Ajker Patrika

দিনভর উত্তেজনা, রাতভর অভিযান

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ০৮
দিনভর উত্তেজনা, রাতভর অভিযান

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের আলো। সেই আলোয় এগোচ্ছি।

এর মধ্যে হঠাৎ গুলির শব্দ। প্রথমে একটি-দুটি, তারপর মুহুর্মুহু। সঙ্গে কাঁদানে গ্যাসের শেল আর গ্যাস গ্রেনেডের কানফাটা আওয়াজ। প্রথমে ১০ মিনিট চলল এভাবে। একটু থেমে আরও ২০ মিনিট। গুলি-বোমার সঙ্গে মানুষের গগনবিদারী আওয়াজ। এত গুলি, বোমা আর মানুষের আওয়াজ জন্মেও শুনিনি। এই অবস্থায় এগোনো ঠিক হবে? সহকর্মী মোশতাক আহমেদ প্রশ্নটা (সবার মনের) করেই ফেললেন। হারুন আল রশীদ আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন। আরেকজন কাজী আনিছ—একবার এগোচ্ছেন তো পরক্ষণে পেছাচ্ছেন। আমরা এখন কী করব? আলোচনা করে নষ্ট করার মতো সময় নেই। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম—এগোব, যা থাকে কপালে। পল্টন মোড় থেকে আমরা এগোচ্ছি শাপলা চত্বরের দিকে, যেখানে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী অবস্থান নিয়েছে। আমরা চারজন পথ চলছি সতর্কতার সঙ্গে। এটা ঠিক ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতের ঘটনা। এখন মনে হয়, সেই রাতে আমরা হাঁটছিলাম যেন প্রাণ হাতে নিয়ে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে তখন শাহবাগে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। সেই আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের কর্মসূচি ছিল কথিত নাস্তিক-ব্লগারদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবিতে। সেই দাবিতে ‘ঢাকা অবরোধ’। বিএনপি, এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন সেই কর্মসূচিতে সমর্থন দিল। আর জামায়াতে ইসলামী কৌশলে সক্রিয় থাকল।

হেফাজতের এই কর্মসূচি নিয়ে কয়েক দিন পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছিল। তাতে বলা হলো, হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার চারপাশের ছয়টি প্রবেশপথে অবস্থান নেবে। সেই সব স্থানে সমাবেশ করে আবার ফিরে যাবে। দেশের সব কওমি মাদ্রাসা থেকে ঢাকায় লোক আনার জন্য খবর দেওয়া হলো। ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় বসে হেফাজতের নেতারা এর সমন্বয় করতে শুরু করলেন। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও ধরে নিয়েছিলেন, এটা নিছক সমাবেশের বেশি কিছু হবে না।

কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ মে ভোরে সবার ভুল ভাঙা শুরু হলো। দেখা গেল, ফজরের নামাজের পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার দিকে আসছে। এক শ-দুই শ নয়, হাজারে হাজারে মানুষ ঢাকায় ঢুকছে। বেলা বাড়ার আগেই তারা ঢাকার সব প্রবেশপথ দখল করে নিল। যানবাহন বন্ধ হয়ে গেল। পুলিশ ও সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে অবরোধ তৈরি করল হেফাজতের কর্মীরা। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো, পুরো রাজধানীই যেন হেফাজতের দখলে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে থাকল। হেফাজতের নেতারাও ভাবলেন, শক্তি প্রদর্শনের এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাঁরা ঘোষণা দিলেন, মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবেন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা না দিয়ে পুলিশ যে ভুল করেছে, তা আর তারা করতে চাইল না। মতিঝিলের সমাবেশে পুলিশের সায় নেই। শুরু হলো দফায় দফায় আলোচনা। হেফাজতের নেতারা বারবার বললেন, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ, কোথাও কোনো গোলযোগ হবে না।

আলোচনা চলছে, এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে হেফাজতের মিছিল এল। মিছিলটি পল্টন মোড়ে পুলিশি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চাইল। পুলিশ বাধা দিতেই শুরু হলো সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। ততক্ষণে হেফাজতের অনেক কর্মী মতিঝিল এলাকায় এসে পড়েছে। তারা মতিঝিলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করতে এবং আগুন দিতে শুরু করল। এবার শুধু ঢাকায় নয়, সড়ক অবরোধ করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কে আগুন দিল। পরিস্থিতি এমন, ঢাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যেদিকে তাকাই সব জ্বলছে। হেফাজতের কর্মীদের হাত থেকে নারী সাংবাদিকেরাও রেহাই পেলেন না।

সংঘর্ষের পর তারা মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিল। এবার ঘোষণা দেওয়া হলো, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মতিঝিল ছাড়বে না। কিন্তু পুলিশ ধারণা করেছিল, দিনভর যে তাণ্ডব চলছিল, রাত নামলে তা থেমে যাবে। এ জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দিয়ে কর্মীদের মতিঝিল ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আমির সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে যান। এতে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপরই হেফাজতের কর্মীরা শাপলা চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানের ঘোষণা দেন।

এরপর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেভাবেই হোক রাতের মধ্যে শাপলা চত্বর খালি করতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সে সময় আমাকে বলেছিলেন, ৫ মে রাত ১০টায় পুলিশের সেই সময়ের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার সচিবালয়ের উল্টো দিকে আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে একটি বৈঠক ডাকেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, সব বিভাগের উপকমিশনার, র‍্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তারা বৈঠকে আসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হবে রাত ১২টায়। অভিযানে কে নেতৃত্ব দেবেন? সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। এত বড় অভিযানে নেতৃত্ব নিয়ে সবার মনে অজানা শঙ্কা। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবদুল জলিল মণ্ডল নামে পুলিশের এক অতিরিক্ত কমিশনার বলে ওঠেন, তিনি এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর সাহস দেখে অবাক হয়ে যান বৈঠকে থাকা সবাই।

র‍্যাবের সেই সময়ের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান সেদিন আমাকে বলেছিলেন, প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, তিন দিক থেকে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানো হবে। পরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন দিক থেকে অভিযান চালালে মানুষের সরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে দুই দিক থেকে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। যাত্রাবাড়ীর দিকটা খোলা রাখা হয় হেফাজতের কর্মীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযান চালানো একটি দল যাবে পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা হয়ে, অন্য দলটি যাবে নটর ডেম কলেজের মোড় থেকে। তবে অভিযানের পর হেফাজতের কর্মীরা যাতে বঙ্গভবন, কমলাপুর রেলস্টেশন ও আইসিডিতে হামলা চালাতে না পারে, তাই এসব সড়কের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য খোলা রাখা হবে টিকাটুলী হয়ে যাত্রাবাড়ীমুখী সড়ক।

পরিকল্পনা হয়, সামনে থাকবে র‍্যাব-পুলিশ। পেছনে ভারী অস্ত্র নিয়ে থাকবে বিজিবি। পরিকল্পনামতো রাত ১২টার মধ্যেই র‍্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা রাস্তায় নামতে শুরু করেন। পুরো অভিযান নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে সমন্বয় করেন মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে অভিযানের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা। রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাত ১টায় দুই দিক থেকে এগোতে থাকেন সবাই। আগে র‍্যাব-পুলিশ, পেছনে বিজিবি। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িবহর। সব বাহিনীর সদস্যদের গায়ে বুলেটরোধী পোশাক, হাতে শটগান, গ্যাস নিক্ষেপ করার অস্ত্র আর গ্যাস গ্রেনেড। আছে বিকট শব্দ করে ফেটে যাওয়া সাউন্ড গ্রেনেড, সঙ্গে সাঁজোয়া যান, দাঙ্গা দমনের গাড়ি।

রাত আড়াইটা। মতিঝিল সড়কের আশপাশে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। র‍্যাব-পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড় ছেড়ে যায় সামনের দিকে। শাপলা চত্বরের সামনে একটি ট্রাকের ওপর মাইক বাঁধা। সেই ট্রাকে বসে হেফাজতের নেতারা বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। ট্রাকের নিচে রাস্তার ওপর হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী, তারা মাইকে দেওয়া নির্দেশমতো স্লোগান দিচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ততক্ষণে হেফাজতের সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব আর মাত্র ১৫-২০ গজ। তাঁদের দেখামাত্র শুরু হলো উত্তেজনা, চিৎকার-চেঁচামেচি। মাইকে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে শুরু করলেন হেফাজতের নেতারা। সঙ্গে ভারী স্লোগান। বক্তারা বলেন, জীবন দিয়ে হলেও অবস্থান ধরে রাখবেন। র‍্যাব-পুলিশের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভে হাত নেড়ে, হাতের লাঠি দিয়ে সড়কে আঘাত করে চিৎকার করতে থাকে কর্মীরা।

রাত পৌনে ৩টা। হঠাৎ ঠুসঠাস শব্দ। হেফাজতের কর্মীদের লক্ষ্য করে স্বল্প শব্দের টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ল র‍্যাব-পুলিশ। কিন্তু বিধি বাম। বাতাসে টিয়ার গ্যাসের শেল উল্টো নিজেদের দিকে চলে আসে। দ্রুত পেছন দিকে সরে যান সবাই। এরপর সাত-আট মিনিটের বিরতি।

রাত ৩টা বাজতে না বাজতেই শুরু হয় মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ। হেফাজতের মাইকে তখনো চলছে জ্বালাময়ী বক্তব্য। এর মধ্যে একটি টিয়ার গ্যাসের শেল মঞ্চের ওপর পড়ার পরই থেমে যায় মাইকের শব্দ। যিনি এতক্ষণ এই জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনিই প্রথম লাফ দেন ট্রাকের ওপর থেকে। এরপর চলতে থাকে একের পর এক রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারদিক। যেন যুদ্ধক্ষেত্র। প্রথম ১০ মিনিটের মাথায় হেফাজতের কর্মীরা সরে যেতে শুরু করে। কেউ চলে যায় সোনালী ব্যাংকের ভেতরে, কেউ পাশের ভবনে, কেউ অলিগলিতে। একটি ছোট ঘরে হেফাজতের শ-খানেক কর্মী আশ্রয় নেয়। সবাই কিশোর, তরুণ। বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র। 

মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে পুরো শাপলা চত্বর এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু তখনো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-সংলগ্ন এলাকায় চলছিল হেফাজতের কর্মীদের বিক্ষোভ। তারা বিভিন্ন জিনিসে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। র‍্যাব-পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। সেখানে পুলিশের এসআই শাহজাহানকে পিটিয়ে হত্যা করে হেফাজতের কর্মীরা। কিন্তু সাঁড়াশি অভিযানে ধীরে ধীরে সব ফাঁকা হয়ে যায়।

আমরা চারপাশ ঘুরে দেখতে থাকি। হেফাজতমুক্ত গভীর রাতের শাপলা চত্বর এলাকা তখন বড়ই অচেনা। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লাঠি, জুতা, ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট, চিড়া, মুড়ি, কাপড়সহ নানা কিছু। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি প্রাইভেট কার—কাচ ভাঙা, কিছুটা দুমড়ানো-মোচড়ানো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই দেখা গেল রক্তাক্ত এক কিশোর ও এক যুবক। যে ট্রাকে মূল মঞ্চ করা হয়েছিল, তার নিচে পলিথিনে মোড়ানো চার যুবকের লাশ। দিনের বেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যাওয়া সেই চার কর্মীর লাশ মঞ্চের কাছে এনে রাখা হয়েছিল।

এরপর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়া হেফাজতের কর্মীদের একে একে বের করে আনা হয়। কেউ বেরিয়ে আসে কান ধরে, কেউ দুই হাত উঁচু করে। তাদের নিরাপদে বের হয়ে চলে যেতে বলা হয়। পুলিশের সদস্যরা হেফাজতের কর্মীদের বের করতে করতে বলেন, ‘বাবারা, চলে যান। আপনারা শান্তিতে থাকেন। দেশটারেও শান্তিতে থাকতে দেন।’ 

অভিযান শেষ। আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, রোদ-ঝলমলে নতুন দিনের আলো। যে আলোয় কেটে যায় সব অন্ধকার।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত