স্ত্রীকে হত্যার পর মরদেহে আগুন লাগিয়ে মসজিদে যান স্বামী

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২২, ১৬: ৪০

কুমিল্লার বরুড়ায় পারিবারিক বিরোধের জেরে স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে (২২) গলাটিপে হত্যা করে মরদেহে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় স্বামী রেজাউল করিম। নিজেকে আড়াল করতে এ কাজ করেছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করে র‍্যাব। ঘাতক রেজাউল করিম বরুড়া উপজেলার ডেউয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার র‍্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে বরুড়া উপজেলার ডেউয়াতলী গ্রামে গত ১১ মার্চ রাতে স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন স্বামী রেজাউল করিম। পরে নিজেকে আড়াল করতে ভোরে তাঁর স্ত্রীর মরদেহে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে চলে যান। কয়েক দিন পর আত্মগোপনে চলে যান রেজাউল করিম। 

পরবর্তীতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্‌ঘাটনে তদন্তে নামে র‍্যাব। পরে গতকাল সোমবার রাত ৯টায় কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়াসমিনের ভাই রাকিবের করা মামলা ও রেজাউলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উন্মোচন করা হয়। 

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি পরিবারের অমতে ইয়াসমিন আক্তারের (২২) সঙ্গে রেজাউল করিমের বিয়ে হয়। গত ১১ মার্চ স্বামীর বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ইয়াসমিন আক্তার মারা যান। ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহতের ভাই মো. রাকিব হোসেন ১২ মার্চ বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে কুমিল্লাসহ সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে র‍্যাবের গোয়েন্দা দল ঘটনার সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে নিহতের স্বামী রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে রেজাউলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের দেওয়া তথ্য অসামঞ্জস্য মনে হলে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। 

মৃতের পরিবার ও স্থানীয়দের বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাবের গোয়েন্দা দল গতকাল রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কুমিল্লার কোতোয়ালি থানাধীন ইপিজেড এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করে।

রেজাউল করিমের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, গত ১০ মার্চ রেজাউলের সঙ্গে ইয়াসমিন আক্তারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় রেজাউল তাঁকে মারধর করেন। পরে রাতে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে ইয়াসমিন বেগমের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরদিন ১১ মার্চ ভোর পাঁচটার দিকে ইয়াসমিন আক্তারের সারা শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন তিনি। এরপর ঘর থেকে বের হয়ে ফজরের নামাজ পড়তে চলে যান। নামাজ শেষে স্থানীয় লোকজনের আগুন লাগার বিষয়ে কোনো আওয়াজ না পাওয়ায় পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারতের উদ্দেশ্যে চলে যায় রেজাউল। 

এরই মধ্যে কবরস্থানে থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে আগুন লাগার বিষয়ে জানতে পারেন এবং অতি দ্রুত বাড়িতে যান তিনি। স্থানীয়রা আগুন নেভানোর সময় রেজাউলও তাঁদের সঙ্গে আগুন নেভানোর ভান করতে থাকেন। এ সময় বলতে থাকেন, ঘরের ভেতর আমার স্ত্রী ও বিদেশ যাওয়ার সকল কাগজপত্রসহ টাকা-পয়সা রয়েছে। বিষয়টি বলতে বলতে রেজাউল জ্ঞান হারানোর ভান ধরেন। তা দেখে স্থানীয়রা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে স্ত্রীর জানাজা শেষে হাসপাতাল থেকে আত্মগোপনে চলে যান রেজাউল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় দ্রুত দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত