মিথ্যা মামলায় জড়ালে শুরুতেই যা করতে হবে

সুলতান মাহমুদ
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ২৩: ৩৫
আপডেট : ০৮ মে ২০২৩, ১৭: ২০

বরগুনার আমতলীতে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলা করে উল্টো জেল খেটেছেন আব্দুর রশিদ (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। ২০২০ সালে আব্দুর রশিদ একই গ্রামের ক্বারি আব্দুর রাজ্জাক, সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হককে আসামি করে আমতলীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। তদন্তের সময় মামলার বাদী ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। গত ২৭ নভেম্বর বিচারক ওই মামলা খারিজ করে বাদী আব্দুর রশিদকে আদালতে শোকজ করেন। পরে গত ৫ ডিসেম্বর তাঁকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক। 

মিথ্যা মামলা
শত্রুতাবশত কেউ থানা বা আদালতে মিথ্যা মামলা করে থাকতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আসামিকে অবশ্যই আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বসে থাকার সুযোগ নেই। বসে থাকলেই বিপদ বাড়বে।

মিথ্যা মামলা হলে শুরুতেই যা করতে হবে
প্রথমেই জানতে হবে মামলাটি থানায় হয়েছে নাকি আদালতে। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আরজি বা এজাহারের কপি তুলতে হবে। মামলাটির ধারা ও অভিযোগ জামিনযোগ্য কি না তা জানতে হবে। মামলা জামিনযোগ্য হলে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারবেন আসামি। অভিযোগ জামিন-অযোগ্য হলে হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আসামি আগাম জামিন চাইতে পারেন। আদালতে বিচার চলাকালে নির্দিষ্ট তারিখে অবশ্যই হাজিরা দিতে হবে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আসামির জামিন বাতিল করে দিতে পারেন আদালত।

মিথ্যা মামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
কোনো অন্যায় বা বেআইনি কর্মকাণ্ডের দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁর আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে। এ কারণে মামলা–মোকদ্দমার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক সময় কাউকে হয়রানি বা সামাজিকভাবে হেয় করতেও মামলা করা হয়। হয়রানির জন্য মামলার স্বীকার হলে করণীয়:

# মিথ্যা অভিযোগকারী কিংবা মামলার বাদীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে হবে। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের যদি মনে হয়, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন, তুচ্ছ বা হয়রানিমূলক, তাহলে এই ধরনের মামলা মিথ্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। মামলা মিথ্যা বা ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগকারী বা মামলার বাদীকে দণ্ড দিতে পারেন। এ ছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বাদী হয়ে পৃথক মামলা করতে পারেন।

মামলা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। এমনকি আদালত মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে দণ্ডমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারেন। 

দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলার সাজা হলো দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম ও বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় ধরনের দণ্ড। যদি মিথ্যা মামলাটি কোনো মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা সাত বছর বা তার বেশি মেয়াদের কোনো দণ্ডনীয় অপরাধ সম্পর্কিত হয়, তাহলে মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বা বাদী সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়দের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এর সঙ্গে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

# নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ১৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার আইনানুগ কোনো কারণ নেই জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে মামলা বা অভিযোগকারী ব্যক্তি এবং যাকে দিয়ে অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পাশাপাশি তাঁকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যেতে পারে। 

# যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ৬ ধারা মতে, এই আইনের কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার আইনানুগ কোনো কারণ নেই জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে মামলা বা অভিযোগকারী ব্যক্তি এবং যাকে দিয়ে অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাঁকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। 

# পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ সালের ১৩ (১) অনুযায়ী, এই আইনের কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার আইনানুগ কোনো কারণ নেই জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে মামলা বা অভিযোগকারী ব্যক্তি এবং যাকে দিয়ে অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পাশাপাশি তাঁকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যেতে পারে। 

১৩ (২) ধারা মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক প্রমাণিত হলে, মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। এর জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 

# শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৩ ধারা মতে, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো মামলার কার্যক্রমে আদালতে কোনো শিশুর সম্পর্কে যদি এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেন যা মিথ্যা, হয়রানিমূলক বা তুচ্ছ প্রকৃতির তাহলে আদালত প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে কারণ লিপিবদ্ধ করে, যার বিপক্ষে ওই তথ্য দেওয়া হয়েছে তার অনুকূলে ২৫ হাজার টাকার বেশি যেকোনো পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদানকারীর প্রতি নির্দেশ দিতে পারবেন। অনাদায়ে সর্বোচ্চ ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডও দেওয়া যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত