Ajker Patrika

বিশ্বব্যাংকের নামে টাকা তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ১৯
বিশ্বব্যাংকের নামে টাকা তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মেঘনা নদী খনন করা হবে। নদী থেকে সেই বালু তুলে দেওয়া হবে এলাকাবাসীকে। এই আশ্বাসে এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপুর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরপর আলোকবালীর আটজন ভুক্তভোগী আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, তাঁরা চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনকে বালুর জন্য টাকা দিয়েছেন। যদিও চেয়ারম্যান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে লঞ্চ ও নৌযান চলাচলের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেঘনা নদীতে নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদী জেলা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার একটি খনন প্রকল্প চালু হতে পারে। আলোকবালী ইউনিয়নে এমন প্রকল্প হওয়ার সুযোগ নেই। আর প্রকল্প হলে কাজটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এ খননকাজের তদারক করবে। এ প্রকল্পের জন্য কোনো চিঠি এখনো তারা পায়নি। তবে খননকাজ চালু হলেও এ কাজের বালু বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। যেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হবে, তার পাশেই বালু ভরাট করা হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ নরসিংদীর কর্মকর্তা তারেক হোসেন বলেন, ‘নদী খননের কাজ আমাদের নয়। যেহেতু আলোকবালী হয়ে অভ্যন্তরীণ কোনো লঞ্চ চলাচল করে না, সেখানে নদী খননেরও প্রয়োজন নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন করতে পারে।’

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড নরসিংদীর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘নদী খননের ছয়টি প্রকল্প ছিল, যা গত বছর শেষ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আমাদের কোনো খনন প্রকল্প নেই। সেনাবাহিনীতে খোঁজ নিয়েছিলাম, তাদেরও বালু উত্তোলনের কোনো প্রকল্প এখন নেই।’

গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, আলোকবালী ইউনিয়নের সাতপাড়া ও বীরগাঁও গ্রামের পূর্ব পাশে ড্রেজার স্থাপন করে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ড্রেজারের পাইপের সংযোগ স্থাপন করে এলাকায় প্রবেশ করানো হয়েছে। ভেকু দিয়ে কৃষিজমি কেটে বালু রাখার জন্য জায়গাও প্রস্তুত করা হয়েছে।

সেখানে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান কাউছার বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের কোনো এক জায়গায় বিশ্বব্যাংকের নদী খননের প্রকল্প শেষ হয়েছে। এই ড্রেজারটি ঢাকায় নিতে গেলে খরচ বেড়ে যাবে। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার ড্রেজিং প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা, তাই ড্রেজারটি এখানে রাখা হয়েছে। তবে আলোকবালী ইউনিয়ন থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন এখন নেই। 

এদিকে ৩ ডিসেম্বর আলোকবালী ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মিয়া এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বদিউল আলমের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়, দুই মাস ধরে চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার ও তাঁর লোকজন তাঁর জমি ও বসতভিটার কাছ থেকে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করছেন। মাটি ভরাটের জন্য তাঁর কাছেও টাকা চাওয়া হয়। প্রকল্পের নামে বালু তোলা হলে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর প্রতিবেশীর কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপু বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। একটি কোম্পানি বালু উত্তোলন করার চেষ্টা করছে। তারা সরকারের অনুমোদন পেলে বালু উত্তোলনে আমি সহায়তা করব মাত্র। এখন আলোকবালীতে কারা ড্রেজার বসিয়েছেন, আমি তা জানি না। আমার বিষয়ে কারা জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন, তা-ও আমি অবহিত নই। যদি অভিযোগ দিয়ে থাকে তাহলে খোঁজখবর নিয়ে অভিযোগের জবাব দেব।’

এ নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়নের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে আটজন ভুক্তভোগী স্বীকার করেছেন, তাঁরা চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের হাতে টাকা দিয়েছেন। প্রতিজন সর্বনিম্ন ১ লাখ, সর্বোচ্চ ২ লাখ পর্যন্ত টাকা দিয়েছেন। এই ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন বীরগাঁও গ্রামের রেজন মিয়া, নুরুজ্জামান ও হানিফ মিয়া; সাতপাড়া গ্রামের শিশির মিয়া; বাখরনগর গ্রামের শাহীন মিয়া ও রাকিব মিয়া।

ভুক্তভোগী শাহীন মিয়া বলেন, ‘গত মাসে আমি চেয়ারম্যানকে এক লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন শুনতেছি চেয়ারম্যান বালু উত্তোলনের এমন কোনো টেন্ডার পাননি। এখন টাকা চাইলেও ফেরত দিচ্ছেন না।’

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বদিউল আলম বলেন, ‘বালু উত্তোলন করার বিষয়টি আমরা শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত