বাসদ নেতাদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, তদন্তের আহ্বান আনু মুহাম্মদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ০৯: ৪৯
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩, ১১: ৫৬

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে এই তাগিদ দেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে আনু মুহাম্মদ বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন থেকেই বাসদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টকে দেখেছেন খুব কাছে থেকে। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী দশকগুলোতে জনস্বার্থের সব আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে এই দল ও ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। নব্বইয়ের দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ছাত্রফ্রন্টের কর্মীদের, বিশেষত নারী কর্মীদের। বর্তমানে দুর্বল অবস্থা হলেও একসময় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রফ্রন্ট খুবই শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে শিক্ষার লড়াই, অন্যায় নিপীড়ন ও বৈষম্যবিরোধী লড়াই এগিয়ে নিতে কাজ করেছে। তাদের সংগঠনে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য এবং নারী-পুরুষ কর্মীদের সম্মিলিত লেগে থাকা কাজ, তাঁদের শ্রম, নিষ্ঠা, ঐক্য সবই অন্যদের অনুপ্রাণিত করত।

তেল ও গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির দীর্ঘ আন্দোলনে আনু মোহাম্মদ বাসদ, ছাত্রফ্রন্ট ও তাদের অন্যান্য সংগঠনের ভূমিকা দেখেছেন খুবই শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য। তিনি বলেন, বাসদের রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাদের আন্তরিকতা, শ্রম ও নিষ্ঠা আমাকে সব সময়ই ভরসা দিয়েছে। 

অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, সম্প্রতি বাসদের নেতৃত্ব পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাবেক নারী কর্মীদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব দেখে তিনি বিস্মিত ও হতাশ হয়েছেন।

আনু মোহাম্মদ বলেন, কোনো সংগঠন সমাজ রূপান্তরের লড়াইয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও সেখানে বিদ্যমান সমাজের নানা রোগ থেকে যেতে পারে। এর মধ্যে পুরুষতন্ত্র, শ্রেণিক্ষমতা উল্লেখযোগ্য। এসব রোগের আড়ালে নানা মাত্রায় বৈষম্য, নিপীড়নেরও জন্ম হতে পারে। একটা সংগঠন এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ধারাকে চলমান রাখতে সক্ষম কি না, তা দিয়েই পার্থক্য স্পষ্ট হয়, এর ওপরই নির্ভর করে তার জীবন্ত থাকা এবং কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হওয়া। কিন্তু এর ঘাটতি তৈরি হয় দুটি কারণে, এগুলো হলো—আত্মসন্তুষ্টি এবং ভুল স্বীকারে অনীহা বা অক্ষমতা।

বাসদসহ সব জনপন্থী সংগঠন সবার আগে সংগঠনের ভেতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গা পরিষ্কার করবে—এমন আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, উত্থাপিত গুরুতর অভিযোগ ঝুলিয়ে রেখে কিংবা অভিযোগকারীদের দোষারোপ করে বাসদ তার দায় থেকে মুক্ত হবে না বরং সংগঠনের জন্য, জনগণের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য তা খুবই ক্ষতিকর হবে। জনশত্রুরাও এর সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে।

আনু মুহাম্মদ আশা প্রকাশ করেন, আর বিলম্ব না করে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে কিংবা অনুরূপ সাংগঠনিক বিধিব্যবস্থার অধীনে গ্রহণযোগ্যভাবে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে অভিযোগের সত্যাসত্য পরীক্ষা করে সবার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করা হোক, প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দল ও সংগঠনের অসংখ্য নিষ্ঠাবান কর্মী ও সমর্থকদের আবারও হতাশা ও নিষ্ক্রিয়তার দিকে ঠেলে দেওয়ার পথ বন্ধ করা হোক। অনেক জরুরি কাজের আর ক্ষতি না হোক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত