‘অফিস সহকারী পদে ৫ লাখ দিতে রাজি অনেকে’, প্রধান শিক্ষকের অডিও ফাঁস

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ২৩: ২১
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৩, ২৩: ৪৫

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে কয়েকটি পদে নিয়োগের জন্য টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে দাবি করার একটি অডিও রেকর্ড আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

অডিও রেকর্ডে উপজেলার চরফলকন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাকের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দোহাই দিয়ে অফিস সহকারী, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ৪ লাখ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী-নিরাপত্তা প্রহরী পদে ২ লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করতে শোনা গেছে।

বিদ্যালয় ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার লক্ষ্মীপুর সামাদ উচ্চবিদ্যালয়ে উল্লিখিত পদগুলোর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেননি। এতে নিরাপত্তা প্রহরী পদে কোরাম-সংকটের কারণে ওই পদে পরীক্ষা নিতে পারেননি তাঁরা। বাকি ৩ পদে পরীক্ষা হলেও ফলাফল গোপন রেখেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ১৭ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ডে প্রধান শিক্ষক আবু জাকের নিরাপত্তাকর্মী পদপ্রার্থীর কাছে বলতে শোনা যায়, ‘বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমাকে বলেছে, ২ লাখ নিতে হবে। এর বাইরে আমি কোনো কথা বলতে রাজি নই। অফিস সহকারী, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ৫ লাখ পর্যন্ত দিতে রাজি আছে অনেকে। কিন্তু আমি সভাপতির কথার বাইরে তো যেতে পারি না।’

অডিওতে আরও শোনা যায়, ‘আমার চাকরি অন্য জায়গায় ৮০ ভাগ হয়ে আছে। আমি আপনাদের নিয়োগগুলো দিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়। আমি চলে গেলে আপনাদের নিয়োগ হবে না।’

এদিকে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বিল্লাহ শাহেদ মাহমুদ গিয়াস বলেন, ‘এ নিয়োগ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি—এ দুজনের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। তারা মনগড়া রেজল্যুশন তৈরি করে আমাদের স্বাক্ষর দিতে বলেছে। আমরা সদস্যরা কেউ স্বাক্ষর দিইনি।’ নিয়োগসংক্রান্ত কোনো রেজল্যুশনে কোনো স্বাক্ষর দেবেন না বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাকের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর অভিভাবকদের টাকার কথা বলছি, এটা আমার মনে হয় না।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাঘা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষককে টাকাপয়সা লেনদেনের বিষয়ে কিছু বলিনি। প্রধান শিক্ষক যদি কিছু বলে থাকে, এটা তার একক সিদ্ধান্ত।’ এ ছাড়া তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে প্রতিনিধিকে অনুরোধ করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার শাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক কোনো অনিয়ম করছে কি না, আমার জানা নেই। এখানে আমরা স্বচ্ছ পরীক্ষা নিয়েছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এ নিয়োগের সাথে সম্পৃক্ত নই। তারপরও কোনো দুর্নীতির অভিযোগ এলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ নভেম্বর দৈনিক সমকাল পত্রিকায় অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে উল্লেখযোগ্য কোনো আবেদন না পড়ায় ওই দুই পদে কোনো পরীক্ষা হয়নি। এ ছাড়া মোটা অঙ্কের লেনদেনের বিষয়টি জানতে পেরে আবেদন করেও নিরাপত্তা প্রহরী পদে অনেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ফলে কোরাম-সংকটের কারণে ওই পদে পরীক্ষা নিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব

ববির ট্রেজারার সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা

বিগত সরকারে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেই যাবে শতকোটি টাকা

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত