মাকে গুলি করে হত্যা, ভাইয়ের বিরুদ্ধে বোনের মামলা

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৬: ৫৯

বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও টাকার জন্য পটিয়ায় ছেলের গুলিতে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলে মাঈনুদ্দীন মো. মাঈনুকে (২৯) আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্ত মাঈনুলের বড় বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। আজ বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পটিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার।

ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, জাপা নেতা ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র সামশুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে খুনের ঘটনায় ছেলে মাইনুলকে আসামি একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই মাঈনুল পলাতক রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টিম কাজ করছে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পটিয়ায় পৌর সদরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবজার পাড়ার নিজ বাড়িতে সন্তানের গুলিতে নিহত হন পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতার (৫৫)।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ বলছে, গত ১৩ জুলাই সামশুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমাকৃত টাকা নিয়ে তাঁদের মা–ছেলে ও একমাত্র বোনের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়। মাঈনুল দুই মাস আগে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। এ নিয়েও মা ও বোনের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল মাঈনুলের।

মামলার এজাহারের বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্ত মাঈনুলের বড় বোন শায়লা শারমিন নিপা বলেন, ‘আমার প্রয়াত বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা ২ ভাই ১ বোন ও আমার মাকে রেখে যান। আমি ও আমার ছোট ভাই মাশফীকুল আলম মাশফী অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করি। গত রোজার ঈদে আমরা দেশে আসি। ২৭ জুলাই আমরা অস্ট্রেলিয়ার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পারিবারিক কারণে ফ্লাইট বাতিল করি। তবে আমার ছোট ভাই মাশফীর স্কুল খোলায় সে গত ৪ আগস্ট একা অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। কিন্তু আমার অপর ভাই মাঈনুদ্দিন মো. মাঈনু দীর্ঘ দিন ধরে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে আসছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মাঈনু আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমার মৃত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমাকৃত ১৬ লাখ টাকা এককভাবে ভোগদখল করতে তাঁর নব বিবাহিতা স্ত্রী আসিফা সুলতানারও লোলুপ দৃষ্টি পড়ে।’

নিপা আরও বলেন, ‘আমার বাবা ব্র্যাক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে ১০ লাখ ও ৩ লাখ টাকা জমা রেখেছিল। তার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের নমিনি আমি আর জনতা ব্যাংকের নমিনি আমার মা। মঙ্গলবার দুপুর বারোটার দিকে আমি ও আমার মা ব্যাংকগুলোতে বাবার জমাকৃত টাকা উত্তোলনের জন্য যাই। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় আমরা বাড়িতে চলে আসি। আমরা দুপুর ১.২০ মিনিটের সময় বাড়িতে পৌঁছালে আমার ভাই মাঈনু তাকে ছাড়া আমরা কেন ব্যাংকে গেলাম এ কারণে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তার কোমরে থাকা পিস্তল বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে। ভাগ্যক্রমে প্রথম গুলিটি ফায়ার না হওয়ায় আমি বেঁচে যাই। এ সময় আম্মাকে সামনে পাওয়ায় পরের গুলি তাঁকে করে। আম্মার ডান চোখের নিচে গুলি লাগলে সাথে সাথে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আমি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার সুযোগে মাঈনু পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় আম্মাকে উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, আমরা এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তাতে প্রাথমিকভাবে এটি পারিবারিক দ্বন্দ্বই মনে হচ্ছে। সামশুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর থেকে সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সেটার রেশ ধরেই মা-ছেলের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে মাকে গুলি করে হত্যা করেন মাঈনুল। গুলি করার পরপরই মাঈনুল পালিয়ে যান। তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। মাইনুলকে গ্রেপ্তার করার পর জানা যাবে হত্যার রহস্য। সেই সঙ্গে কার অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেটিও জানা যাবে।

এদিকে মঙ্গলবার নিহত জেসমিন আকতারের ঘরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে প্রথমে ১০ রাউন্ড কার্তুজ ও ব্যবহৃত গুলির খোসা এবং একটি অব্যবহৃত গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি কার্তুজ বৈধ। একই দিন রাতে পটিয়া পৌর সদরের বাস স্টেশন এলাকায় প্রয়াত জাতীয় পার্টি নেতা সামশুল আলম মাস্টার ও জাতীয় পার্টির ও মাঈনুলের অফিসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১টি ৭.৫৬ মডেলের আধুনিক পিস্তল উদ্ধার করছে। এ ঘটনায় পটিয়া থানার উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম হাজারি বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মাঈনুলের বিরুদ্ধে পৃথক আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন।

অপরদিকে নিহত জেসমিন আকতারের মরদেহ আজ (বুধবার) দুপুরে চমেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পটিয়া পৌর সদরের সবজার পাড়া বাড়িতে দুপুর ৩টায় নিয়ে গেলে স্বজনের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আসরের নামাজের পর সবজার পাড়া ঈদগাহে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন সামশুল আলম মাস্টারের ভাগনে জাহাঙ্গীর আলম। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত