Ajker Patrika

শিশু পাচার করে অন্য দেশে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা

শিশু পাচার করে অন্য দেশে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা

ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শহরে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব শিশু আর কখনো দেশে ফেরে না। তারা পাচার হয়ে যায় পার্শ্ববর্তী দেশে। সেখানে গড়ে উঠেছে ভিক্ষাবৃত্তির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই শিশুদের ব্যবহার করে তারা। প্রতিবন্ধী শিশুদের নামিয়ে দেওয়া হয় রাস্তায়। সারা দিন ভিক্ষা করে যে অর্থ তারা পায় সেখান থেকে কমিশন কেটে নেয় সিন্ডিকেট।

এমন ভয়ংকর মানবপাচারের গল্প তুলে এনেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া ও কেনিয়াতে দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ অনুসন্ধান চালিয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন গণমধ্যমটি।

নাইরোবির রাস্তায় হুইলচেয়ারে বসা প্রচুর শিশু ভিক্ষুক দেখা যায়প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তানজানিয়ার দরিদ্র পরিবারগুলো সংসারে দুটো পয়সা উপার্জনের জন্য দালাল চক্রের হাতে সন্তানদের তুলে দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। একটি গোপন ও শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মধ্যমে তানজানিয়া থেকে বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধী শিশু কেনিয়াতে পাচার হচ্ছে। কেনিয়াতে এই শিশুদের রাস্তায় ভিক্ষা করতে বাধ্য করা হয়। তবে তারা কাজ করে একটি সিন্ডিকেটের অধীনে, অনেকটা শ্রমিক ঠিকাদারির মতো। এই ধরনের সিন্ডিকেটের প্রধানও থাকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে গেলে শহরের বিভিন্ন সড়কে হুইলচেয়ারে বসা প্রচুর ভিক্ষুক শিশু দেখতে পাওয়া যায়। এই শিশুদের জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, প্রায় সবার বাড়িই তানজানিয়ায়। পরিবারই তাদের এই দালালদের হাতে তুলে দিয়েছে। শহরে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাবে এমন প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। কিন্তু পাচার হয়ে কেনিয়া আসার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের ঠাঁই হয় নোংরা খুপরিতে।

পাচারের শিকার এমন এক ব্যক্তি ফারার মাধ্যমে এই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে বিবিসির অনুসন্ধানী দল। জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে পাচারকারীদের দাস হয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন ফারা। ফারাকে শহরের একটি দরিদ্র পাড়া কারিওবাঙ্গির একটি খুপরি পর্যন্ত অনুসরণ করে অনুসন্ধানী দলটি। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, এই বস্তির সবাই ভিক্ষা করে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা থেকে কমিশন কাটা হয়। ফারা ভিক্ষা করে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার কেনিয়ান শিলিং বা ১৮ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেন। তবে কমিশন কেটে রাখার পর যা পান তাতে কোনোরকম খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। বিবিসির অনুসন্ধানী দলের এক সদস্যও ভিক্ষুক সেজে সেখানে যান এবং নিয়ম অনুযায়ী তিনিও কমিশন কাটার পর যৎসামান্য অর্থ পান।

ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য হওয়ার শিশুরা মানবেতর জীবনযাপন করেঅনেক ভুক্তভোগী বলেন, যথেষ্ট টাকা সংগ্রহ করতে না পারলে মারধরও করা হয়। অসুস্থ হলে কখনোই হাসপাতালে নেওয়া হয় না।

এই এলাকায় ফারাই একমাত্র প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক নন। তাঁর মতো একজন কুউরা। তাঁর বয়স যখন নয় বছর তখন তাঁর পরিবার তাঁকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়। তারা ভালো কাজ দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

তানজানিয়া থেকে কেনিয়ায় প্রতিবন্ধী শিশুদের পাচারের এই খবর প্রকাশের পর অবশ্য দুই দেশের পুলিশই তৎপর হয়েছে। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার (এনজিও) কাছে এসব শিশুর কোনো সঠিক তথ্য নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ সংখ্যা যে বছর বছর বাড়ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ