Ajker Patrika

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩৬৪ ভেষজ বাগান, খুঁজে পায়নি প্রাচি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৯: ৫০
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩৬৪ ভেষজ বাগান, খুঁজে পায়নি প্রাচি

সরকারের অর্থায়নে দেশে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মোট ৩৬৪টি ভেষজ উদ্ভিদের বাগান আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে। এসব বাগানে প্রায় ৩০ প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ আছে। যা পরিচর্যার জন্য সরকারি খরচে নিয়োগ করা হয়েছে একজন করে মালি। কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই নেই। বাগানও নেই, মালিও নেই; নেই উদ্ভিদও। এ সবই কাগজে-কলমে দেখানো হয়েছে।  

আজ শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে প্রাচীন চিকিৎসা উন্নয়ন প্রচেষ্টা (প্রাচি) আয়োজিত জাতীয় সংলাপে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। 

সংলাপের মূল প্রবন্ধ পাঠ করার সময় সংগঠনটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের লিখিতভাবে জানিয়েছে সরকারের অর্থায়নে দেশে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মোট ৩৬৪টি ভেষজ উদ্ভিদের বাগান আছে। প্রতিটি বাগানে রয়েছে ৩০ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং পরিচর্চার জন্য আছেন একজন স্থায়ী মালি। প্রাচির অনুসন্ধানী দল বলছে, বাস্তবে প্রায় সব বাগানই অস্তিত্বহীন। যাও দুই-একটি আছে, তা শুধু কেবল তাদের অবস্থানের নমুনা মাত্র। বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাগানটিই  বায়বীয়। অথচ জাতীয় পর্যায়ে মেডিসিনাল প্ল্যান্ট উৎপাদন, জাতের সংরক্ষণ এবং এদের গবেষণা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পরিতাপের বিষয়, এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং এসব বাগানে নিয়োগ করা সব মালিকে সরিয়ে হাসপাতালের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভেষজ ও হোমিও বিভাগের পরিচালক বিধান চন্দ্র সেনগুপ্তের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

আয়ুর্বেদ ও ইউনানির বিদেশি ডিগ্রির স্বীকৃতিও বাংলাদেশে দেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে ক্ষোভ জানিয়ে মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে প্রচুরসংখ্যক শিক্ষার্থী ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি গ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকে নিজ উদ্যোগে আবার অনেকে ভারত সরকারের মেধাবৃত্তির আওতায় উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন। এঁদের কারোর ডিগ্রিই এই দেশে গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ 

সংলাপে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ভেষজ উদ্ভিদের সঠিক সংখ্যা এবং বিলুপ্তপ্রায় ভেষজ উদ্ভিদের সংখ্যা অজানা। অথচ সবাই জানেন আয়ুর্বেদ ও ইউনানি ওষুধ প্রস্তুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিমাণে ভেষজ এবং অল্প পরিমাণ প্রাণিজ ও খনিজ পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ভেষজ উদ্ভিদের বিপুল ঘাটতির মুখে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ভেষজ উদ্ভিদ আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। অথচ এসব উদ্ভিদের অনেকগুলো সহজেই এ দেশে উৎপাদন করা যায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অবিলম্বে একটি মেডিসিনাল প্ল্যান্ট বোর্ড স্থাপন করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে এই সংলাপ থেকে। 

জাতীয় সংলাপের মূল প্রবন্ধে ইউনানি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ও শিক্ষামান উন্নয়নে ১৮টি সুপারিশ করা হয়। সংলাপে সর্বসম্মতিক্রমে এসব সুপারিশ গৃহীত হয়। 

এ সময় প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এখনো মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ এলোপ্যাথি চিকিৎসা করে। বাকিরা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির সেবা নেয়। তাই আমাদের দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতির বিকাশে চাপ তৈরি করতে হবে।’ 

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক লিয়াকত আলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ, শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক ড. আনিসুজ্জামানসহ আরও অনেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত