Ajker Patrika

রিকশা কারিগর থেকে ইয়াবার গডফাদার

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুন ২০২৩, ১১: ১২
রিকশা কারিগর থেকে ইয়াবার গডফাদার

একসময় টেকনাফে রিকশার কারিগর হিসেবে কাজ করতেন আবদুল গফুর। কিন্তু সেই কাজ বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা কারবারে। তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘পারিবারিক ইয়াবা সিন্ডিকেট’। ইয়াবা বিক্রি করে খুব অল্প সময়ে ধনী হয়ে ওঠেন। শুধু তা-ই নয়, অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থের বড় একটি অংশ পাচার করেন বিদেশে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, মাদকের কারবার করেই কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে আবদুল গফুরের পরিবার। তাঁর বড় ছেলে শফিকের বিরুদ্ধে ১০টি মাদক মামলা ও দুটি মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত চলছে। ছোট দুই ছেলে মনির আর রফিকের নামেও রয়েছে ১৫টি করে মাদক মামলা। সব মামলায় নাম রয়েছে গফুরেরও।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গফুরের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব না থাকলেও তাঁর বড় ছেলে শফিকের নামে মিলেছে ৭ ব্যাংকে ১২টি হিসাব। আর তাতে লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি টাকার ওপরে। একইভাবে রয়েছে অন্য ছেলেদেরও।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ সুপার হুমায়ন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, শফিকের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি ও ৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দুটি অর্থ পাচার মামলার তদন্ত চলছে। এই টাকা উপার্জনের পেছনে কোনো বৈধ ব্যবসা বা আয় দেখাতে পারেননি তাঁরা।

জানা যায়, বর্তমানে গফুরের পরিবারের নেতৃত্বেই মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান দেশে ঢুকছে। টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায় ১০-১৫ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট চালায় এই পরিবার। সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে কাজ করেন বড় ছেলে শফিক। ছোট ছেলেদেরও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব। মাদক কারবার থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় তাঁরা কক্সবাজার টেকনাফের ডেইল পাড়া বায়তুল বর জামে মসজিদের পাশে নিজেদের ঝুপড়িঘর ছেড়ে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকা। যুক্ত হয়েছেন পৌর রাজনীতিতেও।

টেকনাফে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজেদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই গফুর তাঁর মেজ ছেলে মনিরকে ২০২১ সালে টেকনাফ পৌরসভার নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নামান। কিন্তু ২৮ অক্টোবর দুই ভাই ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এলাকায় হইচই পড়ে যায়। তখন আবদুল গফুর নিজেই কাউন্সিলর প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।

সিআইডির তদন্ত বলছে, গফুরের বড় ছেলে শফিক আলম ২০১৪ সাল থেকে মিয়ানমার থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের মাধ্যমে কৌশলে ইয়াবা বড়ি আনেন। তাঁর এ কাজে যুক্ত ছিলেন দুই ভাই মনির আলম, রফিক আলমসহ ১৫ জনের একটি দল। ২০১৭ সালের দিকে টেকনাফ সদর ইউপি এলাকার ইয়াবা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ আসে শফিকের হাতে। তবে ২০১৯ সালে মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান পরিচালনার পর থেকে তাঁরা সবাই বাড়ি ছেড়ে যান। টেকনাফ ছেড়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বাসা ভাড়া করে সেখানে বসবাস করতে থাকেন, কিন্তু বন্ধ করেননি ইয়াবা কারবার। ২০২১ সালে ইয়াবা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন বেশ তৎপর হয়ে ওঠে, সেই বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে দুই ব্যাগ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন দুই সহোদর মনির ও রফিক। সেই চালানেরও হোতা ছিলেন বড় ভাই শফিক।

তদন্তকারীরা বলছেন, মাদকের টাকা নিরাপদ রাখতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দুবাইয়ে পালিয়েছেন মেজ ছেলে মনির। গফুর আর রফিক পুলিশের ভয়ে এখন পালিয়ে থাকেন। কিন্তু মাদক সিন্ডিকেটের কাজ ঠিকই করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল ঢাকায় ইয়াবার বড় চালান পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী থানা-পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হন শফিক। এখন তিনি চট্টগ্রামে কারাগারে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত