Ajker Patrika

নিজের বাড়ি ‘বাবার কাছে বিক্রি’ করেন ইসির জয়নাল

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫৩
নিজের বাড়ি ‘বাবার কাছে বিক্রি’ করেন ইসির জয়নাল

৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার আসামি ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ‘অবৈধ অর্থে গড়া’ পাঁচতলা বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন। সম্পদ বিক্রি করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কাউন্টার টেররিজমের হাতে মঙ্গলবার রাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। 

২০২১ সালে জেল থেকে বের হওয়ার পর মাঝেমধ্যে অফিসেও যেতেন সাময়িক চাকরিচ্যুত জয়নাল। প্রতি মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতনও পেতেন। যোগাযোগ ছিল নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, কাউন্সিলর ও পাসপোর্ট অফিসের চক্রের সঙ্গে, যাঁদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে করতেন ভোটার, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন।

অবৈধ সুযোগ নিয়ে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জয়নালকে তাঁর সম্পদ বিক্রির সুযোগ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে এত অবৈধ সম্পদ পেয়েও সেসব কেন দুদক জব্দ করেনি, সেই প্রশ্ন সামনে আসছে এখন। এমনকি জয়নালের তিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বারবার বদলি হওয়া নিয়ে দুদকের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী।

 জয়নাল। ফাইল ছবিআখতার কবির বলেন, ‘১৬৪ ধারায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি জয়নাল স্বীকার করেছেন বলে মিডিয়ায় এসেছে। তাঁর তো জামিন হওয়ারও কথা না। দুদকের মামলায় অবৈধ সম্পদের টাকায় পাঁচতলা বাড়ি করার প্রমাণও মিলেছে। ব্যাংকের অবৈধ টাকা ফ্রিজ না করে বাড়িসহ অবৈধ আয়ে অর্জিত স্থাবর সম্পদ দুদক হেফাজতে না নিয়ে মারাত্মক গাফিলতি করেছে। এই মামলায় তৎপর না হওয়া মানে দুদকের কর্মকর্তারাই দুর্নীতিতে জড়িত। দুদকের এখনই উচিত জয়নাল যাতে বিদেশ যেতে না পারেন, সে জন্য পাসপোর্ট জব্দ করা। যেহেতু মামলা চলমান, তাই আদালত থেকে সম্পদ হেফাজতের আদেশ দ্রুত নিয়ে দুদকের উচিত তাঁর সব সম্পদ ক্রোক করা।’

২০১৯ সালে রোহিঙ্গা নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটিতে তাঁকে এক নম্বর আসামি করা হয়। মামলা দুটি হলো—দুদক চট্টগ্রাম ২, মামলা নম্বর ১, ১ (১২) ১৯। এই মামলার বাদী তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী, যাকে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে বদলি করা হয়।

এরপর মামলার তদন্তভার পান চট্টগ্রাম দুদকের আরেক কর্মকর্তা রতন কুমার দাশ। তাঁকেও বদলি করা হয়। আরেকটি মামলা হলো ৪৭/ ১৯। এটির বাদী ছিলেন দুদক থেকে রাঘববোয়ালের রোষে চাকরি হারানো আলোচিত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। এখন এই মামলার তদন্ত করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম। 

বাবার কাছে নিজের বাড়ি বিক্রি করেন জয়নালদীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার পৌর এলাকার আশকরিয়াপাড়ায় তার পাঁচতলা ভবনের সন্ধান পায়, যেটি অবৈধ টাকায় তৈরি বলে দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় চট্টগ্রামে এমএলএসএস পদে যোগদান করেন জয়নাল। তখন মাসিক বেতন পেতেন ৫ হাজার ৯৬০ টাকা। ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি বেতন পেতেন ১৩ হাজার ৯০০ টাকা। চাকরিতে যোগদান থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের মামলার আগ পর্যন্ত বেতন পান ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৯০০ টাকা। ওই বেতনই জয়নালের একমাত্র আয়ের উৎস। তাঁর নামে কোনো আয়কর নথিও নেই। বেতনের ৮০ ভাগ পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বাদ দিলে খরচ হয় ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫২০ টাকা। তাঁর কাছে থাকার কথা ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮০ টাকা।

কিন্তু দুদকের মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীর অনুসন্ধানে জয়নালের লাখ লাখ টাকার হদিস মেলে। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বাঁশখালীর গ্রামের বাড়িতে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় পাঁচ শতক নাল জমি কেনেন। ওই জমিতে পাঁচতলার ভিত্তি দিয়ে চারতলা তোলেন। এতে খরচ হয় ৬৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি জায়গা কেনেন। এভাবে জয়নালের স্থাবর-অস্থাবর ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮২২ টাকার সম্পদের হদিস পায় দুদক। এর মধ্যে বেতনের সাড়ে ৪ লাখ টাকা বাদ দিলে ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায় জয়নালের। 

কয়েক কোটি টাকার বাড়িটি তড়িঘড়ি করে বিক্রি
এর আগে জয়নালকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণাধীন ছিল। ওই সময় তিনতলা পর্যন্ত কাঠ-বাঁশ দিয়ে ঢালাইয়ের জন্য রেখেছিলেন।

আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে চারতলা পর্যন্ত। তোলা হয়নি রুমের দেয়াল। ভবনের অনেক জায়গায় রং করেছেন, ফিনিশিং করেছেন। এমনকি নিচতলায় তিন পরিবার ভাড়াও থাকে। ২০২১ সালে জয়নাল জেল থেকে বের হয়ে বাড়িটি রেডি করে বিক্রি করেছেন বলে দাবি তাঁর। 

 ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বাঁশখালীর পৌর সদরের বাসিন্দা আব্দুল হামিদের ছেলে আব্দুল মোনাফের কাছে কোটি টাকার বাড়িটি তড়িঘড়ি করে ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন বলে স্বীকার করেন জয়নাল। যার কাছে বিক্রি করেছেন, তিনি তাঁর বাবা। 

জমির অংশটিও আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেন বলে জানান জয়নাল। বাড়ি ও জমিটি এখন তাঁর নামে নেই। যাঁদের কাছে বিক্রি করেছেন, তাঁদের নামে নামজারিও হয়ে গেছে। গ্রেপ্তারের আগে এমন তথ্য জানিয়েছেন তিনি। 

ওই সময়ে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার পর বাড়িটি সরকারি হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল বলে তদন্ত করা হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে আদালত জয়নালের সম্পদ সরকারের হেফাজতে নেওয়ার পর আদেশ দিয়েছেন কি না, তা জানাতে পারেননি দুদকের আইনজীবী মুজিবুল হক চৌধুরী। 

চট্টগ্রাম আদালতে চট্টগ্রাম-১-এর দুদকের সহকারী পরিদর্শক এম এ লতিফ (জিআরও) অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জয়নালের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা ৪৭/ ১৯ এখনো তদন্তাধীন পর্যায়ে। এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়নি। তবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দুদকের মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। একইভাবে রতন কুমার দাশও তদন্ত করে ওই প্রতিবেদন দিয়ে মামলার চার্জশিট দিয়েছেন। তবে সেখানে জয়নালের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে, যেটি এখন নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে। 

এদিকে দুদকের শরীফের করা মানি লন্ডারিং মামলায় জয়নালকে এক নম্বর আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, জয়নাল আবেদীন রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন। এখান থেকে অর্জিত অবৈধ টাকা ঢাকায় এই মামলায় আরেক আসামি সত্য সুন্দর দের কাছে পাঠাতেন। সত্য সুন্দর দে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আল-আরাফাহ ব্যাংকে ১ লাখ ৯৭ হাজার, ইসলামী ব্যাংকে ১ লাখ ৫০ হাজার, কুরিয়ারে ৩ লাখ ৫০ হাজারসহ মোট ৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা অবৈধ উপায়ে গ্রহণ করেন। আরেক আসামি মো. জাফর ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখায় জয়নালের হিসাবটিতে ৬০ হাজার টাকা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক শাখায় ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা দেন। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক শাখায় ৬ লাখ টাকাসহ মোট ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে কমিশন পান। এ ছাড়া আসামি ঋষিকেশ দাশ আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক শাখায় মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা, ইসলামী ব্যাংকে ৭০ হাজার টাকা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৩ লাখসহ মোট ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা আদান-প্রদানে সহায়তা করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। 

দুদক জয়নালের সব মিলিয়ে ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পায়জেল থেকে বের হয়েও আগের পেশায় জয়নাল
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং মামলায় ২০১৯ সালে জেলে যান জয়নাল। পরে সাময়িক চাকরিচ্যুতও হন, যেটি গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত বহাল রাখেন। যাওয়া-আসা ছিল চট্টগ্রাম ও ঢাকার নির্বাচন কমিশন অফিসে। ১০ আত্মীয় ছাড়াও তাঁর হয়ে কাজ করেন অন্তত ৫০ জন অপারেটর, যাদের মাধ্যমে এখনো অবৈধভাবে এনআইডি ও পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চাকরিচ্যুত হলেও তিনি কর্মস্থলে যান বলে আজকের পত্রিকাকে নিজেই স্বীকার করেন জয়নাল। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামে জয়নালের নেতৃত্বে এখনো একটি প্রতারক চক্র সক্রিয়। এখন প্রায় সময় অফিস করেন ডবলমুরিং থানা অফিসের কার্যালয়ে। যাতায়াত আছে নগরের লাভ লেইনের সামনে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসেও। কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে ডেটা এন্ট্রি অফিসার পদে রয়েছেন তাঁর খালাতো ভাই মোজাফ্ফের আহমেদ। তাঁর বোনের জামাই নুর আহমেদ চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি হাটহাজারীতে বদলি হন। এই দুজন যে আত্মীয়, তা স্বীকার করেন জয়নাল। ২০১৯ সালে দুদকের মামলায় তাঁর আত্মীয় খালাতো ভাই মোজাফ্ফের আহমেদ, তাঁর বোনের জামাই নুর আহমেদকে দিয়ে জয়নাল অবৈধ কাজ করাতেন বলে দুদক মামলায় উল্লেখ করেছে। 

চলতি বছরের জানুয়ারিতে কম সময়ে এনআইডি পাইয়ে দেবেন বলে এক ভুক্তভোগী থেকে ৬ হাজার টাকা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই ভুক্তভোগী কাজ করেন আবার আরেকজনের মাধ্যমে। যাঁর এনআইডির কাজ করেন, তাঁর নাম নোমান ইবনে জামাল। 

এ ছাড়া কাগজপত্র ছাড়া জন্মনিবন্ধন পেতে ৫০ হাজার টাকা নিতেন তিনি। শুধু নাম সংশোধনীর জন্য দুটি জন্মনিবন্ধনের কাজ করে দিতে ৪৫ হাজার টাকা চান। কিন্তু ডবলমুরিং হাজিপাড়া এলাকার দুজন বাসিন্দা বেশি টাকা চাওয়ায় আর দেননি। ঘটনাটি দুই মাস আগের। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। 

দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, জয়নালের চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ ও মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে ছয়জন কর্মচারী রয়েছেন, যাঁরা জয়নালের হয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট তৈরির কাজে সহযোগিতা করতেন। ভুয়া জন্মনিবন্ধন ও জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য রামপুরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসের দুজন কর্মচারী, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও কাউন্সিলর অফিস, কোতোয়ালির ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিস, বাঁশখালীর একজন মহিলা কাউন্সিলর, রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালীতে বেশ কয়েকজন তাঁর হয়ে কাজ করেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘সাময়িক চাকরিচ্যুত হলেও মাঝেমধ্যে আমি অফিসে যাই, কাজ করি। পাঁচতলা বাড়িটি ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। তবে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’ 

এদিকে অফিসে জয়নালের কাজ করার বিষয়টি আজকের পত্রিকার কাছে অস্বীকার করেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। 

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ডবলমুরিং নয়, জয়নাল আবেদীন বিভিন্নজনের কাজ নিয়ে লাভ লেইন এলাকার চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসেও যাতায়াত করেন। 

দুদকের চট্টগ্রাম-২ উপপরিচালক মো. আতিকুর আলমের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। দুদকের সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে করা মামলাটির চার্জশিট সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করার আইন রয়েছে। তিনটি মামলার মধ্যে মাত্র একটির চার্জশিট দিতে পেরেছে দুদক। 

চট্টগ্রাম দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তদন্ত শেষে চার্জশিটের জন্য মামলাটি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা চার্জশিট দেওয়ার জন্য এখনো অনুমোদন দেয়নি, তাই আদালতে জমা দিতে পারিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত