Ajker Patrika

চীনের সস্তা ইস্পাতে দেশীয় শিল্পে রক্তক্ষরণ, রপ্তানিকারক ভারত এখন আমদানিকারক

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৬
চীনের সস্তা ইস্পাত বাজারে ঢুকে পড়ায় ভারতের নিজস্ব ইস্পাত উৎপাদন কমে যেতে শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত
চীনের সস্তা ইস্পাত বাজারে ঢুকে পড়ায় ভারতের নিজস্ব ইস্পাত উৎপাদন কমে যেতে শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের নির্মাণ খাতের উত্থান, ঝাঁ তকতকে সুউচ্চ ভবন এবং বহু লেন বিশিষ্ট মহাসড়কের ব্যাপক বৃদ্ধির সময়ে দেশটির ঘরোয়া ইস্পাত বিক্রি বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু ভারতের ইস্পাত কারখানাগুলোতে এখন বিপুল পরিমাণ পণ্য পড়ে আছে বিক্রির অপেক্ষায়। সস্তা চীনা ইস্পাতের স্রোত ভারতের ছোট ইস্পাত মিলগুলোকে উৎপাদন কমাতে এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাবতে বাধ্য করছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যারা আমদানি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে।

ভারত এক সময় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক দেশ হিসেবে পরিগণিত হলেও গত অর্থবছরে দেশটি বিপুল পরিমাণ ইস্পাত আমদানি করেছে। যা ভবিষ্যতের অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং ইস্পাতনির্ভর শিল্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নয়া দিল্লিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ভারতের মোট ইস্পাত উৎপাদনের ৪১ শতাংশের জোগান দেয় ছোট এবং মাঝারি আকারের ইস্পাত মিলগুলো। এগুলোতে প্রায় ১৫ লাখের বেশি মানুষ কাজ করে। তবে গত ছয় মাসে এসব মিলের উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে বলে এক ডজনেরও বেশি মিলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পাঞ্জাবের মান্ডি গোবিন্দগড়, যা ‘ইস্পাত সিটি’ নামে পরিচিত—সেখানকার মিলগুলো চীনা আমদানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। চীনা ইস্পাত প্রায়ই ভারতীয় ইস্পাতের তুলনায় ১০ শতাংশ কম দামে বিক্রি হয়।

পাঞ্জাবের ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জোগিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর আদর্শ গর্গ বলেন, ‘যদি আমরা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে না পারি, তাহলে আমাদের কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হব আমরা।’ পণ্যে মূল্যছাড় দিয়েও জোগিন্দ্রা গ্রুপের বিক্রি গত ছয় মাসে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। ফলে উৎপাদনও এক-তৃতীয়াংশ কমাতে হয়েছে বলে জানান গর্গ।

বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার মহাপরিচালক রাজু জন বলেন, ‘নির্মাণ ও প্রকৌশল কোম্পানিগুলো সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য চীনা ইস্পাতের দিকে ঝুঁকছে। চীনা ইস্পাত প্রতি মেট্রিক টনে ২৫ থেকে ৫০ ডলার কম দামে বিক্রি হয়, কখনো কখনো ৭০ ডলার পর্যন্ত কম।’

চীন থেকে সমাপ্ত ইস্পাত আমদানি এই বছর রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে, যা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত হট-রোলড ইস্পাত এবং অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত গ্যালভানাইজড ইস্পাতও রয়েছে। এই আমদানি দেশীয় বিক্রয়কে ধাক্কা দিয়েছে এবং চীনের নিম্ন দামের কারণে ভারতীয় রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে যত ইস্পাত উৎপাদন হয় তার চেয়েও বেশি ইস্পাত একা উৎপাদন করে চীন এবং বিশ্ববাজারে কম দামে ইস্পাত সরবরাহের কারণে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে দেশটির বিরুদ্ধে। এই উৎপাদন ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের আবাসন খাতে সংকটের ফলে অভ্যন্তরীণ নির্মাণ শিল্পে চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিদেশি ইস্পাতের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে, এমনকি শক্তিশালী স্থানীয় শিল্প থাকা দেশগুলোকেও।

ভারতীয় ইস্পাত অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, কম দামে বাড়তে থাকা আমদানি এবং রপ্তানি সুযোগ কমে যাওয়া বর্তমানে ভারতীয় ইস্পাত শিল্পের টিকে থাকার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে মুনাফা মার্জিন ৬৮ শতাংশ থেকে ৯১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ায় ইস্পাত কোম্পানিগুলো সম্প্রসারণ পরিকল্পনা শুরু করতে হিমশিম খাচ্ছে। দামও কমেছে, নির্মাণে ব্যবহৃত হট-রোলড কয়েলের দাম এ বছরের শুরুতে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে।

ছোট ইস্পাত কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বড় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান যেমন জেএসডব্লিউ ইস্পাত এবং টাটা ইস্পাতও উদ্বিগ্ন। তারা চীনা আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য অ্যাসোসিয়েশনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে।

আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া—যা চার থেকে ছয় মাস সময় নিতে পারে—শিল্পের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা এবং পরবর্তী সময়ে সরকারের তদন্তের ওপর নির্ভরশীল। এই তদন্তে নির্ধারণ করা হবে যে, চীনা আমদানি ভারতীয় ইস্পাত মিলগুলোর ক্ষতি করছে কিনা। ভারত ২৫ লাখ কর্মীর এই শিল্পে ব্যাপক ছাঁটাই এড়াতে আগ্রহী। কারণ, দেশের বাড়তে থাকা জনসংখ্যার কর্মসংস্থানে ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশটি।

ভারতের দ্রুত উন্নয়নের জন্য ইস্পাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—নতুন আবাসন প্রকল্প থেকে শুরু করে বিশাল অবকাঠামোগত প্রকল্প পর্যন্ত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বড় অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ইস্পাত কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতের চাহিদা মেটানো যায়।

চীন থেকে আমদানির কারণে ভারতের ইস্পাত মিলগুলো চাপে রয়েছে। উত্তর প্রদেশের গুডলাক ইন্ডিয়া ইস্পাত মিলের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার সাগর যাদব বলেন, ‘জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা যে রপ্তানি আদেশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তা পাইনি কারণ আমরা চীনের সঙ্গে ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় হেরে গেছি।’

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পুনের নিও মেগা ইস্পাত চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে গাড়ি শিল্পের ক্রয়াদেশ হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেদান্ত গোয়েল। আর পশ্চিম মহারাষ্ট্রে ভাগ্যলক্ষ্মী রোলিং মিল রপ্তানিতে তীব্র পতনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিলটির পরিচালক নিতিন কবরা জানিয়েছেন, তিনি আগামী বছরের শুরুতে উৎপাদন কমানোর পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘চীনা আমদানির কারণে আমাদের মুনাফা এবং মনোবল উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাম এতটাই কমে গেছে যে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিসিআইয়ের সাধারণ সভা: ভ্যাট ও করকাঠামো যুক্তিসংগত করার দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ভ্যাট ও করকাঠামোকে আরও যুক্তিসংগত করার দাবি তুলেছে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। পাশাপাশি, সকল শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাহীনভাবে চলতে পারে।

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁরা বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, শিল্পের প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া অত্যাবশ্যক।

সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের উৎপাদনশীল শিল্পকে শক্তিশালী রাখতে সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখা, সুষ্ঠু উৎপাদন ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মসৃণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আয়বৈষম্য কমানো এবং টেকসই এমএসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ ও শিল্পের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য। বিসিআই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে, যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, শিল্প প্রতিযোগিতামূলক থাকে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্যাট ও করকাঠামো সহজ, উদ্যোক্তাবান্ধব ও উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য করেই তৈরি হওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, পণ্য টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উদ্যোক্তাবান্ধব করা, নতুন উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপের সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ দেশীয় শিল্পে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে।

সভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং সাবেক সভাপতি এ টি এম ওয়াজিউল্লাহর জন্য। এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সভা পরিচালনা করেন বিসিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন। সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, বিগত ৩৮তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিসিআই কার্যক্রম ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অডিটেড হিসাব অনুমোদন এবং নতুন অডিটর নিয়োগের বিষয়ও অনুমোদিত হয়। সভায় অংশ নেন বিসিআই সদস্য ও সাবেক নেতা শাহেদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের যে আশঙ্কাজনক উত্থান ঘটেছে, তার সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়ছে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তায়। নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুরক্ষাকাঠামোই কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতি অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাতের সংকট কেবল সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সাধারণ গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার ওপর, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৪টি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিপরীতে এসব ব্যাংক রাখতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এতে সম্মিলিত সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

এক বছর আগের সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা (২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি)। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রবণতা স্বাভাবিক কোনো আর্থিক চক্রের ফল নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে আড়াল করে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রকৃত চিত্র সামনে আসার পরিণতি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পালাবদলের পর ব্যাংকিং খাতে পুনর্গঠিত, পুনঃ তফসিলকৃত, অবলোপনকৃত ও আদালতে আটকে থাকা ঋণসহ মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মোট অঙ্ক প্রায় সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং মন্দমানের কুঋণ ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি মানে সরাসরি আমানতকারীর ঝুঁকি। তাঁর মতে, গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ব্যাংক এমন অবস্থায় আছে, তারা ন্যূনতম সঞ্চিতিও গড়ে তুলতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো প্রভিশন না রাখতে পারলে সেই ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ হওয়া উচিত।

ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণির ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসান শ্রেণির খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, কম আমানত প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আর্থিক সংকটে ব্যাংকগুলোর সেই সক্ষমতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধিই প্রভিশন ঘাটতির মূল কারণ। সরকারের পালাবদলের পর এসব ঝুঁকি প্রকাশ্যে আসায় ব্যাংকিং খাতের ভেতরের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাইনামিক প্রভিশনিং চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এই ডাইনামিক প্রভিশনিং চালু হলে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়বে, মূলধনের চাপ কমবে এবং কুঋণ হ্রাস পেলে প্রভিশন ঘাটতিও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেবিএস হোল্ডিংসের ফ্ল্যাট কিনলে বিশেষ ছাড় পাবেন প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রাইম ব্যাংক পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

সম্প্রতি জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই অংশীদারত্বের আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা পাবেন, যা তাঁদের দেশের প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ আরও সহজলভ্য করবে।

চুক্তিতে প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন মামুর আহমেদ এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল হক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেটস জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. বেলায়েত হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের লাইফস্টাইলভিত্তিক মানসম্পন্ন সেবা ও আর্থিক সমাধান প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুনরায় বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তিনি আম্বার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের টেক্সটাইল শিল্পে একজন উদ্যোক্তা।

গত ২৫ নভেম্বর বিটিএমএর গুলশান কার্যালয়ে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিটিএমএ।

এতে বলা হয়, বিটিএমএর তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্টও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. শামীম ইসলাম, ফ্যাব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. আবুল কালাম ও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট প্রসেসের ক্যাটাগরি থেকে শফিকুল ইসলাম সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত