নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

এস এস শোহান, বাগেরহাট
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২২, ০৬: ২৫
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২২, ১২: ০৫

দীর্ঘদিন বাগেরহাটে প্রবহমান হোজির নদী দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নে অবস্থিত সাড়ে আট কিলোমিটার নদীর ছয় কিলোমিটারেই মাছ চাষ করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় ২০ থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মী সমন্বিতভাবে ২০০৯ সাল থেকে এখানে মাছ চাষ করছেন।

নদী দখলকারীরা বলছেন, সরকার কখনো মাছ চাষ করতে নিষেধ করেনি, তাই তাঁরা মাছ চাষ করছেন। এদিকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নদী দখলমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগেরহাট-রামপাল সড়কের ডেমা ইউনিয়নের হোজির সেতুর দক্ষিণ দিকে খেগরাঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ও সেতু থেকে উত্তর দিকে বৈটেঘাটা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নিচে দেওয়া হয়েছে বাঁধ। বাঁধের ওপর খুপরি ঘর করে মাছের খাবার রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি জায়গায় নেট-পাটা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত কয়েকজন বলেন, সেতুর নিচে বাঁধ দিয়ে নদীটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেতুর দুই পাশের মানুষ দুই পাশে মাছ চাষ করে। যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের লোকজন মাছ চাষ করেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ডেমা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরিদ মোল্লা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নকিব হাই, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরহাদ শেখ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ফকিরের নেতৃত্বে মাছ চাষ করা হয়। এর সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছেন।

ডেমা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শুধু আমি একা এই খালে মাছ চাষ করি না। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই খালে মাছ চাষ করা হয়। যখন যে সরকার থাকে, সেই সরকারের লোকজন এখানে মাছ চাষ করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আমরা ঘের করা শুরু করি। আমার সঙ্গে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছেন।’

সরকারি খাল দখল করে ঘের করা অপরাধ, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিংও করা হয়েছে, তারপরও কেন করেন—এমন প্রশ্নে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কেউ কখনো আমাদের খাল দখল করে ঘের করতে নিষেধ করেননি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিং করার বিষয়টি আমি জানি না।’

হোজির নদী দখলের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, জানতে চাইলে ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনি মল্লিক বলেন, হোজির নদী দখলের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। যদি কেউ দখল করে থাকেন, সেটা তাঁদের দায়িত্ব, এখানে তাঁর কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারি খাল মুক্ত করার জন্য তাঁরা মাইকিং করেছিলেন। কিছু কাজও হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাটের আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বলেন, নদ-নদী রক্ষার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট রায় রয়েছে। প্রতিটি জেলায় দখলদারদের তালিকা করার নির্দেশনাও রয়েছে ওই রায়ে। এরপরও কেউ কেউ প্রবহমান নদী-খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। পাশাপাশি খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনাও রয়েছে। দ্রুত নদী দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খাল ও নদী দখল করে মাছ চাষ বা অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। যদি কেউ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। হোজির নদীতে দেওয়া সব বাঁধ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অপসারণ করার আশ্বাস দেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় খনন প্রকল্পের আওতায় ডেমা ইউনিয়নের হোজির নদীটি খনন করা হয়েছিল। নদী ও খাল খননের সময় তাঁদের তদারকি থাকে, তাঁরা দেখভাল করেন। খনন শেষে এই খাল ও নদীর দায়-দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত