বেহাল কমিউনিটি সেন্টার

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ৩৩

চারতলা ভবনের তিনতলাজুড়ে কমিউনিটি সেন্টার। যেটির অধিকাংশ টয়লেট ও বেসিন ভাঙাচোরা। ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেটিও বেশির ভাগ সময়ে বহিরাগতদের দখলে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের অতিথিরা বাধ্য হয়ে রাস্তার ওপরই গাড়ি রাখেন। এদিকে ভবনের সিঁড়িতে দোকান বসিয়েছেন আব্দুর রহমান সরদার নামের একজন। কমিউনিটি সেন্টারের একটি অংশে বানানো হয়েছে মহাখালী স্পোর্টিং ক্লাবের রুম। নানা অব্যবস্থাপনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারের এই অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কমিউনিটিসেন্টারটিরঅবকাঠামোগত অবস্থা নিয়ে ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাছির বলেন, ‘সেন্টারটির আধুনিকায়নের বিষয়ে আমি মেয়রকে অন্তত ২০ বার বলেছি। আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিংয়ে বহিরাগতরা গাড়ি রাখে।’

ডিএনসিসির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্স ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু গত চার বছরেও এটি ব্যবহার করতে পারেনি নাগরিকেরা। ভাড়া নির্ধারণ জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। যে কারণে স্থানীয় কাউন্সিলর ভবনটিকে তাঁর অফিস ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। সম্প্রতি কমিউনিটি সেন্টারটির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা খোকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণ করার পর কেবল একটা প্রোগ্রাম হয়েছে। প্রচার কম থাকায় মানুষ এখনো জানছে না।’

ডিএনসিসির অধীনে থাকা অধিকাংশ কমিউনিটি সেন্টারেরই একই অবস্থা। ডিএনসিসির ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারের ৪টি সেন্টার সরকারি সংস্থার কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে বর্তমানে ১০টি কমিউনিটি সেন্টার নাগরিকদের ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার, মিরপুর ২ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার, মিরপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ড মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার, শহীদ কমিশনার ছায়েদুর রহমান নিউটন কমিউনিটি সেন্টার, মহাখালী কমিউনিটি সেন্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্স, মিরপুর ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার, আব্দুল হালিম কমিউনিটি সেন্টার (তেজতুরীপাড়া), সূচনা কমিউনিটি সেন্টার, রায়েরবাজার কমিউনিটি সেন্টার। আর সরকারি সংস্থার ব্যবহৃত কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে তিনটিতে র‍্যাবের অস্থায়ী কার্যালয়। সেগুলো হচ্ছে খিলগাঁও তালতলা কমিউনিটি সেন্টার, মগবাজার কমিউনিটি সেন্টার, মোহাম্মদপুর কমিউনিটি সেন্টার। বনানী কমিউনিটি সেন্টার একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে, সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বুকিং বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিউনিটি সেন্টারগুলোর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ক্লাবঘর ও দোকান। এসব সেন্টারের বেশির ভাগের নিয়ন্ত্রণই কাউন্সিলরদের হাতে। অনুষ্ঠানের ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশ যায় কাউন্সিলরদের পকেটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা জানান, ‘উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার ছাড়া বাকি ৯টি কমিউনিটি সেন্টারে জটিলতা রয়েছে। কিছু মানুষের স্বার্থের কারণে সাধারণ মানুষ পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নাগরিকেরা কোথায় কীভাবে বুকিং দেবে, তা নিয়েও জটিলতা রয়েছে।’

এদিকে পর্যাপ্ত সেবা না দিতে পারলেও কমিউনিটি সেন্টার থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কমিউনিটি সেন্টার থেকে ডিএনসিসির আয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮০ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫১ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৪ টাকা।

কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সমস্যা নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টারের মূল কাজ পাড়া-মহল্লার মানুষদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখা। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা তাতে মনে হয়, বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের ধারণাই নেই। কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে।’

ডিএনসিসির সিইও সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার ঠিকঠাক করে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর সুফল পাচ্ছে জনগণ। দু-একটি কমিউনিটি সেন্টারে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার অফিস রয়েছে, বিকল্প জায়গা পেলে সেগুলোও সরিয়ে নেওয়া হবে। আধুনিকায়নে আমরা কাজ করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত