শ্রেণীকরণে দুর্বলতা: পুঁজিবাজারে খারাপ কোম্পানিও ভালোর সুবিধা নেয়

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ০১
Thumbnail image

পুঁজিবাজারে বিভিন্ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ৪০০। সব কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা এক নয়। এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের মুনাফাও তাই সমান হয় না। সাধারণত তালিকাভুক্ত হওয়ার পর বিদ্যমান নিয়মে কে কত লভ্যাংশ দিল, তার ওপর ভিত্তি করে পুঁজিবাজারে অবস্থান শ্রেণীকরণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দিলে ‘এ’, ১০ শতাংশের কম দিলে ‘বি’ এবং কোনো লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সম্প্রতি দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে চলে আসা এই নিয়মের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা দাবি করছেন, প্রচলিত এই নিয়মে যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। ফলে শ্রেণীকরণ করা কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা এতে সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে ওঠে না। একই কারণে অনেক দুর্বল কোম্পানিও ভালো কোম্পানির সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। এতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে আর্থিকভাবে অনেক দুর্বল কোম্পানিও মৌলভিত্তিসম্পন্ন ভালো কোম্পানির সঙ্গে একই শ্রেণিতে অবস্থানের সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছে। এমনকি দুর্বল কোম্পানি ভালো কোম্পানির ওপরের শ্রেণিতেও জায়গা করে নিচ্ছে। এভাবে খারাপ শেয়ারে বিনিয়োগের জন্যও মার্জিন ঋণসুবিধা মিলছে। ফলে খারাপ শেয়ারের বিনিয়োগ বাড়ছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারের জন্য অশনিসংকেত।

এ পরিস্থিতিতে লভ্যাংশের ভিত্তিতে কোম্পানির শেয়ার শ্রেণিবদ্ধ করার পদ্ধতি সংস্কারের জোরালো আওয়াজ তুলেছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের ওই অংশ। একই সঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন এই শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে কোম্পানির ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা, মূলধনের আকারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার। পাশাপাশি শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণের জন্য পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশেকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ, বি, জেড শ্রেণির পরিবর্তে কোম্পানিগুলোকে বড় মূলধনি, মাঝারি মূলধনি এবং স্বল্প মূলধনি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে; যা থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো শেয়ারের ধারণা পাবেন।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, লভ্যাংশের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণি নির্ধারণের মতো বাজারের এ রকম অনেক বাস্তবতাবিবর্জিত নিয়ম, আইন, রেগুলেশন, ডিরেক্টিভ ইত্যাদি আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করতে হবে।

অসংগতির বড় উদাহরণ হলো রবি আজিয়াটা ও জাহিন স্পিনিং। ২০২৩ সালের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণের আগে বহুজাতিক কোম্পানি রবি ছিল বি শ্রেণিতে। বিপরীতে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে একই শ্রেণি ধরে রেখেছিল জাহিন স্পিনিং।

অথচ আর্থিক সক্ষমতায় রবির তুলনায় যোজন যোজন পিছিয়ে জাহিন স্পিনিং। যদিও রবির আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হিসাবমান অনুসরণ করা হয়। বিপরীতে জাহিন স্পিনিংয়ের আর্থিক হিসাবে রয়েছে বিভিন্ন অসংগতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত