রাশেদ নিজাম ও শাহীন শাহ টেকনাফ (কক্সবাজার) থেকে
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ ধরে গেলে টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্ট, যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। বাঁয়ে ঢুকলেই বাহারছড়া ইউনিয়ন, সেখানেই জাহাজপুরা পাহাড়। ওই পাহাড় পেরিয়ে পূর্ব দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং পাহাড়। এ দুই পাহাড়ের মাঝে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গহিন এলাকা।
গত চার মাসে ওই এলাকায় অপহরণ হয়েছে ২১ জন। এর বাইরে টেকনাফে দুটি ঘটনায় অপহৃত হয়েছে ১৭ রোহিঙ্গা। এই ৩৮ জনের মধ্যে ১১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৬ জন ছাড়া পেয়েছেন মুক্তিপণ দিয়ে। টাকা না পাওয়ায় খুন হয়েছেন একজন। তবে মুক্তিপণের বিষয়টি স্বীকার করে না পুলিশ।
ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনায় ওই পাহাড়ি এলাকা এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্ক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, কয়েকটি গ্রুপ অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। সশস্ত্র এসব দলে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও রয়েছে। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে টাকা আদায়ের জন্য। বেশির ভাগ ঘটনাতেই মামলা হয়নি।
গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরার একটি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অপহৃত হন আটজন। তাঁদের বাড়ি জাহাজপুরা গ্রামে। ২৬ জানুয়ারি শিলখালী বনসংলগ্ন ওই গ্রামে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক গেলে তাঁদের ছয়জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের বাড়ি আধা কিলোমিটারের মধ্যে। জড়ো হন উৎসুক অনেকে।
অপহৃত ব্যক্তিরা জানান, একজন কলেজছাত্রসহ তাঁরা আটজন পাহাড়ের পাদদেশে খালে মাছ ধরতে গিয়ে অপহৃত হন। তিন দিন পর ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিলে মুক্তি পান তাঁরা। এই আটজন হলেন রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল আফসার, মমতাজ মিয়ার ছেলে মো. রেদোয়ান, রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক, নুরুল হকের ছেলে নুর মোহাম্মদ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল ও করিম উল্লাহ এবং রুস্তম আলীর ছেলে সলিম উল্লাহ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নুরুল আফসার বলেন, সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয় তাঁর পরিবার। সলিমউল্লাহ ১ লাখ ৯০ হাজার, মোহাম্মদউল্লাহ ৮০, নুরুল হক, রেদোয়ান ও মোস্তফা কামাল ৫০ হাজার করে এবং নুর মোহাম্মদ ২০ হাজার টাকায় ছাড়া পান। করিম উল্লাহর কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় মুক্তিপণ আদায় করতে পারেনি অপহরণকারীরা।
অপহৃত ব্যক্তিরা জানান, ভারী অস্ত্রধারী অপহরণকারীদের দলটিতে ২২ জন ছিল। তাদের তিনজন রোহিঙ্গা। তারা কালো ফুলহাতা টি-শার্ট, হ্যাট পরত। মুখে ছিল মাস্ক। সরদারকে মামা ডাকত। একবেলা খাবার দিত। টাকার জন্য সকাল-বিকেল দুই বেলা পেটানো হতো। প্রতিদিন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে নিয়ে যেত। চারজনের পায়ে শিকল বেঁধে তালা মেরে ফেলে রাখা হতো। অপহরণ নিয়ে কোথায় কী সংবাদ এল, কী লাইভ হচ্ছে—পাহাড়ে বসেই দেখত অপহরণকারীরা। অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের কেউ কড়া বক্তব্য দিলে তাঁকে বেশি পেটানো হতো।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাঁরা মুক্তি পাওয়ার আগেই পুলিশের একটি দল পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছিল। তবে যে উঁচু জায়গায় তাঁদের রাখা হয়েছিল, পুলিশ সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। যে রাতে তাঁরা ফিরে আসেন, পরের দিন সকালে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ তাঁদের নিয়ে অপহরণের স্থানে গিয়েছিল।
তিনজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, মুক্তিপণ দিয়ে নয়, পুলিশ উদ্ধার করেছে না বলায় পুলিশ তাঁদের মারধর করে। তবে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান দাবি করেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
৯ জানুয়ারি হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং গ্রাম থেকে অপহৃত চারজনের একজন ফজলুল করিমের ছেলে আবদুল হাকিম। তিনি জানান, চোখ বেঁধে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে দেড়-দুই ঘণ্টা হাঁটিয়ে তাঁকে নেওয়া হয় গহিনে। পরে হাত-পা বেঁধে চালানো হয় নির্যাতন। মুক্তিপণ দিয়ে পরদিন রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। সশস্ত্র ওই দলটিতে রোহিঙ্গাসহ ৩০ জন ছিল।
একই সময়ে অপহরণের শিকার আবদুর রহমানও জানান, পুলিশের তৎপরতা বাড়লে এবং গণমাধ্যমে বেশি সংবাদ প্রকাশ হলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ত। খাবারের ব্যবস্থা করার ধরন দেখে মনে হয়েছে, অপহরণকারীদের পরিচিতরা ওই সব পাহাড়ের আশপাশের।
১৩ জানুয়ারি কাজ দেওয়ার কথা বলে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুলের ২১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ছয় রোহিঙ্গাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জিম্মি করা হয়। পরে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় তারা। এ ঘটনায় চাকমারকুলের বাসিন্দা মো. বিল্লাল নামে এক অপহরণকারীকে আটকের তথ্য দিয়েছেন ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল ইসলাম।
একের পর এক অপহরণের ঘটনায় স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে ভুগছেন বলে জানান হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, দুপাশ থেকে একসঙ্গে সাঁড়াশি অভিযান চালালে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব। গহিন পাহাড়ে পুলিশ ভয়ে যেতে চায় না। অপহরণের ঘটনার সময় ছাড়া ওই সব এলাকায় পুলিশের নজরদারিও নেই। স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা মিলে শক্তিশালী অপহরণ চক্র তৈরি করেছে। কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পাহাড়ের পূর্ব পাশের হ্নীলা, পশ্চিম পাশের বাহারছড়া ইউনিয়নে অপহরণ করছে।
কক্সবাজারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেত ১০-১৪টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। প্রায় দেড় বছর আগে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে তারা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। অর্থ জোগাতে তারা স্থানীয় লোকজনের ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে নেমেছে। তবে এর নেতৃত্বে আছে স্থানীয় লোকজনই।
১২ জানুয়ারি নিখোঁজের পর ২১ জানুয়ারি টেকনাফে মোহাম্মদ নামে এক রাজমিস্ত্রির লাশ উদ্ধার হয়। তাঁর বাড়িও লেচুয়াপ্রাং গ্রামে। তাঁর বাবা বাদশা মিয়া জানান, দুই হাজার ইয়াবার জন্য তাঁর ছেলেকে খুন করেছে একটি চক্র। কয়েকজনকে চিহ্নিত করে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানায় বাহাড়ছড়া তদন্ত কেন্দ্র।
এদিকে ২৯ জানুয়ারি দুপুরে বাহারছড়ার শিলখালী পাহাড়ি এলাকায় কাঠ আনতে গিয়ে অপহৃত হন দক্ষিণ শিলখালী চৌকিদারপাড়ার নুরুল আমিনের ছেলে রহমত উল্লাহ (২৫) ও আলী আকবরের ছেলে আব্দুল হাফিজ (২০)। খবর পেয়ে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্য, কমিউনিটি পুলিশ, চৌকিদার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে দুই ঘণ্টা পর তাঁদের উদ্ধার করে। তবে অপহরণকারীরা গহিন জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
পুলিশ বলছে, অপহরণের বেশির ভাগ ঘটনাই লেনদেনের কারণে হচ্ছে। হয় মাদক, নয়তো চোরাচালান; দেনা-পাওনার ঘটনায় আটকে রেখে টাকা আদায়ের কৌশল বের করেছে স্থানীয় লোকজন। কম টাকায় কাজে লাগানো যায় বলে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
জেলার শুধু একটি অংশে অপহরণের ঘটনা কেন–এমন প্রশ্নে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সহজে লুকানো যায় বলে সন্ত্রাসীরা পাহাড় বেছে নিয়েছে। ড্রোন দিয়েও সেখানে অনুসন্ধান করেছি। কিন্তু অবস্থান শনাক্ত করা দুরূহ। কয়েকটি গ্রুপের দলনেতার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তবে পাহাড়ে স্থানীয় মানুষের সহায়তা এবং সচেতনতা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে সফল হওয়া কষ্টকর।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। স্থানীয়দের নিয়ে বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অপহরণ রোধে কাজ করছি। সবাই যদি বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন, তবে সন্ত্রাসীদের সহজেই আইনের আওতায় আনা যাবে।’
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ ধরে গেলে টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্ট, যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। বাঁয়ে ঢুকলেই বাহারছড়া ইউনিয়ন, সেখানেই জাহাজপুরা পাহাড়। ওই পাহাড় পেরিয়ে পূর্ব দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং পাহাড়। এ দুই পাহাড়ের মাঝে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গহিন এলাকা।
গত চার মাসে ওই এলাকায় অপহরণ হয়েছে ২১ জন। এর বাইরে টেকনাফে দুটি ঘটনায় অপহৃত হয়েছে ১৭ রোহিঙ্গা। এই ৩৮ জনের মধ্যে ১১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৬ জন ছাড়া পেয়েছেন মুক্তিপণ দিয়ে। টাকা না পাওয়ায় খুন হয়েছেন একজন। তবে মুক্তিপণের বিষয়টি স্বীকার করে না পুলিশ।
ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনায় ওই পাহাড়ি এলাকা এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্ক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, কয়েকটি গ্রুপ অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। সশস্ত্র এসব দলে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও রয়েছে। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে টাকা আদায়ের জন্য। বেশির ভাগ ঘটনাতেই মামলা হয়নি।
গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরার একটি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অপহৃত হন আটজন। তাঁদের বাড়ি জাহাজপুরা গ্রামে। ২৬ জানুয়ারি শিলখালী বনসংলগ্ন ওই গ্রামে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক গেলে তাঁদের ছয়জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের বাড়ি আধা কিলোমিটারের মধ্যে। জড়ো হন উৎসুক অনেকে।
অপহৃত ব্যক্তিরা জানান, একজন কলেজছাত্রসহ তাঁরা আটজন পাহাড়ের পাদদেশে খালে মাছ ধরতে গিয়ে অপহৃত হন। তিন দিন পর ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিলে মুক্তি পান তাঁরা। এই আটজন হলেন রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল আফসার, মমতাজ মিয়ার ছেলে মো. রেদোয়ান, রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক, নুরুল হকের ছেলে নুর মোহাম্মদ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল ও করিম উল্লাহ এবং রুস্তম আলীর ছেলে সলিম উল্লাহ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নুরুল আফসার বলেন, সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয় তাঁর পরিবার। সলিমউল্লাহ ১ লাখ ৯০ হাজার, মোহাম্মদউল্লাহ ৮০, নুরুল হক, রেদোয়ান ও মোস্তফা কামাল ৫০ হাজার করে এবং নুর মোহাম্মদ ২০ হাজার টাকায় ছাড়া পান। করিম উল্লাহর কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় মুক্তিপণ আদায় করতে পারেনি অপহরণকারীরা।
অপহৃত ব্যক্তিরা জানান, ভারী অস্ত্রধারী অপহরণকারীদের দলটিতে ২২ জন ছিল। তাদের তিনজন রোহিঙ্গা। তারা কালো ফুলহাতা টি-শার্ট, হ্যাট পরত। মুখে ছিল মাস্ক। সরদারকে মামা ডাকত। একবেলা খাবার দিত। টাকার জন্য সকাল-বিকেল দুই বেলা পেটানো হতো। প্রতিদিন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে নিয়ে যেত। চারজনের পায়ে শিকল বেঁধে তালা মেরে ফেলে রাখা হতো। অপহরণ নিয়ে কোথায় কী সংবাদ এল, কী লাইভ হচ্ছে—পাহাড়ে বসেই দেখত অপহরণকারীরা। অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের কেউ কড়া বক্তব্য দিলে তাঁকে বেশি পেটানো হতো।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাঁরা মুক্তি পাওয়ার আগেই পুলিশের একটি দল পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছিল। তবে যে উঁচু জায়গায় তাঁদের রাখা হয়েছিল, পুলিশ সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। যে রাতে তাঁরা ফিরে আসেন, পরের দিন সকালে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ তাঁদের নিয়ে অপহরণের স্থানে গিয়েছিল।
তিনজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, মুক্তিপণ দিয়ে নয়, পুলিশ উদ্ধার করেছে না বলায় পুলিশ তাঁদের মারধর করে। তবে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান দাবি করেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
৯ জানুয়ারি হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং গ্রাম থেকে অপহৃত চারজনের একজন ফজলুল করিমের ছেলে আবদুল হাকিম। তিনি জানান, চোখ বেঁধে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে দেড়-দুই ঘণ্টা হাঁটিয়ে তাঁকে নেওয়া হয় গহিনে। পরে হাত-পা বেঁধে চালানো হয় নির্যাতন। মুক্তিপণ দিয়ে পরদিন রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। সশস্ত্র ওই দলটিতে রোহিঙ্গাসহ ৩০ জন ছিল।
একই সময়ে অপহরণের শিকার আবদুর রহমানও জানান, পুলিশের তৎপরতা বাড়লে এবং গণমাধ্যমে বেশি সংবাদ প্রকাশ হলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ত। খাবারের ব্যবস্থা করার ধরন দেখে মনে হয়েছে, অপহরণকারীদের পরিচিতরা ওই সব পাহাড়ের আশপাশের।
১৩ জানুয়ারি কাজ দেওয়ার কথা বলে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুলের ২১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ছয় রোহিঙ্গাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জিম্মি করা হয়। পরে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় তারা। এ ঘটনায় চাকমারকুলের বাসিন্দা মো. বিল্লাল নামে এক অপহরণকারীকে আটকের তথ্য দিয়েছেন ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল ইসলাম।
একের পর এক অপহরণের ঘটনায় স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে ভুগছেন বলে জানান হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, দুপাশ থেকে একসঙ্গে সাঁড়াশি অভিযান চালালে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব। গহিন পাহাড়ে পুলিশ ভয়ে যেতে চায় না। অপহরণের ঘটনার সময় ছাড়া ওই সব এলাকায় পুলিশের নজরদারিও নেই। স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা মিলে শক্তিশালী অপহরণ চক্র তৈরি করেছে। কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পাহাড়ের পূর্ব পাশের হ্নীলা, পশ্চিম পাশের বাহারছড়া ইউনিয়নে অপহরণ করছে।
কক্সবাজারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেত ১০-১৪টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। প্রায় দেড় বছর আগে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে তারা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। অর্থ জোগাতে তারা স্থানীয় লোকজনের ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে নেমেছে। তবে এর নেতৃত্বে আছে স্থানীয় লোকজনই।
১২ জানুয়ারি নিখোঁজের পর ২১ জানুয়ারি টেকনাফে মোহাম্মদ নামে এক রাজমিস্ত্রির লাশ উদ্ধার হয়। তাঁর বাড়িও লেচুয়াপ্রাং গ্রামে। তাঁর বাবা বাদশা মিয়া জানান, দুই হাজার ইয়াবার জন্য তাঁর ছেলেকে খুন করেছে একটি চক্র। কয়েকজনকে চিহ্নিত করে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানায় বাহাড়ছড়া তদন্ত কেন্দ্র।
এদিকে ২৯ জানুয়ারি দুপুরে বাহারছড়ার শিলখালী পাহাড়ি এলাকায় কাঠ আনতে গিয়ে অপহৃত হন দক্ষিণ শিলখালী চৌকিদারপাড়ার নুরুল আমিনের ছেলে রহমত উল্লাহ (২৫) ও আলী আকবরের ছেলে আব্দুল হাফিজ (২০)। খবর পেয়ে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্য, কমিউনিটি পুলিশ, চৌকিদার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে দুই ঘণ্টা পর তাঁদের উদ্ধার করে। তবে অপহরণকারীরা গহিন জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
পুলিশ বলছে, অপহরণের বেশির ভাগ ঘটনাই লেনদেনের কারণে হচ্ছে। হয় মাদক, নয়তো চোরাচালান; দেনা-পাওনার ঘটনায় আটকে রেখে টাকা আদায়ের কৌশল বের করেছে স্থানীয় লোকজন। কম টাকায় কাজে লাগানো যায় বলে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
জেলার শুধু একটি অংশে অপহরণের ঘটনা কেন–এমন প্রশ্নে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সহজে লুকানো যায় বলে সন্ত্রাসীরা পাহাড় বেছে নিয়েছে। ড্রোন দিয়েও সেখানে অনুসন্ধান করেছি। কিন্তু অবস্থান শনাক্ত করা দুরূহ। কয়েকটি গ্রুপের দলনেতার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তবে পাহাড়ে স্থানীয় মানুষের সহায়তা এবং সচেতনতা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে সফল হওয়া কষ্টকর।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। স্থানীয়দের নিয়ে বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অপহরণ রোধে কাজ করছি। সবাই যদি বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন, তবে সন্ত্রাসীদের সহজেই আইনের আওতায় আনা যাবে।’
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৭ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৭ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৭ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
২১ দিন আগে