ওন ইফেক্টিভ অ্যান্ড সাসটেইনেবল এয়ার ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ফর ফিউচার’ বিষয়ক আলোচনা ও সদস্য রাষ্ট্রের করণীয় নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ৪ দিনের এ সিম্পোজিয়ামে ৭টি প্যানেল সভা, ৩০টির অধিক দ্বিপক্ষীয় সভা, ট্রেইন এয়ার প্লাসের আইকাও ট্রেনিং বিষয়ক দুটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। 

সিম্পোজিয়ামের প্রথম দিনে আইকাও ট্রেইন এয়ার প্লাস সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রের সিভিল অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং সংস্থাসমূহের স্টিয়ারিং কমিটি মিটিং-আইকাও, আইএসডি কোয়ালিফিকেশন ইনস্ট্রাক্টর, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ট্রেনিং নিডস কার্স সিডিউল, গ্লোবাল অ্যাভিয়েশন স্কিল গ্যাপ, অ্যাভিয়েশন সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, এআইয়ের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। 

হাই লেভেল প্যানেল ডিসকাশনে বিশ্বব্যাপী অ্যাভিয়েশন থ্রি ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য আইকাও-এর বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—বিদ্যমান অ্যাভিয়েশন ফ্রেমওয়ার্কে নিরাপদ অ্যাডভান্সড এয়ার মোবিলিটি নিশ্চিত করা, সংকটের মুখে কার্যকরী বিমান চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলা, অ্যাভিয়েশন প্রশিক্ষণে নতুন প্রযুক্তির বিমান পরিবহন প্রভাব নিয়ে কাজ করা, মাঝ আকাশ উড়োজাহাজের সাইবার নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখা, ভবিষ্যতে বিমান চালনার কর্মশক্তি, গতিশীলতা এবং সক্ষমতা নিয়ে কাজ করা, বিমানবন্দরের উদ্ভাবন এবং স্থায়িত্বের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা, আইকাওয়ের ফাইনভেস্ট হাবের কৌশলগত স্থাপত্যের গভীরে ডুব দেওয়া, বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এলটিএজি বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

সিম্পোজিয়াম এ আইকাও সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে বেবিচক এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, হোয়ান কার্লোস সালাজারকে দ্বিতীয় মেয়াদে আইকাও-এর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে পুনরায় নিয়োগ পাওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ হতে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। উল্লেখ্য, আইকাও সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশে সিভিল অ্যাভিয়েশন কার্যক্রমের কলেবর বৃদ্ধি ও নিরাপদ যাত্রী সেবায় গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি আইকাও সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন। বেবিচক চেয়ারম্যান, ডমিনিকান রিপাবলিকের সিভিল অ্যাভিয়েশন এর ডিরেক্টর জেনারেলসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন প্রধানদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, আকাশ যোগাযোগ উন্নয়ন ও ভবিষ্যতে আইকাও কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভে বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র সমূহের সমর্থন লাভের বিষয়ে আলোচনা করেন। আইকাও এর এই আয়োজন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। 

উল্লেখ্য, আইকাও এর টেকনিক্যাল কো-অপারেশন ব্যুরো (টিসিবি) পুনর্গঠিত হয়ে ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশনে (সিডিআই) রূপান্তরের প্রেক্ষিতে বেবিচক ও আইকাও এর মধ্যে বিদ্যমান আইকাও সেক্রেটারি জেনারেল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসএ) পুনরায় স্বাক্ষরিত হয়। বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ও আইকাও এর সেক্রেটারি জেনারেল জুয়ান কার্লোস সালাজার উক্ত এমএসএ স্বাক্ষর করেন। 

উক্ত সিম্পোজিয়াম সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমির উন্নয়নকল্পে আইকাও এর গ্লোবাল অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং (জিএটি )-এর সঙ্গে বেবিচকের বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমির পরিচালক জনাব প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী আইকাও আইএসডি সার্টিফায়েড ইনস্ট্রাক্টর সনদ লাভ করেন। আইকাও জিএটির প্রধান মিস লরা ক্যামাস্ট্রা এ সনদ প্রদান করেন। এর ফলে বাংলাদেশি প্রশিক্ষক দেশে-বিদেশে আইকাও প্রণীত আন্তর্জাতিক অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। 

উল্লেখ্য, সিম্পোজিয়ামে সাইড মিটিংয়ে বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি ওভারসাইট কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আইকাও স্টান্ডার্ড বজায় রাখার জন্য আইকাও এর সিডিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার জন্য উভয় পক্ষ সম্মত হয়। বেবিচকের সেফটি ওভারসাইট কার্যক্রমে নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের কর্মদক্ষতা ও মানোন্নয়নে আইকাও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের কর্মসূচিও প্রদান করে। 

চলতি বছরের ১ মে সিম্পোজিয়ামে এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানে আইকাওয়ের প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি জেনারেল সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমির আইকাও ট্রেইন এয়ার প্লাস পদক বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের নিকট হস্তান্তর করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন পরিমণ্ডলে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমির আইকাও ট্রেইন এয়ার প্লাস পদক অ্যাভিয়েশন প্রশিক্ষণ খাতে বেবিচকের এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত