কসাই জিহাদকে নিয়ে এমপি আনোয়ারুলের মরদেহের খোঁজে কলকাতা পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ মে ২০২৪, ০০: ১১
Thumbnail image

ঝিনাইদহ–৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পর তাঁর লাশ টুকরো করতে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল কসাই জিহাদকে। জিহাদই আনোয়ারুলের শরীর থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করেন। এরপর চাপাতি দিয়ে টুকরো টুকরো করেন। আজ শুক্রবার আদালত তাঁকে ১২ দিনের রিমান্ড দিয়েছে। জিহাদকে নিয়ে আনোয়ারুলের মরদেহ উদ্ধারে নেমেছে কলকাতা পুলিশ। 

জিহাদ বাংলাদেশি নাগরিক হলেও দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে। সেখানে একটি গোশতের দোকানে কাজ করত। আনোয়ারুলকে হত্যার দুই মাস আগে তাঁকে কলকাতায় আনা হয়। সকল খরচ বহন করে পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীন।

গতকাল বুধবার কলকাতার পুলিশ জিহাদকে গ্রেপ্তার করে। কলকাতার সিআইডি ইতিমধ্যে জিহাদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) জানিয়েছে। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগকে জিহাদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছে কলকাতার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। সেসব তথ্য ঢাকায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচাই বাছাই করছে ডিবি। 

ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, লাশ টুকরো টুকরো করা কোনো সাধারণ খুনির পক্ষে সম্ভব না। তাই জিহাদকে মুম্বাই থেকে আগেই আনা হয়েছে। লাশ কীভাবে টুকরো টুকরো করা হবে, কোথায় কীভাবে ফেলা হবে, তা সবকিছু আগেই মহড়া দিয়েছে খুনিরা। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী করেছে তাঁরা। যে যেই কাজে দক্ষ তাঁকে সেই কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কসাই জিহাদকে দেহ বিকৃত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাতে ঠান্ডা মাথায় সব করা যায়। মাথা খণ্ড করতে না পাড়ায়, মুখমণ্ডলের চামড়া তুলে ফেলে। এরপর টুকরো টুকরো মরদেহ ময়লার পলিথিনে ভরে ট্রলিব্যাগে ভরা হয়। 

ডিবি জানায়, কসাই জিহাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়ায়। তাঁর বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। খুলনায় মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। খুলনায় অপরাধ করে তিন বছর আগে সে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে। কিছুদিন কলকাতা থাকার পর মুম্বাইতে গিয়ে গোশতের দোকানে কাজ নেয়। বিভিন্ন বস্তিতে থাকত। তবে কসাইয়ের কাজও নিয়মিত করত না। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশি অপরাধীদের যোগাযোগ ছিল। 

গ্রেপ্তার জিহাদের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, তথ্য নষ্ট করা, ভুল তথ্য দেওয়া, খুন এবং অপরাধের চক্রান্ত করার অভিযোগ এনেছে কলকাতার সিআইডি। বারাসাত আদালত তাঁকে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়ার পর জিহাদকে নিয়ে মরদেহ উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে কলকাতার পুলিশ। 

জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড দিয়েছে বারাসাতের আদালত। ফাইল ছবি পশ্চিম বঙ্গের সিআইডি জিহাদকে নিয়ে লাশ খুঁজতে একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। কলকাতার ভাঙ্গরের কৃষ্ণ মাটি এলাকার বাগজোলা খালের পাড় থেকে দুর্গন্ধযুক্ত একটি পচা ব্যাগ উদ্ধার করে সিআইডি। তবে ব্যাগে লাশের কোনো অঙ্গ পাওয়া গেছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত না। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। 
 
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের বিষয়ে দ্রুত খবর পাওয়া যাবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এখনো কলকাতার পুলিশ কাজ করছে।’ 

এদিকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীনের কলকাতায় আরও একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে দেশটির পুলিশ। কলকাতার চায়না পার্কে তার আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যেটি ২০১৮ সালে ভাড়া নিয়েছিল সে। 

অপরদিকে আজীম হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়কারী পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াসহ ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে ৮ দিনের পুলিশ রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সিনিয়র এএসপি মাহফুজুর রহমান তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

গত বুধবার তাঁদের আটক করা হলেও বৃহস্পতিবার তাঁদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অপর দুই আসামি হলেন—শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়া। 

আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় গত বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর বাবাকে গুম করার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নেওয়া হয়েছে। 

পুলিশে রিমান্ড আবেদনে দাবি করেছে, আনোয়ারুল আজীম আনারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীনের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনসহ কিছু বিষয় নিয়ে আজীমের ওপর শাহিনের ক্ষোভ ছিল। যা আজীম জানতেন না। এছাড়াও গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে আজীমের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব ছিল। তাই তারা পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম আজীমকে দেশের বাইরে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন, যেন কেউ বুঝতে না পারে। ১০ মে দেশে ফেরেন শাহীন। এ সময় তিনি আমানুল্লাহকে দায়িত্ব দিয়ে আসেন কোনোভাবেই যেন কাজটা মিস না হয় এবং কোনো প্রমাণ যেন না থাকে। 

গত ৯ মে রাতে এমপি আজীম মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। গত ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। ১৩ মে তিনি কলকাতার নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। এখনো তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত