স্কুলের জমি দখলের পাঁয়তারা

মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২২, ০৭: ০৬
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ১২: ০৩

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গতকাল বুধবার জানান, স্থানীয় মিলন মিয়া নামে এক ব্যক্তি এ চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গার হালনাগাদ কাগজপত্র তাদের হাতে রয়েছে। তারপরও তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এতে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে মিলন মিয়ার দাবি, ওই জায়গা তিনি কিনেছেন।

জানা গেছে, মিলন মিয়ার বাড়ি মোহনগঞ্জের টেংগাপাড়া গ্রামে। তবে তিনি রাজধানীতে বসবাস করেন।

মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পৌরশহরের টেংগাপাড়া এলাকায় ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবদুল আজিজ আহমেদ খান।

বিদ্যালয়ের আট একরের বেশি নিজস্ব ভূমির মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়াও এর আশপাশ ও মাইলোড়া এলাকায় রয়েছে নিজস্ব খেলার মাঠ এবং ফসলি জমি। ১৯৮১ সালের পয়েলা জানুয়ারি স্কুলটি জাতীয়করণ হয়।

প্রধান শিক্ষক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘খেলার মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে যে ফসলি জমি রয়েছে, সেগুলোর ওপর কিছু খারাপ লোকের কুনজর পড়েছে। তাঁরা এগুলো আত্মসাৎ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ২০১৪ সালে তাঁরা ১ দশমিক ৯৬ একর জমির মালিকানা দাবি করে বিদ্যালয়ের বিপক্ষে আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০২০ সালে আদালত সব কাগজপত্র দেখে বিদ্যালয়ের পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। এরপর তারা এর বিপক্ষে আদালতে আপিল করেন যা চলমান রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ২০২১ সালে তাঁরা আবার বিদ্যালয়ের বিপক্ষে আরেকটি মামলা করেন।

কদিন পরপর বিদ্যালয়ের বিপক্ষে মামলা হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের মামলা নিয়েই আদালত ও আইনজীবীদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।

ফলে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা অসুবিধা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও বিদ্যালয়ের শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধান শিক্ষক।’

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, জমির মালিকানার সপক্ষে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় দলিলপত্র রয়েছে। ১৯৩১ সাল থেকেই বিদ্যালয় এই জমি ভোগদখল করার পাশাপাশি খাজনা পরিশোধ করে আসছে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ আহমেদ খান সাহেব একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, দাতা ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন তিনি এটি পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি নিজ হাতে বিদ্যালয়ের সব কাগজপত্র রেখে গেছেন।

এমন একজন ব্যক্তির পরিচালনাধীন বিদ্যালয়ে কোনো অবৈধ জমি থাকার প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের আগে এলাকার আরেক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য ডা. আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এরপর ১৯৮১ সালে জাতীয়করণ হওয়ার সময় তাঁর নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের যাবতীয় স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের কাছে তুলে দেওয়া হয়। আমাদের কাছে জমির সমস্ত সঠিক কাগজপত্র থাকার পরও একটি চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে জমি দখলে নেওয়া ও বিদ্যালয়ের পড়াশোনা কাজে বিঘ্ন ঘটানোর জন্যই এমন হয়রানির পথ নিয়েছে। এই অবস্থার প্রতিকার চাই।’

অভিযুক্ত মিলন মিয়া বলেন, ‘দাবিকৃত জায়গাটি আমি কিনেছি। এর পক্ষে বায়নাপত্র আছে। তবে জায়গাটি দলিল করে দেওয়ার আগেই জায়গার মালিক মারা যান। এ নিয়ে এখন আদালতে মামলা চলমান আছে। আদালতেই বিষয়টি সমাধান হবে আশা করছি।’

মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নেত্রকোনা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠিন। হাওরাঞ্চলের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েছেন। বাংলাদেশ বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান এই বিদ্যালয়ের ছাত্র।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত